মধুমিতা শাস্ত্রী: ১জুলাই, ২০২০। ডাক নাম ছিল ‘ভজন’ আর ভালো নাম বিধান চন্দ্র রায়। বাবা ছিলেন সরকারি আমলা। বিহারের পাটনায় এক বাঙালি পরিবারে তিনি আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মেডিকেল কলেজে তিনি অকৃতকার্য হন। জীবনে কোনোদিন হার মানতে শেখেননি। তাই কলকাতার মেডিকেল কলেজে অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও মাত্র ১২০০ টাকা সঙ্গী করে বিলেত যান এবং মাত্র দু’বছরের মধ্যেই সম্মানের সাথে মেডিসিন ও সার্জারির চুড়ান্ত সন্মান ও একই সঙ্গে অর্জন করেন। সফলতা তাঁর পায়ের তলায় আসতে বাধ্য হয়েছিল। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য মেল নার্সের কাজ করেছেন। এমনকি কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সিও চালিয়েছেন। কোনো প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অচিরেই ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। রুগীর হেঁটে আসা দেখে তিনি রোগ নির্ণয় করতে পারতেন। অনেক সময় রুগীকে মুখ ফুটে বলতে হতো না তার কী কষ্ট হচ্ছে। এমনই এক ধণ্বন্তরি ছিলেন ডঃ বিধানচন্দ্র রায়।
ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার দূরাবস্থা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। বিলেত থেকে ডাক্তারি পাস করে ‘ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুলে’ ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে এটির নাম ‘নীল রতন সরকার’ হসপিটাল। আর খুব কম সময়ের মধ্যেই প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি মহত্মা গান্ধী থেকে জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত মহান ব্যক্তিদের চিকিৎসা করেছেন। ১৯৩৫ সালে তিনি লন্ডনে রয়াল সোসাইটি অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে সদস্য পদ লাভ করেন। এরপর ১৯৪০ সালে আমেরিকান সোসাইটি অফ চেষ্ট ফিজিশিয়ান ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রেরণায় তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। যখন ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ৬৫ বছর বয়স তখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ সাড়ে চোদ্দ বছর আমৃত্যুকাল তিনি ওই পদেই ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রধানত চারটি বিষয় গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
(১) চিকিৎসা ক্ষেত্র।
(২) শিল্প ক্ষেত্র।
(৩) শিক্ষা ক্ষেত্র।
(৪) নগর সভ্যতার উন্নয়ন।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেশের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে পশ্চিমবঙ্গের রূপকার নামে পরিচিত। তিনি যাদবপুর টিবি হসপিটাল, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হসপিটাল প্রভৃতি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি গড়ে তোলার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতির প্রতিষ্ঠাতা। এমনকি ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউটও তাঁর হাতেই তৈরি।
দূর্গাপুর ও আসানসোলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিশাল এক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলেন। তিনি ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরী করেছিলেন। হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্প, ব্যান্ডেল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। দূর্গাপুর শিল্প নগরী ছিল তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব।
বিধানচন্দ্র রায় কল্যাণী উপনগরী, অশোকনগর, কল্যানগর প্রভৃতি নগর সভ্যতায় পত্তন করেছিলেন।
Be First to Comment