সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কলকাতা, ৮, ফেব্রুয়ারি ২০২২। রুপম ইসলাম বাঙালি নতুন প্রজন্মের হার্ট থ্রব। একাধারে সংগীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, পত্রিকা সম্পাদক ও লেখক। আপাতত এই পর্যন্ত। ভবিষ্যতের গর্ভে হয়তো লুকিয়ে আছে রুপমের আরও কোনও প্রতিভা। এহেন রুপমের দুটি উপন্যাস প্রকাশ করেছে কলকাতার নামী প্রকাশন সংস্থা দীপ প্রকাশন। অনামিকা বলে ডাকতে পারি কি তোমায় শিরোনামে দুটি উপন্যাস থাকছে এবারের বইমেলায়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রকাশনা সংস্থার তরফে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে একথাই জানালেন প্রকাশনা সংস্থার এই প্রজন্মের কর্ণধার
প্রকাশিতব্য গ্রন্থের প্রচ্ছদ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন লেখক সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য। জানা গেল প্রকাশনা সংস্থা ও রুপমের যোগসূত্রের কাঠ বেড়ালির কাজটা তিনিই করেছেন। আসলে গৌতম রুপমের পারিবারিক বন্ধুই শুধু নন, তাঁর মেন্টরও বটে। যদিও তাঁর লেখার প্রেরণা সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও হুমায়ূন আহমেদ। মা বাবার একমাত্র সন্তান গান গাওয়া তাঁদের পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গড়ে ওঠা সংস্থা ঝঙ্কারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। মাত্র ৭বছর বয়সেই অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়ায় সুর সংযোজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া। এরপর লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে স্কুলে শিক্ষকতা। কিন্তু গানের টান তো রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ফলে ছোট থেকেই আকাশবাণী ও দূরদর্শনে সংগীত পরিবেশন। পরে যুগের দাবিতে ব্যান্ড এর গান। কখনও একক। কখনও ব্যান্ডে। জন্ম বিখ্যাত ফসিলস এর। ইতিমধ্যে গানের জন্য মিলেছে জাতীয় পুরস্কারও।
কাকতালীয় ভাবে জন্মদিনের তারিখ মিলেছে মধু কবির সঙ্গে। তাঁর বাঁধন ভাঙার তাড়নার সঙ্গে মিলেছে রুপমের জীবনবোধ। গানের শব্দ চয়ন, শব্দ বপণ ও শব্দ ক্ষেপণে তাই বোধ হয় দেখা মিলেছে এক আলাদা বৈশিষ্ট্যের। গান নিয়ে চর্চার দৌলতে রুপম গান নিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন। গান নিয়ে পত্রিকার সম্পাদনাও সেই সূত্রে। কিন্তু উপন্যাস লেখার তাড়নায় বারি সিঞ্চনের কাজটা করেছে সর্বভারতীয় এক সংবাদ প্রকাশনার বাংলা দৈনিকের রবিবারের পাতার সম্পাদক। ফলে সৃষ্টি ব্রহ্ম ঠাকুর। থ্রিলারধর্মী উপন্যাসের ধারাবাহিক বহমানতা । প্রতি রবিবার। সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনের আগের দিন সেই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসের ১৪তম পর্ব। ব্রহ্মঠাকুর প্লাস টু। গায়ক রুপমের কলমের তীক্ষ্ণতা বুঝতে উল্লেখ করতেই হয় কটি লাইন। রুপম লিখছেন ,,,,,,বাংলা ছবির যুবক নায়ক আশ্চর্য্কে কথাটা বললেন গাড়ির চালক গবেষক এরিক দত্ত।
_ ইয়ংম্যান তোমার জানা উচিত, স্টিফেন হকিং এর মত বিজ্ঞানী হুটহাট মারা যান না, সে যতই তাঁদের দৈহিক মৃত্যু হোক না কেন। মৃত্যু সম্ভাবনার হিসেব তাঁদের প্রথম থেকেই কষা থাকে। তাই তাঁরা নিজেদের প্রোটোটাইপ তৈরি করে জন্য মেশিনের মধ্যে, এমনকি একটা গোটা টিম তৈরি থাকে তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে,,,,,,,। রুপম হয়তো নিজেও সে টিমের সদস্য।
প্রত্যেক মানুষের স্বাধীন স্বত্তায় বিশ্বাসী রুপম। নাহলে নিজের ছেলের নামকরণ যদিও করেন রূপ আরোহণ প্রমিথিউস, ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, প্রমিথিউসের ঈশ্বরকে চ্যালেঞ্জ জানানোর বিষয়টি তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, তাই এই নামকরণ। তবে ছেলে যদি চায় তাহলে এই নাম সে বর্জনও করতে পারে। রুপমের এই উপন্যাস নাকি অনলাইনে ১২০০ কপির চাহিদা হয়ে গেছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই। অর্থাৎ রুপম অনুরাগীরা এক বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে আছেন তাঁদের আইডল রুপমের লেখনী সম্বন্ধে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এই মুহূর্তে বই পড়ার আগ্রহ যখন সীমিত, তখন রুপমের উপন্যাসের এই চাহিদা অনেক নামিদামি লেখকের ঈর্ষার বস্তু হয়ে উঠতে পারে।
ইতিমধ্যেই মিডিয়াকে রুপম বলেছিলেন, তিনি গান লেখার মেশিন । তাই সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল , মেশিনে অনেক সময় মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি যন্ত্রণায় পরিবর্তিত হয়। সেক্ষেত্রে গান,সুর,গানের কথা সৃষ্টির সময় থেকে উপন্যাস রচনার সময় বের করার সমস্যায় কি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটতে পারে? কেননা যেকোনও সৃষ্টিকর্তার ধারাবাহিক সাফল্যই স্বীকৃতির মাপকাঠি হয়। রুপম জবাব দেন, না তাঁর সৃষ্টির বিভিন্ন আঙ্গিকে সমন্বয় থাকবে। গৌতম ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন এক গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমরা জানি যে কোন পুরুষের সাফল্যের অন্তরালে থাকে কোনও নারীর সহযোগিতা। রুপম সেই ক্ষেত্রেও বঞ্চিত নন। তাঁর জীবনের স্ফুরণে সহধর্মিণী রূপসা দাশগুপ্তের অবদান না থাকলে পথ চলা তাঁর এতটা মসৃণ হতো না। সলজ্জ চাহনিতে সেকথা স্বীকারও করলেন ঔপন্যাসিক রুপম ইসলাম। এখন অপেক্ষা, উপন্যাসের সাম্রাজ্যে ঔপন্যাসিক রুপম ইসলামের অভিষেক কতটা বর্ণাঢ্য হয় সেটাই দেখার।
Be First to Comment