প্রবীর রায় : অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্র পরিচালক। কলকাতা, ১২ জুলাই, ২০২০। এই পরিণত বয়সে এসে মাঝে মাঝে ফেলে আসা অতীতের পানে তাকিয়ে দেখতে বেশ লাগে। খানিকটা ভয় মিশ্রিত বিস্ময়, কৌতুক – সব মিলে মিশে একটা রঙচঙে অনুভূতির জন্ম হয় তাতে খানিক তৃপ্তির মিশেল থাকে। ভাবতে বসি- সাহসে ভর করে নতুন নতুন কাজে জড়িয়ে পড়ে কতো রকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। এখন মনে হয়- এই অভিজ্ঞতা গুলোই মানুষকে নিরন্তর নতুন কাজে লেগে পড়ার প্রেরণা যোগায়।
প্রাত্যহিক ব্যস্ততার ফাঁকফোকরে একটু অবসরমতো এই অভিজ্ঞতাগুলো লিখে ফেলার একটা তাগিদ অনুভব করছি কিছুদিন যাবৎ।
শুরু করি………
#ভারতীয়দুরদর্শনেপ্রথমরঙ্গীনসম্প্রচার
——————————————————।
১৯৮১ র মাঝামাঝি হঠাৎ ঘোষনা হল- All India Football Federation (AIFF) –র আয়োজনে ভারতে প্রথম Jawaharlal Nehru International Invitation Gold Cup Football Tournament অনুষ্ঠিত হবে। তখন AIFF- এর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী। AIFF Secretary অশোক ঘোষ আর IFA সেক্রেটারী অশোক মিত্র। উরুগুয়ে, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুগোশ্লাভিয়া আর ভারত –এই ছয়টা দেশ অংশগ্রহণ করবে। খেলা হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। তখন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কোনো অস্তিত্ব ছিলনা। তার আগে ১৯৭৫ এর ৯ই আগস্ট কলকাতা দূরদর্শনের জন্ম হয়েছে। তখন প্রতি বছর মালয়েশিয়ার মার্ডেকায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ ফুটবল টুর্ণামেন্ট হতো। মার্ডেকা টুর্ণামেন্টের কালার কভারেজ হতো তবে লাইভ দেখানো হতো না। খেলাগুলো পরে দেখতাম। নেহেরু গোল্ড কাপের খবরটা জেনে মাথায় একটা অদ্ভুত আইডিয়া এলো- ‘কেমন হয় যদি নেহেরু গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের রঙ্গীন সম্প্রচার করা যায়!’ ভাবলাম তো! কিন্তু কাজটা করব কি ভাবে! আমি তখন দূরদর্শনের কাজকর্ম সম্পর্কে একটুও ওয়াকিবহাল ছিলাম না।
সিনক্লেয়ার্স গ্রুপ অফ হোটেল অ্যান্ড ট্রাভেলসের অন্যতম কর্ণধার বেণু দাসগুপ্ত ছিল আমার বোন ভগ্নিপতি পাপড়ি কিশোরের বন্ধু! বেনুর সঙ্গে তখন অশোক ঘোষ, প্রিয়দাসমুন্সির ভালো সম্পর্ক! তার কাছে গিয়ে প্রথম প্রস্তাবটা দিলাম। আলোচনা করে দুজনে মিলে গেলাম অশোক ঘোষের কাছে। সেটা১৯৮১র মাঝামাঝি। অশোকবাবুকে সব বোঝানো হল- একেবারে নতুন একটা বিষয়- তাই বেশ একটা আগ্রহ তৈরি হল। বরাতজোরে AIFF থেকে Exclusive TV coverage rights পেয়ে গেলাম। এগ্রীমেন্ট হলো। নির্ধারিত হল আমাকে ১.২০ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ অর্থ ডলারে পেমেন্ট করতে হবে এবং আরও এক লক্ষ টাকা ভারতীয় কারেন্সিতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে একটা ভি সি আর (VCR) আর টিভি সেট দান করতে হবে AIFF কে। ঝুঁকি নিয়ে ১০,০০০/- টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে এগ্রিমেন্ট সই করলাম। সই তো করলাম- কোথায় কালার ক্যামেরা পাওয়া যায় – তাই-ই জানি না। কলকাতা দূরদর্শনে তখন আমার অনেক পরিচিত বন্ধুবান্ধব ছিল- তাদেরই একজন বিমান সিনহা, ক্যামেরাম্যান, আমার বন্ধু। গেলাম ওর কাছে। শিব শর্মা তখন স্টেশন ডিরেক্টার। বিমান সব শুনে টুনে বললো- “ভারতে কোথায় কালার ক্যামেরা? একমাত্র পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে গোটা দুয়েক ক্যামেরা থাকতে পারে! কিন্তু তোকে দেবে কি?” কলকাতা দূরদর্শনে তখন তখন যে কটা ক্যামেরা সবই Protapak ক্যামেরা সাদা কালো। নেহেরু গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনলাইন কভার হয়েছিল মাত্র তিনটে PROTAPAK ক্যামেরায় – স্পোর্টস প্রোডিউসার বিশ্বনাথ দাসের তত্ত্বাবধানে। আর এখন? সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ৩৪ টা অনলাইন ক্যামেরা ছিল, এ ছাড়া ৩৭০টা ক্যামেরা ছিল HD, UHD, 4K HDR কভারেজের জন্য। সেখানে নেহেরু গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের কলকাতা দূরদর্শনের কাছে ছিল ৩টে ক্যামেরা আর আমাদের কাছে (24 Frames) ৫ টা ক্যামেরা !!! সে যাক…… ঝুঁকি নিয়ে নেমে তো পড়লাম। আমার তো মাথায় হাত! কালার ক্যামেরা কোথায় পাই ? খোঁজ করতে করতে জানতে পারলাম ভারতে এক মাত্র Video Studio আছে বোম্বেতে Western Outdoor Advertising Company – বোম্বেতে সমাচার মার্গে অফিস। চলে গেলাম সেখানে। কথা হলো মিস রাধিকা ভূষণের সাথে। উনি প্রখ্যাত অভিনেতা ভারত ভূষণের ভাইঝি। রাধিকার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হল। ওঁর কাছে জানলাম ভিডিও ক্যাসেট দু রকমের – ১) U-matic video cassette (analogue recording) যেটা SONY –র প্রোডাক্ট আর ২) VHS (Video Home System)- এটা জাপানে তৈরি। রাধিকা আমাকে বললেন –“ VHS set-up অনেকগুলো আছে কিন্তু U-matic system নেই। প্রোফেশন্যাল কাজের জন্য U-matic system ই লাগবে। আপনি যদি International Tournament Cover করতে চান, আপনাকে U-matic system ব্যবহার করতে হবে। এবারে সমস্যা হল অন্য জায়গায়। বিভিন্ন দেশে কালার স্ট্যান্ডার্ড বিভিন্ন। তখন ভারতে analogue সম্প্রচারে colour encoding system ছিল Phase Alternating Line (PAL)-B। আমেরিকা এবং তার সহযোগী দেশগুলোতে ছিল NTSC (National Television System Committee) আর ফ্রান্স, রাশিয়া ইত্যাদি দেশে প্রচলিত ছিল SECAM ( Sequential Couleur a memoire) এটা ছিল system exactly contrary to American method। রাধিকা আমায় জানালেন “U-matic video cassette ভারতে পাওয়া যায় না। জাপানের হিতাচীর সঙ্গে কোলাবোরেশন আছে। জাপানের ZOOM Company থেকে এই ক্যাসেট আনাতে হবে। প্রতিটি ক্যাসেট ৬০ মিনিটের, দাম ২৫০০ টাকা। তার মানে ৯০ মিনিটের খেলার জন্য প্রতিদিন দুটো করে ক্যাসেট লাগবে। তাতেই রাজী আমি। ফিরলাম বোম্বে থেকে। এবারে কলকাতায় একটা অফিস চাই আমার। থিয়েটার রোডে গঙ্গা-যমুনা বিল্ডিং-এ পবন লোহিয়ার অফিস ছিল। তিনি ছিলেন আমার এক মামাশ্বশুরের বন্ধুর ছেলে । সেখানেই হলো আমার প্রথম অফিস- #24_Frames। টুর্নামেন্টের সময় এগিয়ে আসছে। একদিন বোম্বে থেকে Telex এল (তখন Fax নেই) – Western Outdoor Advertising Company থেকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আর ফিনান্সিয়াল ডিরেক্টর কলকাতায় আসছেন সরেজমিন দেখতে। আমি এয়ারপোর্ট থেকে ওঁদের নিয়ে সোজা ইডেন গার্ডেন্সে চলে গেলাম। ইডেনে তখন তিনটি কমেন্ট্রি বক্স- দুটো অল ইন্ডিয়া রেডিও আর একটা বিবিসি। সব দেখে শুনে দুই ডিরেক্টার বললেন- “ Console Room এর জন্য একটা room চাই।” ঠিক হল – অল ইন্ডিয়া রেডিওর একটা ঘর নেওয়া হবে। আবার সমস্যা। আমাকে বলা হল – যে ঘরটা নেওয়া হবে, সেটা এয়ার-কন্ডিশন করতে হবে। ওই ঘরে যে কেবলের তার ফেলা হবে-সেটা আন্ডারগ্রাউন্ড হতে হবে। তার উপরে কার্পেট থাকবে। বোম্বে থেকে ৮/১০ জন ক্রু মেম্বার আসবে, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লালবাজারে ডিসি হেডকোয়ার্টারের কাছে জানাতে হবে কারণ প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী টুর্ণামেন্ট ওপেন করবেন।
এটাও জানানো হল- সব ক্রু মেম্বারদের পাঁচতারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যামেরা ভাড়া আর ক্রু মেম্বারদের জন্য প্যাকেজ হল ২.৫০ লাখ। তা ছাড়া যাতায়াত খরচ, খাবারের বিল এসব তো আলাদা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমি সেটা ১.৯০ লাখে নামাতে সক্ষম হলাম। অ্যাডভান্স হিসেবে ৩০,০০০ টাকা পাঠিয়েও দিলাম।
১৬ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮২- ভারত-চীন ম্যাচ দিয়ে টুর্ণামেন্ট শুরু হবে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী। সব ব্যবস্থা শেষ করে আমরা প্রস্তুত। ক্লাব হাউসে 24 Frames- এর জন্য একটা এক্সিকিউটিভ এনক্লোজার বরাদ্দ হয়েছে। গ্রীণ কার্ড দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ আগের দিন (১৫ই ফেব্রুয়ারী) দুপুরে মাঠ থেকে ফোন এলো আমার কাছে – শঙ্করদা ফোন করেছেন। শংকরদা মানে শংকর চট্টোপাধ্যায় তখন কলকাতার প্রখ্যাত ক্যামেরাম্যান আর শ্রেষ্ঠ ক্যামেরা ক্রেন অপারেটর। ব্যাক্তিগত জীবনে উনি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এর নাতি। অজয় কর, তপন সিংহ, ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর ঝুলিতে তখন ঝিন্দের বন্দী, সপ্তপদী, যুক্তি তক্কো গপ্পো –র মত ছবি। এ হেন শংকরদা আমার হয়ে মাঠে গোটা কাজটা তদারকীর দায়িত্বে ছিলেন। শংকরদা ফোনে আমাকে তখুনি ডেকে পাঠালেন- ঘোর সমস্যা । কি ? অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে বলেছে ‘ওরা নাকি কোনো ঘর ছাড়তে পারবে না, দুটো ঘরই ওদের চাই।‘ দৌড়লাম মাঠে। দু পক্ষকেই অশোক ঘোষ ডেকে পাঠালেন, সেখানে অশোক মিত্রও উপস্থিত। কথা হল। বললাম- তা কি করে সম্ভব! পরের দিন খেলা! মনিটর, আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল কানেকশান, এয়ার কন্ডিশন –সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে- এখন ঘর ছাড়ব কি ভাবে? সব শুনে অশোক ঘোষ অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতাকে বললেন- “ যদি অ্যাডজাস্ট করে এই ঘরে করা সম্ভব তাহলে AIR থাকুক, নাহলে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ধারাবিবরণীর দরকার নেই। 24 Frames- এর তত্ত্বাবধানে Colour TV Coverage হবে! প্রথম দিনটা গেলো। অশোক ঘোষ ফরমান জা্রী করলেন – ক্লাব হাউস এ কালার টিভি দেখতে চাই! বিদেশে সব জায়গায় কালার! বিদেশের সব প্লেয়ার এসেছেন, তাদের সামনে আমাদের সম্মানের জন্য এটা প্রয়োজন !! প্রবীর, ব্যাবস্থা করো! তোমার কাভারেজ ক্লাব হাউস এ চলবে! আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। এর জন্য একটা পাওয়ারফুল টিভি চাই – পাই কোথায়? দৌড়লাম অরবিন্দ কোম্পানীর অভয় তাঁতিয়ার কাছে। আমার বিশেষ বন্ধু। অভয় এখনও আছে, তবে কোম্পানীর নাম বদলে হয়েছে অ্যাঞ্জেল ভিডিও। ওদের শোরুমে একটা বড়ো টিভি দেখলাম, সেই ৮২ সালে দাম ৪৮,০০০ টাকা। ওটাই ভাড়ায় চাই আমার। অভয় কিছুতেই দেবে না। তারপরে রাজি হল এক শর্তে- দৈনিক ৫০০ টাকা ভাড়া আর সেটের ইন্সিওরেন্স করাতে হবে। এক রাতের মধ্যে ইন্সিওরেন্স! কি ভাবে সম্ভব? সেই অবিশ্বাস্য কাজটাও হল। সেই মামা শশুর কাঞ্চন মামার শরণাপন্ন হলাম! উনি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ছিলেন!। চৌরঙ্গী রোডে হিমালয় হাউসে ওঁদের অফিস। পরদিন সকাল নটায় সেখানে পৌঁছে কাঞ্চনমামার সক্রিয়তায়, ইন্সিওরেন্স-এর কাগজপত্র তৈরি করে বেলা ১২টার মধ্যে ক্লাব হাউসে কালার টিভি পৌঁছে গেল – খেলা শুরু বেলা দুটোয়। অশোক ঘোষ এসে দেখে গেলেন। কলকাতা দূরদর্শনের সাদা কালো টিভি সরিয়ে নিতে বললেন। রূপক সাহা তখন আনন্দবাজার পত্রিকার স্পোর্টস রিপোর্টার, স্পোর্টস এডিটর মতী নন্দী। প্রথম দিন খেলা শেষ হওয়ার পর রূপক আমার কাছে এলো একটা ইন্টারভিউ নিতে! – “ AIR এর সঙ্গে আমার কি ঝামেলা হয়েছে?” আমি সত্যি কথাই বললাম। পরদিন আনন্দবাজারে সেটা ফ্রন্ট পেজ নিউজ হলো। একটা জিনিষ দেখেছি- সেকালেও- একালেও… অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট কথা বললেই সেটা খবর হয়ে যায়। যাই হোক, ১৬ দিন ধরে যজ্ঞ চললো। এই প্রথম আমরা চোখের সামনে উরুগুয়ের র্যামোস, ফ্রান্সিসকোলির মত ফুটবলারদের দেখলাম। এর আগে ১৯৭৭ এ মোহনবাগান- কসমস ক্লাবের প্রীতি ম্যাচে পেলেকে দেখেছিলাম। কিন্তু তখন পেলে প্রায় অস্তাচলে।
এই প্রথম সত্যিকারের আন্তর্জাতিক ফুটবলের স্বাদ পেলাম আমরা। সেই সময়ের বিখ্যাত English Commentator অরিজিৎ সেন ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন! প্রতিযোগিতা তো শেষ হল। কিন্তু এর পরে আমাকে নানারকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হল। সবার নিশ্চয়ই মনে আছে সেই সময় NOVA বলে একটা ঠান্ডা পানীয়ের সংস্থা ছিল। ওরা মাঠে বিশ্রামের অবসরে পানীয় সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছিল। ওই সংস্থা থেকে আমাকে বলা হয়েছিল যে আমরা যেন মাঠে ওদের কভার করি। ওরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- সব ক্যাসেট ওরা কিনে নেবে। শেষ পর্যন্ত ওরা কিছুই নেয় নি। প্রত্যেকটা স্টেট ফুটবল ফেডারেশান প্রথমে বলেছিল- আমাদের কাছ থেকে ক্যাসেট কিনবে। শেষ পর্যন্ত কেউ কেনেনি। ফলে এতো বড়ো একটা প্রোজেক্টের শেষে আমি তখন বেশ ক্ষতির মুখোমুখি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ। ঠিক করলাম- সমস্ত ম্যাচের হাইলাইটস দিয়ে ন্যাশনাল দূরদর্শনের জন্য একটা এক ঘন্টার অনুষ্ঠান করব
#”An_Exclusive_Affair”। স্পনসর ঠিক হলো ডানকান। গেলাম দিল্লী। খান মার্কেটে লোকনায়ক ভবনে দূরদর্শনের অফিস। তখন সব ইন-হাউস প্রোগ্রাম। স্পন্সরশীপের ব্যাপারটা একেবারেই প্রচলিত ছিল না। দূরদর্শনের Controller of Programme তখন Mr. J.N. Singh। তিনি সব শুনে বললেন- “ডানকান মানে তো সিগারেট। আমরা সিগারেটের বিজ্ঞাপন দিতে পারব না।“ ঠিক হল – ডানকান চা দিয়ে স্পনসর করা হবে। শেষ পর্যন্ত সেটাও ফলপ্রসু হলোনা। কি করা যায়!এবারে যোগাযোগ করলাম পিয়ারলেস কোম্পানীর সঙ্গে। তখন চেয়ারম্যান ছিলেন বি কে রায়। আমি শ্রী রায়ের সঙ্গে দেখা করলাম কলকাতায় পিয়ারলেস ভবনে। কথাবার্তা হল। একদিন টেলিকাস্ট হবে- কভারেজ মূল্য ৮০,০০০ টাকা। ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত এটাও মানতে চাইল না যেহেতু পিয়ারলেস বেসরকারী ইনসিওরেন্স সংস্থা। শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়ালো – শুধু কলকাতায় নয়- গোটা দেশে প্রথম কালার টিভি কভারেজ করে আমি পুরো টাকাটাই ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার একটা পরিচিতি হলো। মনে আছে- সেই সময় #সংবাদ_বিচিত্রা-তে দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় আমাকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন।
অতঃ কিম ? ভাবতে বসলাম-এবারে কি করা যায়? যে কোনো ভেঞ্চার কভার-আপ করতে গেলে আরেকটা ভেঞ্চার করতে হয়।
সুতরাং নতুন আইডিয়া ভাবতে লাগলাম। ভাবতে ভাবতে একটা আইডিয়া মাথায় এসে গেলো ………
সে গল্প আরেক দিন……।
প্রবীর রায় : অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্র পরিচালক।
Be First to Comment