Press "Enter" to skip to content

নক্ষত্র পতন :- চিরতরে চলে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়….।

Spread the love

চলে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

বাবলু ভট্টাচার্য : চলে গেলেন বাংলার প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। আজ মঙ্গলবার সন্ধে ৭.৩০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ শহর কলকাতার এক নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

সেই ‘সাগরবেলায়/ঝিনুক খোঁজার ছলে/গান গেয়ে পরিচয়…’ তাঁর কন্ঠের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় বাঁধা হয়ে আছে যেন নিবিড় আত্মীয়তায়। তাঁর কন্ঠেই গানে গানে প্রজাপতির পাখার রঙ। গানে তিনি যে ইন্দ্রধনু রচনা করেন তা দশকের পর দশক মোহাবিষ্ট করে রেখেছে বাঙালি শ্রোতাকে। মায়াবতী মেঘে তন্দ্রা নেমে এলে অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে তাঁর গানই আশ্রয় হয়ে উঠে বলে ওঠে— জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া।

গুণ গুণ মন ভ্রমরার কেন যে কীসের ত্বরা সে হয়তো আমরা বুঝেই উঠতাম না যদি না তিনি শুনিয়ে দিতেন, এই যে কাছে আসা, এই যে ভালোবাসা… তার কোনও কিছুই খেলা নয়, নয় নয়…।

মধুমালতীর ডাক শুনে ফুল ফাগুনের সে খেলা কি অমন সুরেলা হয়ে উঠত যদি না পেত এমন মায়াবী কন্ঠ, নাকি চম্পা-চামেলী দুলে উঠতে পারত গোলাপের বাগে। হয়তো কিছুই নাহি পাবো, তবুও দূর হতে ভালোবেসে যাওয়া জীবন, প্রতিবার যে নতুন জীবনে এসে বলে ওঠে, আমি তোমারে ভালোবেসেছি, সে কথাই তিনি বারবার মনে করিয়ে দিয়ে যান তাঁর সুরেলা সফরে।

কবে থেকে যেন বাঙালি তৈরি করে নিয়েছে সহজ সমীকরণ। পর্দায় যা সুচিত্রা মায়া, নেপথ্যে তাই-ই মায়াবী সন্ধ্যা কন্ঠ। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গীতশ্রী। কিংবদন্তি। গানে গানে উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা ওড়াতে ওড়াতে পেরিয়ে গেলেন জীবনের অমূল্য সময়গুলি।

আকাশের অস্তরাগে, আড়ালে লুকায়ে থেকে কে যে আমাদের ডেকে যায় আমরা চিনতে পারি না, শুধু তাঁর সুর-গান-কন্ঠ আশ্রয় করেই হয়তো বলে উঠতে পারি– আরও কিছুক্ষণ না হয় রহিতে কাছে/আরও কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে…।

এখনো শ্রাবণ এলেই যেমন নতুন করে জেগে ওঠে মায়াবতী মেঘ, রাত এলেই ফুটে ওঠে ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা– বঙ্গ জীবনের অঙ্গ আপাত শান্ত, ধীর-স্থির সন্ধ্যার জীবনে নাকি হাজার ঢেউ-এর ওঠাপড়া? খ্যাতির পাশাপাশি খ্যাতির বিড়ম্বনাও নাকি অনেক সইতে হয়েছে তাঁকে!

১৯৪৮-এ বাংলা আর হিন্দিতে তৈরি হয়েছিল ‘আনজান গড়’। স্বাভাবিকভাবেই বাংলার পাশাপাশি হিন্দি গানও গাইতে হয়েছিল সন্ধ্যাকে। প্রথম হিন্দি গান ‘হা হা হাসকে জিয়ে’ বাজারে আসতেই সুপারহিট। বাংলার অধীর অপেক্ষা, সন্ধ্যা এবার নিজেকে মেলে ধরবেন তখনকার মুম্বাইয়ের সুরের আকাশে। সেই মতোই এসডি বর্মন, অনিল বিশ্বাস, মদনমোহন, খৈয়ামের সুরে বেশ কিছু গান করেন। তারপরেই আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি গুটিয়ে নেন হিন্দি গানের দুনিয়া থেকে।

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মানেই তো এরকমই সুরে-সুরভিতে বেলা ভরে ওঠা। তার প্রয়াণে এই কিংবদন্তি শিল্পীকে আমার শ্রদ্ধা। প্রণাম।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.