Press "Enter" to skip to content

” জল বসন্ত / চিকেন পক্স “….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দোপাধ্যায় : কলকাতা, ১৮ আগস্ট, ২০২৪।
ভেরিসেলা জোস্টার ( VZV) নামের একরকম ভাইরাস থেকে এই রোগটি হয় ৷ যেকোন বয়সে হলেও চার থেকে দশ
বছর বয়সী বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মূলত স্কুলে সংস্পর্শে এই কষ্টদায়ক অত্যন্ত ছোঁয়াচে বায়ু বাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয় ৷ সবচেয়ে বেশি হয় বসন্ত কালে অর্থাৎ না ঠান্ডা না গরম এই সময়ে বলে এর নাম হয়েছে বসন্ত ৷ বসন্তের আরেক মারাত্মক প্রকার স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্ব থেকে বিদায় ( Eradication) নিলেও বসন্তের এই প্রকার অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক জল বসন্ত ( Chickenpox) এখনও পৃথিবীর অনেক দেশে ভালোভাবেই জাঁকিয়ে রয়েছে ৷ বুক , পিঠ ও মুখে শুরু হয়ে সারা গায়ে ছড়ায় ৷ ভাইরাস ভিতরে প্রবেশের ১০ থেকে ২১ দিন ( ইনকিউবেশন পিরিয়ড) পরে গায়ে শিশির বিন্দুর ( Dew drop) মত দানা ওঠে ৷ ছোট দানা ( Papule) থেকে জল ভরা Vesicle হয় ৷ যা থেকে সপ্তাহ খানেক বাদে ছাল ( Scab ) ওঠে ৷মুখের ও তালুর মিউকাস মেমব্রেন বা ঝিল্লীতে এবং শরীরের জল গুটি ও ফোস্কা বা ভেসিকল দেখে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা সহজেই সনাক্ত করতে পারেন ৷ গুটির মধ্যেকার জল ও রক্তে ইমিউনোজেনিক প্রতিক্রিয়া নির্ণয়ে আরো নিশ্চিত হওয়া যায় ৷হাঁচি , কাশি , মাথার যন্ত্রণা , জ্বর , গায়ে ব্যথা , পাতলা পায়খানা হয় ৷এলোপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যথা ও জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া হয় ৷ এসপিরিন প্রয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ৷ তাতে চোখ লাল হয়ে যাওয়া , লিভার ও মস্তিষ্কের কিছু সমস্যা হতে পারে ৷ চুলকানি কমাতে এন্টিহিস্টামিন ওষুধ সেটরিজিন -১০ মিগ্রা বা লিভোসেট্রিজিন -৫ মিগ্রা দিতে হতে পারে ৷ লক্ষণ আরম্ভের
সময়ে এসাইক্লোভির ( Aciclovir – প্রাপ্তবয়স্কদের চারশো মিগ্রা দিনে ৫বার )জাতীয় এন্টি ভাইরাল প্রয়োগ করতে পারলে গুটি কম হয় ৷ তবে প্রচুর জল খেতে হয় ৷ সরিভুডিন নামের একটি ভেরিসেলা ভাইরাস প্রতিরোধীর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৷ এটা কাজে আসবে ৷ ১৮৭৫ সালে বিজ্ঞানী রুডলফ স্টেইনার প্রথম রোগটি সংক্রামক প্রমাণ করলেও এই ভাইরাস প্রতিরোধে ১৯৭৪ সালে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত করতে সময় লেগেছে ৷ ভ্যারিসেলার ওকা প্রজাতি থেকে জাপানী বিজ্ঞানী মিচিহাকি তাকাহাসি এটা আবিষ্কার করেন ৷ যা আমাদের দেশেও পাওয়া যায় ৷ শিশুদের এক থেকে দেড় বছরে প্রথম ডোজ ০.৫ মিলি ইন্ট্রাডারমাল ( চামড়ার নিচে) দেওয়া
হয় ৷ চার থেকে ছ’বছরে দ্বিতীয় ডোজ আবার কেউ কেউ প্রথমটির ছ’মাস বাদে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেন ৷ ১২ বছরের বেশি যেকোন বয়সে চার সপ্তাহের ব্যবধানে দু বার একই মাত্রায় টিকা দেওয়া হয় ৷ টিকা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে গর্ভধারণ করতে নিষেধ করা হয় ৷ অথচ , গর্ভবতীর জল বসন্ত আক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম ৬ মাস এবং শেষ তিন মাসের জন্য ভয়ানক বিপদ আনতে পারে ৷ তবে , গর্ভবতীর আগে টিকা নেওয়া থাকলে এন্টিবডি প্লাসন্টা পেরিয়ে ভ্রুণের রক্তে প্রবেশ করায় চিন্তা থাকে না ৷ এইডস ও বোনম্যারো প্রতিস্থাপিত রোগীদের HVZIG( Human Varicella Zoster Immunoglobulin) দিতে হয় ৷ চিকেন পক্সের ভাইরাস থেকে হারপিস জোস্টার বা জোনাও হয় ৷ চিকেন পক্স বায়ুবাহিত বলে আটকানো কঠিন ৷ তবু , আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কিছুটা দূরে থেকে , মুখে মাস্ক বাঁধলে সংক্রমণ ছড়ানো কম হতে পারে ৷ রোগীর জিনিসপত্র আলাদা করতে হয় ৷ পরিষ্কার , বায়ু চলাচল করে এমন ঘরে রোগীকে রাখা উচিত ৷ রোগীর শ্বাস ও হাঁচি -কাশি , কথা বলার সময় মুখ থেকে বের হওয়া ছোট ছোট লালা বিন্দু বা ড্রপলেট রোগ ছড়াতে পারে ৷ ১০ থেকে ২১ দিনের রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হন ৷১৯৯০ সালে সারা বিশ্বে এ রোগে ৮৯০০ জন মারা গেলেও স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ২০১৫ সালে সংখ্যাটি ৬৪০০ জনে দাঁড়িয়েছে ৷ চলতি বিশ্বাস এ রোগ হলে বাড়ীতে কেউ আমিষ খাবেন না ৷ যদিও , চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এসময় রোগী ও বাড়ীর লোকের ঠিকমত হজম হলে বেশি করে আমিষ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার ৷ যাতে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হয় ৷ সাধারণ ভাবে স্নান করা যায় ৷ ডাবের জলে স্নানের দরকার নেই ৷খাওয়া ভাল ৷ দই , নানারকম ফল , সেদ্ধ সব্জি খেতে হয় ৷ নিম উপকারী হলেও নিম পাতার বাতাস দেওয়ার কার্যকারিতা প্রমাণিত নয় ৷ বরং পাতার ও ডালের ঝাপটায় ফোস্কা ফেটে জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে ৷ কেউ কেউ রোগীকে আয়নায় মুখ দেখতে বারণ করে ৷ এতে Rash বেড়ে যাবে এসব অবৈজ্ঞানিক ধারণা ৷ রোগীকে বালিশ ব্যবহার করতে বারণ করাও একই রকম ৷বেশি করে জল বা তরল পান দরকার যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে ৷ নরম সূতির কাপড় পরতে হবে ৷ ছোট করে নখ কাটতে হবে ৷যাতে না ছড়ে যায় ৷ চিকেন পক্সের জ্বালা কমাতে ক্যালামাইন জাতীয় লোশন বা বেকিং সোডা পেস্ট বা হাইড্রোকর্টিজোন ক্রিম এবং পরে দাগ দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শ মত লোশন বা ক্রিম মাখা যেতে পারে ৷ জটিলতা হিসাবে পরে যাতে নিউমোনিয়া বা এনসেফেলাইটিসের মত মস্তিষ্কে সংক্রমণ না হতে পারে নজর রাখা উচিত ৷ ধূমপায়ীদের মধ্যে যার আশঙ্কা বেশি ৷ সে ক্ষেত্রে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হলে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় ৷ শত বছর ধরে হোমিওপ্যাথি এ রোগে বিশেষ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ৷ ভ্যারিওলিনাম ও ম্যালনড্রিনাম -২০০ শক্তি রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় দেওয়া হয় ৷ সাথে লক্ষণ অনুসারে অন্য ওষুধ এন্টিম টার্ট , ডালকামরা , রাস টক্স , সালফার , ক্যালি মিউর ইত্যাদি দিতে হয় ৷ এতে রোগের প্রাদুর্ভাব কাল ও জটিলতা কমে ৷ আয়ুর্বেদে তুলসি এন্টিভাইরাস , গুলঞ্চর রস ও পাউডার দেওয়া হয় ৷ সজনে ফুলের , আমলকির , ঘৃতকুমারীর রস উপকারী ৷ কিছুদিন হলো আফ্রিকা থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে নতুন এক ধরণের পক্সের মত ভাইরাল রোগ এম পক্স আগে যাকে মাঙ্কি পক্স বলা হত ৷যাতে গ্লান্ড ফোলা , জ্বর থাকে rash এর সঙ্গে ৷আমার লেখা বই পড়ুন ও পড়ান ৷ সবিস্তারে জানুন নানা রোগের কথা ও কাহিনী ৷

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.