তুঁতফল??
সুস্মিতা দাস: ২১ জুন, ২০২০। তুঁত নামটা শুনলেই আমাদের রেশমের কথা মনে পরে, কী তাই তো?হ্যা, এই তু্ঁতফল গাছেই রেশমের পোকা গুটি তৈরি করে। তবে এই গাছের ফলও অত্যন্ত সুস্বাদু। এই রেশম শিল্পের কারনে তুঁতফল আর দশটা ফলের মত জনপ্রিয়তা পায়নি। আজ আমরা এই ফল নিয়ে আলোচনা করবো।
তুঁতফল সম্পর্কে কিছু তথ্য ??
তুঁতফল দেখতে অতিব সুন্দর হয়। ইংরেজি নাম ‘Mulberry’এই ফলের তিনটি প্রধান প্রজাতি রয়েছে। এই প্রজাতি গুলোর নামকরণ করা হয় এদের রঙের ভিত্তিতে যেমন সাদা, লাল ও কালোতুঁত (Morus indika,Morus rubra,Morus nigra) হিসাবে। এই গাছ পর্ণমোচী ও সপুষ্পক উদ্ভিদ। গাছটি লম্বায় ২০–২৫ মিটার হতে পারে। বসন্তের শুরুতে এই গাছে নতুন পাতা আসে। পাতা ডিম্বাকার, খসখসে, পাতার প্রান্তভাগে করাতের মত খাঁজ কাটা থাকে
তুঁতগাছের পাতা রেশম পোকার (মথ) এর প্রিয় খাদ্য। সেই রেশম পোকা যার লালা রস থেকে রেশম সুতা তৈরি হয়।
এই গাছে ফুল আসে ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসে। ছোট ছোট ফুল গুলো গুচ্ছে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা হয়। এর ছোট ছোট ফলগুলি ও গুচ্ছাকারে থাকে। এর কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে লাল ও পরে কালো রঙ ধারণ করে। মার্চ, এপ্রিল মাসে ফল পাকে।মোটামুটি সারা বছর কম বেশি ফল পাওয়া যায়। পাকা ফল নরম, রসালো, তুলতুলে, টকমিষ্টি স্বাদের হয়। আবার কোন কোন ফল প্রচুর মিষ্টি হয়। এই ফলের উপলব্ধি না খেলে বোঝার উপায় নেই। মানুষের সাথে সাথে শালিক, টিয়া, বুলবুলি, টুনটুনি ও অনেক পাখির প্রিয় খাদ্য এই ফল।
এই তুঁতগাছের আদিবাস চীন দেশে। এই গাছের চাষ করা হয় প্রধানত রেশমের জন্য। এশিয়া (ভারত, বাংলাদেশ, চীন) আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে তুঁতগাছের চাষ হয়। কিন্তু বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতেএবং আফগানিস্তানে ফলের জন্য এই গাছের চাষ করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক গ্রামে তুঁতগাছ দেখতে পাওয়া যায়।
পুষ্টিগুন??
তুঁতফল একটি পুষ্টিকর ফল। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন (এ,সি,কে,ই), আয়রণ, ক্যালসিয়াম,কার্বোহাইড্রেট, ফোলেট ইত্যাদি। এইসব উপাদান গুলি মানব দেহের নানা রকম রোগ প্রতিরোধে কার্যকারী।
উপকারিতা ??
এই ফলের অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। পাকা ফলের রস দাহ, কফ, বায়ু, জ্বরনাশক হিসাবে কাজ করে। অবশ্য বেশি পরিমানে খেলে ডায়েরিয়া হতে পারে। এছাড়াও এই ফলে থাকা উপাদান গুলি কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, বাত, মাইগ্রেন, ফ্লু, সর্দি, হার্ট অ্যাটাক, গাউট, কোলেস্টরল ও ফোলাভাব রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এর ফল,পাতা ও শেকড়ে থাকা স্যাকারাইড মানবদেহের রক্তে শর্করার অবস্থা বজায় রাখে। ছাল ও শিকড় এর রস কৃমিনাশক। আগেকার বৌদ্ধ মন্দিরের সন্নাসীরা এই গাছের ছাল থেকে কাগজ তৈরি করতেন। এই ফল থেকে জেলি, জ্যাম ও স্কোয়াশ তৈরি করা হয়।
ছবি ~ গুগল থেকে সংগ্রহ করা।
Be First to Comment