ডঃ পি সি সরকার (জুনিয়র) বিশ্বখ্যাত জাদুকর, ও বিশিষ্ট লেখক। ২২, জানুয়ারি, ২০২১। দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে আমাদের কি না করতে হয়। একটা ম্যাজিকের দৃশ্যে জয়শ্রীকে ঘোড়ায় চেপে আসতে হোত। না, আমার আদেশে নয়, জয়শ্রীর কল্পনা মাফিক, স্বেচ্ছায়, স্বপ্ন-লোক থেকে একদম বাস্তবে, স্টেজের ওপর। মিউজিকের তালে, জোড়ালো, চোখ-ধাঁধানো, স্পট-লাইটের তলায়, নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক জায়গায় আনা বেশ কঠিন কাজ। এজন্য জয়শ্রীকে অনেক রেওয়াজ করতে হয়েছে। ঘোড়ায় চেপে, দর্শকদের কাছে, অপ্রত্যাশিতভাবে টগবগিয়ে ঘোড়ায় চেপে আসা মুখের কথা নয়। বাঘা-বাঘা শিল্পীরাও ভুল করেন। জয়শ্রীকে সেই পোষ্যকে দিয়ে করাতে হয়েছে। দিনে দু-বেলা, মহাজাতি সদনের মঞ্চে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, মানুষের হৃদয় জয় করতে। ও পেরেছে। আমি ভয় পেতাম, ঘোড়ার খুরের পায়ে তো লোহার নাল লাগানো। ওই দ্রুত টগবগাতে গিয়ে মসৃণ স্টেজে, মার্বেলের ওপর ঘোড়া স্লিপ্ না খায়। তাহলে বিরাট দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। ঈশ্বরের কৃপায়, হয়নি। হয়েছে ইতিহাস রচনা। এই না হলে জুটি?!?! দুই পাগলা পাগলীর খেপামি!! ঘোড়াটার নাম 'মুন্না', খুব সুন্দর আর বাধ্য। জয়শ্রীর আদেশ, ও অক্ষরে অক্ষরে শুনতো। গুড় খেতে ভালোবাসতো। জয়শ্রীকে গুড়-ছোলা নিয়ে প্রতিদিন খাওয়াতে হতো। ও আমাদের নয়, গোপাল ঘোষ নামে মানিকতলার এক শৌখিন বন্ধুর পোষা। ভালোবেসে শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে দিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই মুন্না হয়ে গেছিলো আমাদের সহ শিল্পী এবং পারিবারিক বন্ধু। প্রায় পঞ্চাশ বছর হতে চললো। মুন্না অমরলোকে চলে গেছে। কলকাতা ওকে মনে রেখেছে কিনা জানিনা। আমরা রেখেছি। একটা ঘোড়ার পুতুল, আলমারিতে সাজিয়ে আমরা নলেন গুড় খেলে, ওর নাম করেও কিছুটা, ওর সামনে রাখি। পিঁপড়েদের দায়িত্ব ওগুলো আদৃশ্যলোকে নিয়ে ওর কাছে পৌঁছে দেওয়া। ওরাও খুব ভালো। ফাঁকি দেয় না। পৌঁছে দেয়। সব হয়ে যায় ভ্যানিশ্।

Be First to Comment