জন্মদিনে স্মরণঃ আন্তন চেখভ
বাবলু ভট্টাচার্য : আন্তন পাভলোভিচ চেখভ, বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক যিনি ‘আন্তন চেখভ’ নামে সমাধিক পরিচিত।
চেখভ তাঁর সাহিত্যিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যদিও এ থেকে তিনি সামান্যই উপার্জন করতেন। তিনি অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে। তাই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান আসতো তাঁর লেখালেখি থেকে। তিনি বলতেন- ‘ডাক্তারী হল আমার বৈধ স্ত্রী আর সাহিত্য হল অবৈধ প্রেম’।
নাট্যকার হিসেবে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক রচনা করেন। এগুলো হলো- ‘আঙ্কল ভানিয়া’, ‘দ্য সীগাল’, ‘থ্রি সিস্টারস’ এবং ‘দ্য চেরি অরচার্ড’। এই নাটকগুলিতে কোনো সনাতন বাহ্যিক নাট্যক্রিয়া নেই। তবে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টারস, দ্য সীগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে।
১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। তাঁর ছোটগল্পগুলো লেখক, সমালোচক সমাজে প্রভূত সমাদর অর্জন করেছে।
তার পিতা পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ ছিলেন ভোরোনেজ প্রদেশের একজন প্রাক্তন ভূমিদাস কৃষক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও রূঢ়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন চেখভের রচিত কপটতাপূর্ণ চরিত্রগুলো তৈরি হয়েছে তাঁর পিতার আদলে। তবে তার মা জেভগেনিয়া জাকোভলেভনা ছিলেন চমৎকার গল্পকথক।
চেখভের পিতা চেখভ ও তাঁর ভাই নিকোলাইকে গ্রিক স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলটি চলছিল অসফলভাবে এবং দুই বছর পরেই এটি পরিণত হয় তাগানরোগ শরীরচর্চা কেন্দ্রে, যা এখন ‘চেখভ জিমনেসিয়াম’।
স্কুলে চেখভের কৃতিত্ব ছিল গড়পড়তা মানের। পনের বছর বয়সে চেখভকে একই ক্লাসের পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছিল, কেননা তিনি একটি গ্রিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। এই ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে চার্চের ধর্মীয় সমবেত সংগীতে এবং তাঁর পিতার দোকানের কাজে চেখভের নিয়মিত অংশগ্রহণ।
১৮৭৬ সালে একটি নতুন বাড়ি তৈরিতে অনেক বেশি পুঁজি বিনিয়োগের পর চেখভের পিতাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কারাবাস এড়াতে তিনি মস্কোতে পালিয়ে যান। তখন চেখভকে নিজের পড়াশোনার ব্যয় নিজেকেই বহন করতে হতো। এই খরচের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি বেশ কয়েকরকমের কাজ করতেন যার মধ্যে একটি ছিল গৃহশিক্ষকতা। ১৮৭৯ সালে চেখভ স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মস্কোতে তাঁর পরিবারের সাথে যোগ দেন।
শুরুতে চেখভের লেখক হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিলো না। প্রথমদিকের গল্পগুলো তিনি লিখেছিলেন জীবনযাপন ও পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরে তাঁর মধ্যে শিল্পীসুলভ উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্ম নিলে ক্রমে তিনি সাহিত্যচর্চার ভিন্ন রীতি ও প্রবণতার উদ্ভাবন করেন যা আধুনিক ছোটগল্পের বিকাশে বিশেষ প্রভাব রাখে। ১৮৯০ সালের শুরুতে বাস্তবেই রাশিয়ার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেন আন্তন পাভলোভিচ চেখভ।
১৮৯২ সালে চেখভ মস্কোর উপকন্ঠে মেলিখোভো বলে একটি গ্রামের জমিদারী কিনে নেন এবং সেখানে তাঁর সামাজিক কাজকর্ম শুরু করেন। এখানে তিনি নিজের খরচে ডাক্তারখানা, চাষীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনটি স্কুল খোলেন ও একটি পোস্ট অফিস ও টেলিগ্রাফের জন্য সুপারিশ করে তা বহাল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনাঃ ‘ছয় নম্বর ওয়ার্ড’, ‘খোলসের মানুষ’, ‘ইওনীচ’, ‘রাস্প বেরী’ ও ‘গ্রামের ইতিকথা’ নামে ধারাবাহিক লেখা শেষ করেন।
১৯০১ সালের মে মাসে আন্তন পাভলোভিচ ও মস্কো আর্ট থিয়েটারের অভিনেত্রী ওলগা ক্নিপ্পের বিয়ে করেন।
যক্ষা রোগ তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। ১৯০৪ সালের ১৫ জুলাই রাতে তাঁর খুব খারাপ লাগতে থাকে, দেখতে আসা ডাক্তারকে তিনি শান্ত গলায় আত্ম বিশ্বাসের সঙ্গে বলেন- ‘আমি মারা যাচ্ছি’।
আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ১৮৬০ সালের আজকের দিনে (২৯ জানুয়ারি) দক্ষিণ রাশিয়ার তাগানরোগ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment