স্মরণ : স্মিতা পাতিল
বাবলু ভট্টাচার্য : তথাকথিত গ্লামারবিহীন আপাত অগোছালো সাদামাটা চেহারা- অথচ এর বিপরীতে, তার মেদবিহীন দীর্ঘ ছিপছিপে তনু, নির্মল নিস্কলুষ সারল্যের হাসি, মেধার ঔজ্জ্বল্যে ঝলমলে তার স্বাধীনচেতা নারীর ইমেজ, স্মিতা পাতিলকে করে তুলেছিল আশির দশকের যৌবনদৃপ্ত নতুন আইকন।
অসম্ভব ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত আর আত্মপ্রত্যয়ী এক জোড়া চোখই স্মিতা পাতিলের আসল সৌন্দর্য্য।
১৯৫৫ সালের ১৭ অক্টোবর পুনেতে স্মিতা পাতিল জন্মগ্রহণ করেন। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় দুরদর্শনে খবর পড়ার মধ্য দিয়ে। কিন্ত সমস্যা দেখা দেয় নিয়োগপত্র দেওয়ার সময়। স্মিতা তখনও কলেজের ছাত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধায় তার সাথে দুরদর্শন কোন চুক্তিপত্র স্বাক্ষর না করে তাকে দৈনিক ভাতার শর্তে চাকরিতে নিয়োগ দেয়। শুরু হয় সংবাদ পাঠে স্মিতার প্রথম ক্যারিয়ার।

এ সময় ফিল্মসিটি মুম্বাইয়ের অনেকেরই নজর পড়ে তার ওপর। চিত্রপরিচালক শ্যাম বেনেগাল তাদের একজন। তার নতুন ছবি ‘চরণদাস চোর’- এর জন্য তিনি পছন্দ করেন স্মিতাকে।
‘চরণদাস চোর’ ছবিতে রানির ভূমিকায় স্মিতাকে এত মিষ্টি আর আকর্ষণীয় লাগছিল যে, বেনেগাল যখন স্মিতাকে নিয়ে আর একটা ছবি বানানোর প্রস্তাব দিলেন বিদ্যা পাতিল- স্মিতার মা আর না বলতে পারলেন না। শুরু হলো স্মিতার নতুন ছবি ‘নিশান্ত’। নিশান্ত, স্মিতার দ্বিতীয় ছবি।

‘ভূমিকা’ ছিল স্মিতাকে নিয়ে শ্যাম বেনেগালের তৃতীয় ছবি। এই ছবি স্মিতাকে সর্বভারতীয় পরিচিতি এনে দেয়। প্রথমবারের মতো স্মিতা সেরা অভিনেত্রীর রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভুষিত হন। এরপর থেকেই বলিউডের মুলধারার ছবি তথা কমার্শিয়াল ছবিতে অভিনয়ের অফার আসতে শুরু হয়।
শুরুতে স্মিতার বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলিউডের কমার্শিয়াল ছবির চটুল সংলাপ আর উত্তেজক পোষাকের সাথে খাপ খাওয়াতে। সুড়সুড়ি দেওয়া নাচের পোজ তো ছিলই। তবে তার তুমুল পেশাদারীত্ব খুব দ্রুত তাকে সাহায্য করেছে এ সবের সাথে মানিয়ে নিতে। শুরু হয় বাণিজ্যিক ছবিতে স্মিতার অভিনয়। যা ছবিতে আসবে কাহিনির দাবিতে তা নিয়ে স্মিতার কোনো জড়তা কখনও ছিল না। কিন্ত যার উপযোগিতা শুধুই মনোরঞ্জনে, নিছক পুরুষের রিপুর তৃপ্তিতে, যা নারীর জন্য অবমাননাকর, নারীকে যা চিত্রিত করে অধঃপতিত হিসাবে তা তিনি কখনও মেনে নেননি।

স্মিতা পাতিল ১৯৮৬ সালের আজকের দিনে (১৩ ডিসেম্বর) মুম্বাইতে মৃত্যুবরণ করেন।

Be First to Comment