Press "Enter" to skip to content

তখন কে জানত, বিভিন্ন সময়ে লেখা চিঠিগুলোই এক সময় অমূল্য সম্পদ হয়ে যাবে! সম্পদ, ঐতিহাসিক দিক থেকে, সাহিত্যগুণের দিক থেকেও। কারণ, চিঠিগুলি লিখেছিলেন তরু দত্ত…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ তরু দত্ত

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘চিঠির সঙ্গে তরুলতা গাছের পাতা ও একটা ছোট ফুল পাঠালাম।’— ১২, মানিকতলা স্ট্রিটের বাড়িতে বসে ইংরেজিতে চিঠিটি লিখেছিলেন ১৮ বছরের তরুণী। আরও একটি চিঠিতে দেশে ফেরার প্রসঙ্গে ওই তরুণী লিখেছিলেন, ‘‘হয়তো কোনও একদিন ফিরব। হয়তো আর কোনওদিনই ফেরা হবে না!’’

তখন কে জানত, বিভিন্ন সময়ে লেখা চিঠিগুলোই এক সময় অমূল্য সম্পদ হয়ে যাবে! সম্পদ, ঐতিহাসিক দিক থেকে, সাহিত্যগুণের দিক থেকেও। কারণ, চিঠিগুলি লিখেছিলেন তরু দত্ত। প্রথম বাঙালি মহিলা, যিনি ফরাসি ও ইংরেজি এই দুই ভাষাতেই লেখার জন্য এখনও আলোচিত। ফরাসি ও ইংরেজিতে তাঁর ব্যুৎপত্তি রীতিমতো বিস্ময়ের, বলছেন গবেষকেরা!

মাইকেল মধুসূদন দত্ত যদি বিদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনার জন্য বাঙালি হিসেবে অগ্রণী পুরুষ হন, মেয়েদের মধ্যে ছিলেন তরু। বেঁচে ছিলেন মাত্র ২১ বছর। কিন্তু স্বল্পায়ু জীবনে যা যা কিছু করেছিলেন, তা এখনও বিস্ময়ের উদ্রেক করে গবেষকদের।

১২, রমেশ দত্ত স্ট্রিট, অতীতে যা ১২, মানিকতলা স্ট্রিট নামে পরিচিত ছিল, ওই বাড়িতেই থাকতেন তরু দত্ত। রামবাগানের বিখ্যাত দত্ত পরিবারের বাড়ি বলেই পরিচিত ছিল সেটি যদিও সে ইতিহাস বিস্মৃত হয়েছেন অনেকেই।

শুধু ১২, রমেশ দত্ত স্ট্রিটের হাজার বর্গফুট জায়গায় বেলেপাথরের মেঝে, কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ঘেরা রয়েছে তরুর নিজস্ব ভুবন। তরু যেখানে বসে পড়তেন, সেই লাইব্রেরি বর্তমানে রয়েছে ওই বাড়ির দোতলায়।

ইতিহাস বলছে, তরুরা ছিলেন তিন ভাইবোন। সকলেই ছিলেন স্বল্পায়ু। তরুদের বাবা গোভিনচন্দ্র দত্ত ছিলেন সমসাময়িক বিশিষ্ট বাঙালিদের এক জন। পাশ্চাত্য দর্শনে বিশ্বাসী গোভিন খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। সাহিত্যেও অনুরাগ ছিল তাঁর। বাবার সাহিত্য তথা কবিতাপ্রীতিই সঞ্চারিত হয়েছিল তরু ও তাঁর ভাইবোনের মধ্যে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে একমাত্র ছেলে অবজুর মৃত্যুর পরে ১৮৬৯ সালে দত্ত পরিবার পাড়ি দেয় ইউরোপের উদ্দেশে।

১৮৭০ সালে পরিবারের সঙ্গে ফ্রান্সে পৌঁছন তরু। সেখান থেকে ব্রিটেনে। সেখানে পা দিয়েই তরু প্রথম কবিতা অনুবাদ শুরু করেন। গোভিন এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘তরু অনেক পড়াশোনা করেছে, কিন্তু তাঁর থেকেও মনে হয় সে বেশি ভাবে!’’

ইউরোপে থাকাকালীনই তরু ফরাসি সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে নিমগ্ন হয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। ১৮৭৪ সালে বোন অরুর মৃত্যুর পরে তরু আরও পড়াশোনায় ডুবে যান। ফরাসি সাহিত্যে অল্পবয়সি মেয়ের সাবলীলতা দেখে পরবর্তী কালে কবি-সমালোচক এডমন্ড গস লিখেছিলেন, ‘তরু ওয়াজ় আ বেটার ফ্রেঞ্চ দ্যান ইংলিশ স্কলার’।

বিদেশ থেকে ফের বাবা-মা’র সঙ্গে কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন তরু। এখানে এসে সংস্কৃত সাহিত্য নিয়ে উৎসাহী হয়ে পড়েন। লাইব্রেরি-ভর্তি বই জমতে থাকে।

তরুলতা গাছটা আর নেই, তরু দত্ত রয়েছেন, তাঁর স্মৃতি এখনও রয়েছে রমেশ দত্ত স্ট্রিটে!

মারা যান ১৮৭৭ সালের ৩০ অগস্ট কলকাতাতেই।

তরু দত্ত ১৮৫৬ সালের আজকের দিনে (৪ মার্চ) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.