————–জন্মদিনে স্মরণঃ বব ডিলান———–
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, পাঁচ দশক ধরে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ধারার সঙ্গীতের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত বব ডিলন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। বব ডিলন একাধারে গায়ক, গীতিকার, লেখক, সুরকার, কবি, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা ও ডিস্ক জকি। তাঁর আসল নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান ও ইহুদী নাম শাবতাই জিসেল বেন আভ্রাহাম। বড় হন ডুলুথ ও হিবিং এলাকায় লেক সুপিরিয়রের পার্শ্ববর্তী মেসাবি আয়রন রেঞ্জ এলাকায়। ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটাতে ভর্তি হন। অ্যাকুস্টিক গিটার ব্যবহৃত হয় এমন গানে তার ঝোঁক ছিল বেশি। ইউনিভার্সিটির মার্ভিন কার্লিন্সের কাছে গিটার প্রশিক্ষণ নেন। ১০ ও’ক্লক স্কলার নামের একটি কফি হাউজে গান গাইতে শুরু করেন। স্থানীয় ডিঙ্কিটাউন ফোক সঙ্গীত ঘরানায়ও সক্রিয় ছিলেন। এ সময় ডিলন থমাসের কবিতার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। এরপর “বব ডিলন” নামটি গ্রহণ করেন।
বব তরুণ বয়সে বেশি শুনতেন ব্লুজ ও কান্ট্রি সং। ধীরেধীরে রক এ্যান্ড রোলের দিকে ঝুঁকে পড়েন। হাই স্কুলে পড়াকালে কয়েকটি ব্যান্ড গঠন করেন। প্রথম ব্যান্ড ‘দ্য শ্যাডো ব্লাস্টার্স’ বেশিদিন টেকেনি। পরে করেন ‘দ্য গোল্ডেন কর্ডস’। এটাও বেশিদিন ঠেকেনি। ববের শ্রেষ্ঠ কাজের মধ্যে অনেকগুলো ১৯৬০ এর দশকে রচিত। এ সময়কালের আমেরিকান অস্থিরতার প্রতীক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তাঁর গানে উঠে আসে রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্য। গানের মাধ্যমে প্রচলিত কাঠামোর বিরোধিতা করেন। তাঁর গানে বিচিত্র সব ফর্ম উঠে এসেছে। এতে আমেরিকান লোকগীতি ও কান্ট্রি/ব্লুজ থেকে রক অ্যান্ড রোল, ইংরেজ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ সঙ্গীত, সুইং, ব্রডওয়ে, হার্ডরক এবং গসপেলও আছে। ১৯৮০ এর দশক থেকে বব ডিলন অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। তার ভাষায় এটি ছিল ‘নেভার এন্ডিং ট্যুর’।
তার রয়েছে ৩৫টি স্টুডিও অ্যালবাম, ৫৮টি সিঙ্গেলস, ১১ লাইভ অ্যালবাম, দ্য বুটলেগ সিরিজের ১০টি অ্যালবাম ও ৩০টি মিশ্র অ্যালবাম। এ ছাড়া তিনটি হোম ভিডিও, একটি বায়োগ্রাফি ও একটি ফিল্মোগ্রাফি। বিশ্বব্যাপী বব ডিলনের ১০ কোটিরও বেশি এ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। তাকে ধরা হয় সর্বকালের সবচেয়ে বেশি অ্যালবাম বিক্রিত শিল্পীদের একজন। বব ডিলন-এর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- বব ডিলন, দ্য টাইমস দে আর এ-চেঞ্জিং, ন্যাশভিল স্কাইলাইন, সেলফ প্রোট্টেট, প্যাট গ্যারেট অ্যান্ড বিলি দ্য কিড, ডিজায়ার, ডাউন ইন দ্য গ্রোভ, গুড অ্যাস আই বিন টু ইউ, টাইম আউট অব মাইন্ড, লাভ অ্যান্ড থেফ্ট , টুগেদার খ্রু লাইফ, ক্রিসমাস ইন দ্য হার্ট এবং টেম্পেস্ট। বব ডিলনের কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ক্রনিকলস (আত্মজীবনী), বব ডিলন : দ্য এসেন্সশিয়াল ইন্টারভিউ এবং দ্য বব ডিলন স্ক্যাপবুক (১৯৫৬-১৯৬৬)। তাঁর আঁকা ছবি নিয়ে অনেকগুলো প্রদর্শনীও হয়েছে। তিনি ১১টি গ্রামি এ্যাডওয়ার্ড, ১টি গোল্ডেন গ্লোব ও ১টি একাডেমি এ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন। টাইম ম্যাগাজিনের বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। ২০০৪ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন প্রকাশিত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ গায়ক তালিকায় দ্য বিটলসের পর দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেন। ৭৮ বছর বয়সী বব ডিলন ছয় শো’র বেশি গানের রচয়িতা এবং ১১ বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী। সরকারি বর্ণনায় তাঁকে উল্লেখ করা হয় ‘বিশ শতকের আধুনিক সংগীতের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পী’ হিসেবে।
২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর সুইডিশ একাডেমী তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি পৃথিবীর প্রথম গীতিকার যিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
বব ডিলন ১৯৪১ সালের আজকের দিনে (২৪ মে) যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার ডুলুথে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment