শ্রীজিৎ চট্টরাজ: কলকাতা, ৮ অক্টোবর ২০২১। সৈয়দ মুজতবা আলি বলেছিলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতে কথা ও সুরের সম্পর্ক যেন মাছ আর মাছের ঝোলের মত।তেমনই বাংলার পুজো বা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে শঙ্খধ্বনি ও ঢাকের সম্পর্ক। তাছাড়া প্রবাদ বাক্যে ঢাক নিয়ে কোনও ঢাক গুড়গুড় নেই। অসংখ্য প্রবাদের ছড়াছড়ি।নিজের ঢাক নিজে পেটাও, ধর্মের ঢাক আপনি বাজে আরও কত শত। বিশ্বে ভারতীয় তাল বাদ্যের প্রসার ও প্রচারে বিক্রম ঘোষ বঙ্গ তনয় হিসেবে আমাদের গর্বিত করে।
বাদ্যযন্ত্রের তালিকায় তবলা,মৃদঙ্গ,পাখোয়াজ,
এমনকি ঢোল যতটা সমাদৃত সে তুলনায় ঢাক যেন ব্রাত্যজন। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা নয়।
বাংলার ভূমিপুত্র লোকশিল্পীর হাতের বোলের জাদুতে যদি না বাঙালি মেতে ওঠে পুজোই মাটি। দেবীর বোধনই হবে না। শাস্ত্রমতে যা ভীমবাদ্য নামে পরিচিত। কালিকাপুরাণ মতে দেবীর বোধন মন্ত্রে স্নানপর্বে সাত রকমের জলের বিধান আছে। ভৈরব রাগে গান সঙ্গে ভীমবাদ্য। এই নিদানে দেবীর স্নানে সাগর জল ব্যবহৃত হয়।
অথচ রুটি রুজির প্রশ্নে লোকশিল্পী ঢাকি সারা বছর অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। পুজো পাবনেই ডাক পড়ে।ফি বছর তাই কলকাতা আসেন পরিবার ছেড়ে দু পয়সা উপরি রোজগারের আশায়।বিজয়ার পর পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে মজুরি আর গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঢাকি বিদায়ের পয়সাটুকু সম্বল করে ঘরে ফেরে ঢাকি।পুজোয় আমরা যখন মাতি,ঢাকি র ঘরে আঁধার।
যদিও আজকাল মেয়ে ঢাকিদের কদর হয়েছে। হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশনে মহালয়ার পর থেকে ঢাকিরা জড়ো হয়ে সীতার অগ্নিপরীক্ষা দেন ঢাক বাজিয়ে। পুজোর উদ্যোক্তারা ঢাকির মুন্সিয়ানা বিচার করে বায়না দেন। খালি পেটে হাসি মুখে গতরের সবটুকু শক্তি দিয়ে ঢাকিরা প্রাণপণ ঘাম ঝরান। বায়না পেতেই হবে। খালি হাতে বাড়ি ফিরবেন কি করে?
ইতিহাস বলছে,বঙ্গে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকে ঢাকের অস্তিত্বের তথ্য আছে।১৩ শতাব্দীর ধর্ম পূজার গ্রন্থ শূণ্য পুরাণে ৪২রকমের বাদ্য যন্ত্রের তালিকায় ঢাকের তথ্য আছে।
ম্যাস্ত্রো বিক্রম ঘোষ তাই গান বেঁধেছেন ঢাকের ছন্দে।কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা
যেমন মুম্বাইয়ের প্রবাসী বাঙালি অমিত কুমার, শান তেমনই দক্ষিণের কিংবদন্তি শিল্পী হরিহরন। আছেন মহালক্ষ্মী আয়ার, আসামের জুবিন গর্গ। বাংলার কৌশিকী চক্রবর্তী।
গত ৬ অক্টোবর মহালয়ার দিনে পূর্ব কলকাতার এক সাততারা বিলাসবহুল হোটেলে আয়োজিত ঢাকোৎসবের মঞ্চে চালতা বাগান লোহাপট্টি সার্বজনীন এর সৌজন্যে প্রকাশ করলেন ঢাক শিল্পের প্রসারে উৎসর্গীকৃত গান আজ বাজা তুই ঢাক।
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অভিনেতা শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায় সহ বিশিষ্ট মানুষজন। বিক্রম ঘোষের উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।
Be First to Comment