Press "Enter" to skip to content

জাপান আত্মসমর্পণ করতে দেরী করায় আমেরিকা, জাপানকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে ৯ই আগস্ট নাগাসাকি তে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে। নিমেষে ঝরে গিয়েছিল প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ………..

Spread the love

——আজ ঐতিহাসিক নাগাসাকি দিবস—-

বাবলু ভট্টাচার্য : ৯, আগস্ট, ২০২০। আজ থেকে ৭৪ বছর আগের ঘটনা। এই দিনটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে জাপানের হিরোশিমা শহরে ‘লিটল বয়’ এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে ‘ফ্যাটম্যান’ নামের পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে সারা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। এই চরম নিষ্ঠুরতা দেখে যেন মুহূর্তের মধ্যে থমকে গিয়েছিল গোটা পৃথিবী। কিন্তু এতো ধ্বংসযজ্ঞ, রক্তপাত, পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কখনো অনুতাপ করেনি।হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবসের আলোচনা করতে গেলে একটু পেছনে নজর দিতে হবে। ১৯১৮ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফার্ডিনান্ড সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া, সার্বিয়াকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে৷ শুধু দায়ী করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, হত্যাকাণ্ডের মাত্র এক মাস পর অর্থাৎ ২৮ জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ স্বাভাবিক কারণেই দু’দেশের বন্ধু দেশগুলোও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ৷

অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, তুরস্ক, জামার্নীকে নিয়ে কেন্দ্রীয় শক্তি এবং সার্বিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া, বৃটেন, জাপান, ইতালি ও আমেরিকাকে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্র শক্তি। এ যুদ্ধে জার্মানীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী পরাজিত হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ৷ ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অবশেষে ১৯১৯ সালের ১০ জানুয়ারী ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়৷ দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে ৮৫ লক্ষ মানুষ নিহত এবং ২ কোটি ১০ লক্ষ লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়৷ এ যুদ্ধ শেষ হবার মাত্র বিশ বছর পর আবারো বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা৷ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অপমান আর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানী পোলান্ড আক্রমণ করে এই যুদ্ধর সূচনা করে। এই যুদ্ধে জাপান জার্মানীর পক্ষে অবস্থান নেয়। জার্মানী, ইতালি, জাপান, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠে অক্ষশক্তি। অপরদিকে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, নরওয়ে ও ডেনমার্ককে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্রশক্তি। টানা ৬ বছরের যুদ্ধে জাপান, জার্মান ও ইতালীর নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি পরাজিত হয়। তবে জাপান আত্মসমর্পণ করতে দেরী করায় আমেরিকা, জাপানকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দেয়।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। মার্কিন বোমারু বিমান বি-টুয়েন্টি নাইন ইনোলা গে ‘লিটল বয়’ নামে একটি পারমাণবিক বোমা নিয়ে হিরোশিমার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ওই দিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে প্লেন থেকে বোমাটি নিচের দিকে নিক্ষেপ করা হলে হিরোশিমা শহর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার ওপরে সেটি বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে শহরটির প্রায় ৬০ ভাগ ধবংসস্তুপে পরিণত হয় এবং নিহত হয় ৭৫ হাজার মানুষ। হিরোশিমার এ ভয়ঙ্কর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র তিনদিন পর তিনিয়ন দ্বীপ থেকে বি-টুয়েন্টি নামে একটি বিমান দ্বিতীয় বোমাটি নিয়ে নাগাসাকির উদ্দেশে রওনা হয়। এ বোমাটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘ফ্যাটম্যান’। বোমাটি ছিল গোলাকার প্লুটোনাম ক্ষেপনাস্ত্র। নাগাসাকি শহরে ৯ আগস্ট বেলা ১১টা ২ মিনিটে বোমাটি মাটি থেকে ৫০০ মিটার উপরে বিস্ফোরিত হয়। নিমেষে ঝরে গিয়েছিল প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার প্রাণ। আহত হয় আরো ৭৪ হাজার মানুষ। বোমার তেজস্ক্রিয়তায় শিশুদের মাথার চুল পর্যন্ত উঠে যায়। শিশুরা খাওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে। আর বোমার আঘাতে আহতরা দীর্ঘদিন কষ্ট ভূগতে ভূগতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

১৯৫০ সাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছে।

প্রতিবছর ঐ ঘটনাকে স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবস।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.