স্মরণঃ জহর রায়
বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে জহর রায় এক কিংবদন্তি শিল্পী। তিনি মূলত একজন কৌতুক অভিনেতা হিসাবেই বেশী পরিচিত। তাঁর অভিনীত প্রতিটি সিনেমাতে যেভাবে হাস্যরস পরিবেশিত হয়েছে তা এককথায় অসাধারন। ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ বাংলাদেশের বরিশালে জহর রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সতু রায় ও রঙ্গমঞ্চ এবং চিত্রজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জহর রায় ১৯৩৮ সালে নারকেলডাঙ্গা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি পাটনা থেকে আই এ পাশ করেন এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রুফ রিডিং এর কাজে নিযুক্ত হন। এই সবকিছুর মধ্যেই তিনি তাঁর অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। জহর রায় ১৯৪৬ সালে কলকাতায় আসেন এবং অর্ধেন্দু মুখার্জীর পরিচালিত ‘পূর্বরাগ’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। এরপর বিমল রায় পরিচালিত ‘অঞ্জনগড়’ সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৫৩ সালে জহর রায় রংমহল নাট্যমঞ্চে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে নাটক নির্দেশনা শুরু করেন। তিনি এককভাবে এবং অজিত চ্যাটার্জীর সাথে যৌথভাবে বেশ কিছু কৌতুক রেকর্ডও করেছেন। জহর রায় অভিনীত অগনিত সিনেমার মধ্যে ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’, বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ‘পরশ পাথর’ চলচ্চিত্রটিতে তিনি তুলসী চক্রবর্তীর চাকরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। যদিও চরিত্রটি খুবই ছোট ছিল তবে তাঁর অভিনয়ের গুণে সেটিও মানুষের মনে যায়গা করে নিয়েছিল। এমনকি ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রে কূট মন্ত্রণাদায়ী ষড়যন্ত্রী মন্ত্রীর ভূমিকাতেও অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ‘ছদ্মবেশী’ চলচ্চিত্রে তিনি একটি গানও গেয়েছেন। তাঁর অভিনয় জীবনের শেষের দিকে তিনি ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ তে অতিথি শিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
জহর রায় অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহঃ ‘পুর্বরাগ’, ‘অঞ্জনগড়’, ‘ডাকিনির চর’, ‘উল্কা’, ‘পরশ পাথর’, ‘রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘অতল জলের আহবান’, ‘পলাতক’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘অভয়া ও শ্রীকান্ত’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘নায়িকা সংবাদ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘নীশিপদ্ম’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মর্জিনা আবদুল্লা’, ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’, ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘ছুটির ফান্দে’ প্রভৃতি।
জহর রায় ১৯৭৭ সালের আজকের দিনে (১১ আগস্ট) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment