Press "Enter" to skip to content

জন স্টুয়ার্ট মিল একাধারে একজন দার্শনিক, লেখক, অর্থনীতিবিদ এবং নৈতিকতা ও রাজনীতি বিষয়ক তাত্ত্বিক…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ জ ন স্টু য়া র্ট মি ল

“রক্ষণশীলতা সর্বদা বোকামি নয়, বরং অধিকাংশ বোকা মানুষই রক্ষণশীল।”

[ জন স্টুয়ার্ট মিল ]

বাবলু ভট্টাচার্য : হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রটিকে কে-না ভালোবাসে? এই হিমুর বাবার পাগলামির কথাও আমাদের সকলেরই জানা। তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে হিমুকে মহামানব হিসেবে গড়ে তুলবেন। মহামানব কি ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তোলা যায়? আপনি না-জেনে থাকলে জেনে নিন, মহামানব তৈরি করা যায়! জন স্টুয়ার্ট মিল-ই তার উদাহরণ।

জন স্টুয়ার্ট মিল একাধারে একজন দার্শনিক, লেখক, অর্থনীতিবিদ এবং নৈতিকতা ও রাজনীতি বিষয়ক তাত্ত্বিক। উনিশ শতকে ইংরেজি ভাষার দার্শনিকদের মধ্যে তার মতো প্রভাব কারোরই ছিল না। তার বই এবং প্রবন্ধগুলোতে যুক্তিশাস্ত্র থেকে শুরু করে অর্থনীতি, জ্ঞানতত্ত্ব, ধর্ম, সমাজ, নৈতিকতা ও রাজনৈতিক দর্শন- সবই ছিল।

‘অ্যা সিস্টেম অব লজিক’, ‘অন লিবার্টি’ এবং ‘ইউটিলিটারিয়ানিজম’ বা উপযোগবাদ হচ্ছে তার শ্রেষ্ঠ কাজ, যেগুলো তাকে তার সময়কার তো বটেই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও একজন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে।

জন স্টুয়ার্ট মিল-এর দার্শনিক হয়ে ওঠা হচ্ছে তার বাবারই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা! যেদিন মিল জন্ম নেন, সেদিনই তার বাবা জেমস মিল ঠিক করে ফেলেন যে তিনি তার ছেলেকে একজন বিখ্যাত দার্শনিক আর চিন্তাবিদ রূপে গড়ে তুলবেন। জেমস নিজেও ছিলেন একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ। ‘দ্য হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ তার বিখ্যাত লেখা।

জন স্টুয়ার্ট মিলের জন্মের পরপরই অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছলতার মুখ দেখেন জেমস। তখন তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আরেক বিখ্যাত দার্শনিক জেরেমি বেন্থামের সাথে। এই দু’জন মিলে ব্রিটেনে ‘ফিলসফিক রেডিক্যাল’ আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং ব্রিটিশদের মধ্যে চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটান।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই আন্দোলন করার পেছনে জেমসের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এই যে তার ছেলে এই অন্দোলন দেখতে দেখতে বড় হবে এবং গোঁড়া চিন্তা বাদ দিয়ে ‘রেডিক্যাল’ চিন্তা-ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হবে। উপরন্তু, জেমস এবং বেন্থাম উভয়েই এই রেডিক্যাল আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে মিলের কথাই ঠিক করে রেখেছিলেন।

মাত্র ৩ বছর বয়সেই জন স্টুয়ার্ট মিলের পড়ালেখার জীবনের হাতেখড়ি হয়। যখন তার বয়স ৮ বছর, তখন তিনি গ্রীক আর ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এরপরই পড়ে ফেলেন নিউটনের ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান। একই সাথে পড়তে থাকেন যুক্তিশাস্ত্র, দর্শন, গ্রীক এবং রোমান ইতিহাস, রাজনৈতিক অর্থনীতি ইত্যাদি। গণিত আর মেটাফিজিক্সেও মিল ছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু এতকিছু একসাথে পড়তে গিয়ে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি তা কিন্তু নয়।

১৮৩৬ সালে মিলের বাবা জেমসের মৃত্যু হয়। ততদিনে মিল একজন পরিপক্ক চিন্তাবিদ যিনি দর্শন নিয়ে কাজ করতে উৎসুক। তিনি জেমস আর বেন্থামের প্রতিষ্ঠিত ওয়েস্টমিনিস্টার রিভিউয়ের পরিবর্তে ‘লন্ডন রিভিউ’ চালু করেন।

বাবার মতো মিলও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কাজ করতেন। অবসরের পরে তিনি কয়েকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেন। প্রথমত, তিনি ব্রিটেনে ১৮৬৬ সালের শ্রম অধিকার আইন রদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেন।

দ্বিতীয়ত, জ্যামাইকাতে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ‘জ্যামাইকা কমিটি’তে যোগ দেন। তৃতীয়ত, ১৮৬৭ সালের রিফর্ম বিল সংশোধনের চেষ্টা করেন এবং ‘ম্যান’ শব্দটির স্থলে ‘পারসন’ ব্যবহার করার প্রস্তাব দেন যেন নারীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য না হয়। তবে এসবের কোনোটিই খুব একটা সাফল্যের মুখ দেখেনি।

মনঃক্ষুণ্ণ মিল ১৮৭০ এর দিকে ফ্রান্সে চলে যান এবং সেখানে টেইলরের কন্যা হেলেন টেইলরের সাথে নিভৃত জীবন যাপন করতে শুরু করেন।

১৮৭৩ সালের ৮ মে জন স্ট্যুয়ার্ট ফ্রান্সে মৃত্যুবরণ করেন।

জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮০৬ সালের আজকের দিনে (২০ মে) ইংল্যান্ড এ জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from LifestyleMore posts in Lifestyle »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.