Press "Enter" to skip to content

জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রাণপুরুষ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে আধুনিকতার স্পর্শ ছিল না। তিনি সকলের কবি নন, কারো কারো কবি…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ জীবনানন্দ দাশ

‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে।’

বাবলু ভট্টাচার্য : সত্যানন্দ দাশ (১৮৬৩-১৯৪২) সম্পাদিত ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় কুসুমকুমারী দাশের (১৮৮২-১৯৪৮) ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। আসলে কুসুমকুমারী দাশের ঘরেই ছিল সেই ‘আদর্শ ছেলে’। গম্ভীর স্বল্পবাক জীবনানন্দ দাশ, ডাকনামে ‘মিলু’ ছিলেন সত্যানন্দ দাশ ও কুসুমকুমারী দাশের জ্যেষ্ঠ সন্তান।

জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। জীবনানন্দ মাতা কুসুমকুমারী দাশ ‘প্রবাসী’ ও ‘মুকুল’ পত্রিকায় তাঁর প্রায় সত্তরটি কবিতা প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সময়চিত্র অবলম্বনে রচিত এই কবিতাবলী কিশোর জীবনানন্দকে উৎসাহিত করে কবিতা লেখার প্রতি।

পিতা সত্যানন্দ তাঁর সন্তানকে নিজের মতো করে মানুষ করতে চেয়েছিলেন; শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন নিজের তত্ত্বাবধানে। এজন্য বেশ দেরি করে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল জীবনানন্দকে। ১৯১৫ সালে বরিশাল বজ্রমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯১৭ সালে প্রথম বিভাগে আই এ পাশ করার পর ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি এ পাস করেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার – শিল্পী সনাতন দিন্দা।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য জীবনে আত্মপ্রকাশ ছিল ‘আধুনিকতা’ বহির্ভূত। ১৯২৬ সাল থেকে তিনি দীনেশরঞ্জন দাস সম্পাদিত ‘কল্লোল’, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কালি-কলম’, বুদ্ধদেব বসু ও অজিত কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘প্রগতি’ পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা প্রকাশ শুরু করেন।

যদিও জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রাণপুরুষ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে আধুনিকতার স্পর্শ ছিল না। ১৯২৭ সালে ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয়।

জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। মূলত এতেই প্রথম ব্যাপকাকারে আধুনিকতার স্ফুরণ ঘটে তাঁর। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্রে তিনি লিখিছিলেন দীর্ঘ একেকটি কবিতা। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারেন নি।

জীবনানন্দের মৃত্যুর পর ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থের সবগুলো কবিতাই তাঁর জীবৎকালে অপ্রকাশিত ছিল। এবং মৃত্যুর পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ এবং ‘রূপসী বাংলা’র মধ্যে এক নিগূড় যোগসূত্র রয়েছে। এখানে কবির গভীর স্বদেশপ্রীতি এবং ব্যক্তিগত প্রেমময় স্মৃতি প্রকটে প্রকাশ পায়।

জীবনানন্দের দাশের সবচেয়ে পরিচিত কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’ প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালে। এ কাব্যগ্রন্থে জীবনানন্দের সময়বোধের নতুন ধারণা গভীরভাবে লক্ষনীয়। ‘বনলতা সেন’-এ এসে তিনি অকপটে প্রকাশ করেছেন ইতিহাস ও কালসচেতনতা।

জীবনানন্দ দাশ সত্যিকার অর্থে একজন আধুনিক কাব্যস্রষ্টা ছিলেন। এবং তিনি সফল প্রয়োগ করেছিলেন ‘আধুনিকতাবাদ’-কে তাঁর কবিতায়। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে- এ সকল কবিতা যে ভাবাদর্শ থেকে উৎসারিত, তা তাঁর মৌলিক চেতনালব্ধ নয়।

জীবনানন্দ দাশ, শুদ্ধতম-মহত্তম কবি, যাঁর কবিতা সৃষ্টি করেছে একক পরিধিস্থ বৃত্ত। যেখানে সকলে প্রবেশ করতে পারে না। আবার যে কেউ-ই সৃষ্টি করতে পারে না জীবনানন্দকে অনন্য কাব্যশৈল্যে। তিনি নিজেই বলেছিলেন-

“সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।”

সম্ভবত এজন্য, জীবনানন্দ দাশ; সকলের কবি নন, কারো কারো কবি।

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের আজকের দিনে (১৭ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.