মোল্লা জসিমউদ্দিন : ১০, আগস্ট, ২০২০। সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শিকার হয়েছেন। হাজতবাসের পাশাপাশি জুটেছে নানারকম জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা। তবে এরা কেউ দমবার পাত্র নন। দেশের সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের ভুমিকা কে সামনে রেখে নির্ভীক সাংবাদিকতার লড়াই চালাচ্ছেন অবিরত। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বোলপুরের এক সাংবাদিকের দুটি ফৌজদারি মামলায় আগাম জামিনের ক্ষেত্রে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে – ‘বেআইনী কাজ নিয়ে খবর করা সাংবাদিকের মৌলিক অধিকার। প্রশাসনের চোখে ভালো নাও লাগতে পারে। তবে নির্ভীক জনহিতকর সাংবাদিকতা জনগণ কে সচেতন করে ‘। উক্ত দুটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই সাংবাদিকের আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণ করে বীরভূম জেলার এসপি কে দুটি এফআইআর কপি ভালোমতো খতিয়ে দেখবার পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ এও জানিয়েছিল আদেশনামায় – ‘যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য হলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা অভিযোগকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা উচিত। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এজলাসে আরামবাগের এক ইউটিউব নিউজ চ্যানেলের ত্রয়ী সাংবাদিক গ্রেপ্তারে স্থানীয় থানার পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়ে মামলা উঠে। ভার্চুয়াল শুনানিতে আরামবাগ টিভির সম্পাদক সেখ সফিকুল ইসলাম, আলিমা বিবি এবং সুরজ আলি খানের গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে রাজ্যের ডিজিপির কাছে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এই মামলায় পর্যবেক্ষণ – ‘ তিনজন সাংবাদিক গ্রেপ্তারে দেশের সংবিধান কে লঙ্ঘন করা হয়েছে’। রাজ্যের ডিজিপি কে চাওয়া রিপোর্টে সুপ্রিম কোর্টের অর্নেশ কুমার – ললিতা কুমারি মামলার রায় এক্ষেত্রে (আরামবাগ টিভি) লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ। এফআইআর কপি থেকে গ্রেপ্তারের আগে নোটিশ। পাশাপাশি গভীররাতে রীতিমতো ঘর ভেঙে দুজন শিশু সহ ওই তিনজন সাংবাদিক কে জোরপূর্বক গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আরামবাগ থানার পুলিশ। যদিও ওই দুই শিশু কে আরামবাগ থানার সামনে রেখে দেয় পুলিশ। যে অভিযোগের ভিক্তিতে গ্রেপ্তার। সেই অভিযোগের ঘটনা টি তিনমাস পুরাতন। এফআইআর কপিতে অবশ্য ওই তিনমাস কেন দেরি হলো অভিযোগ নথিভুক্ত করতে তার উল্লেখ নেই। কোন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আগে নোটিশ দিতে হয়। এক্ষেত্রে সেই ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে নোটিশ দেওয়া হয়নি৷ গত ২৯ জুলাই রাত ১২ টা নাগাদ অভিযোগপত্র গৃহীত হয়। গৃহীত হওয়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আরামবাগ থানার পুলিশ বিশাল পুলিশ বাহিনী এনে রীতিমতো ঘরের প্রধান দরজা ভেঙ্গে জোরপূর্বক গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পুলিশের এহেন অতিসক্রিয়তায় প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কেন এই পুলিশের অতি সক্রিয়তা? আরামবাগ টিভির পক্ষে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান – ‘নিরপেক্ষ এবং নির্ভীক সংবাদ পরিবেশনে আরামবাগ টিভি জেলার গন্ডি ছড়িয়ে রাজ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে লকডাউনের মধ্যেই আরামবাগ থানার সামনে থেকে ৫৭ টি ক্লাব কে গড়ে ১ লক্ষ টাকার রাজ্য সরকারের চেক বিলি হয়। করোনার সময়ে যেখানে জমায়েতে বিধিনিষেধ সেখানে আরামবাগ থানা কিভাবে এই চেকবিলি কর্মসূচি নিলো? সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেশিরভাগ ক্লাবের আবার কোন অস্তিত্ব নেই! আরামবাগ টিভির সম্প্রচারিত খবরে এগুলি বিস্তারিত দেখানো হয়। এছাড়া অন্য সংবাদ পরিবেশনে আরামবাগ থানার পুলিশের বালির গাড়িতে তোলাবাজির ছবিও দেখায় এই ইউটিউব নিউজ চ্যানেলটি। এই ইউটিউব নিউজ চ্যানেলে লক্ষাধিক গ্রাহক থাকায় সারারাজ্য জুড়ে হইচই পড়ে যায়। পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রাক্তন সদস্য যার অবাধ যাতায়াত আরামবাগ থানাতে। তিনি আরামবাগ টিভির ত্রয়ী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গত ২৯ জুলাই রাত ১২ টা নাগাদ তোলাবাজির অভিযোগ আনেন। তাও তিনমাস আগেকার ঘটনার! অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই আরামবাগ থানার পুলিশ তিন সাংবাদিক কে গ্রেপ্তার করে অভিযোগপত্র গ্রহণের ঘন্টা খানেকের মধ্যেই! আরামবাগ মহকুমা আদালতে ধৃতদের পেশ করা হলে প্রথম দিকে পুলিশি হেফাজত পরবর্তী ক্ষেত্রে জেল হেফাজত হয় সাংবাদিকদের। কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এর মাধ্যমে আরামবাগ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়ে মামলা দাখিল হয়। চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এজলাসে এই মামলার অনলাইন শুনানি চলে। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের বেশকিছু মামলার গ্রেপ্তারি বিষয়ক রায় দেখিয়ে আরামবাগ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করার আর্জি রাখেন মামলাকারীরা। হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এই মামলায় গ্রেপ্তারের পদ্ধতি নিয়ে রাজ্যের ডিজিপির কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন। পাশাপাশি এই তিনজন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে দেশের সংবিধান কে লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে মামলার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। গত সপ্তাহে বোলপুরের এক সাংবাদিকের আগাম জামিনের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্ভীক জনহিতকর সাংবাদিকতার গুরুত্ব উল্লেখ করে বীরভূমের এসপি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তার উপর চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট আরামবাগ টিভির সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্যের ডিজিপির কাছে। এতে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – উচ্চ আদালত না থাকলে নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকুল ইসলামরা পুলিশের অতি সক্রিয়তায় জেলের চার দেওয়ালেই বছরের পর বছর পচতেন…….
ত্রয়ী সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের……..
More from GeneralMore posts in General »
- Minimally Invasive Robotic Surgery at Narayana Hospital RN Tagore Hospital, Mukundupur, Offers Life-Changing Results for Ureteric Stone Patient….
- H.E. Dr. C.V. Ananda Bose, Hon’ble Governor of West Bengal, Inaugurates the AIU East Zone Vice Chancellors Meet 2024-2025 with JIS University as the Host University….
- আদিবাসী শিশু কল্যাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগে এবার গোবরডাঙ্গা নকসা।
- কলকাতায় আইআইটি – জেইই এবং নিট কোচিংয়ে রাইস বানসাল এর নতুন উদ্যোগ…।
- নিউ দিল্লিতে কর্তব্য পথের নেতাজি মূর্তিতে লেফটেন্যান্ট পিল্লাইয়ের শ্রদ্ধা ও ভারতীয় সেনার সম্মান প্রদর্শন…..।
- এন্টোড কলকাতায় শিশু কিশোরদের শ্রবণ হ্রাস সমস্যার বৃদ্ধি মোকাবিলায় জাতীয় শ্রবণ সপ্তাহের আয়োজন করলো…।
Be First to Comment