বাবলু ভট্টাচার্য : চলচ্চিত্র বিষয়ক রচনাতে যাঁর প্রসিদ্ধি সর্বজনবিদিত। সিনেমাকে শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে না ভেবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন ফাদার রোবের্জ। তবে তাঁর মূল পরিচয় বোধহয় এটাই যে তিনি একজন সর্বজনপ্রিয় শিক্ষাবিদ। আজ সকাল ৮-২০ চলে গেলেন ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।অতীত এবং বর্তমানের বহু চলচ্চিত্রকার তাঁর সান্নিধ্যে এসে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। জন্মসূত্রে কানাডিয়ান জেসুইট এই মানুষটি ছয়ের দশকের গোড়ায় কলকাতায় এসে পাকাপাকি ভাবেই হয়ে যান এই শহরের বাসিন্দা।সত্তরের গোড়াতে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সহ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চিত্রবাণী’, যেটা ছিল সম্পূর্ণ অবৈতনিক সিনেমা শেখার পাঠশালা এবং যা কি-না পূর্ব ভারতের সবচেয়ে পুরোনো মিডিয়া ইন্সটিটিউট।
সত্যজিৎ রায় ছিলেন এই প্রতিষ্টানের অন্যতম ফাউন্ডার মেম্বার, এবং ফাদারের তৈরি এই প্রতিষ্ঠানে তাঁর জীবদ্দশাতেই হয়ে ওঠে কিংবদন্তী সমান। ৮৫ বছর বয়েসে আজ সকালে, এই শহরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ফাদার।সিনেমাকে শুধুমাত্র বিনোদন না ভাবা আর সিনেমাকে স্বতন্ত্র একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখার জন্য যে মনন এবং বোধের প্রয়োজন সেটা ৭০-এর দশকে প্রথম চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে সঞ্চারিত করেছিলেন তিনি। ফাদার গাস্তঁ রোবের্জের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ মে। তিনি বিএ ডিগ্রি নেন ১৯৬৫ সালে। যোগ দেন সোসাইটি অফ জেসাস-এ (জেসুইট ফাদারস)। তার অনুরোধেই তাকে ভারতে পাঠানো হয় ১৯৬১ সালে। তখন থেকেই প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি কলকাতায় বাস করছেন।
১৯৬৯-৭০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে থিয়েটার আর্টসে (ফিল্ম) এমএ ডিগ্রি নেন। ১৯৭০ সালে সত্যজিত রায়ের সহযোগিতায় কলকাতায় ‘চিত্রবাণী’ নামে একটি কমিউনিকেশন সেন্টার স্থাপন করেন। ১৯৮৬ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এডুকেশনাল মিডিয়া রিসার্চ সেন্টার চালু করেন। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে তিনি ফিল্ম বিষয়ক শিক্ষাদানের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি ফিল্ম বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তার বইগুলোর মধ্যে-” চিত্রবাণী, ‘সিনেমার কথা’, ‘নতুন সিনেমার সন্ধানে’, ‘সংযোগ সিনেমা উন্নয়ন’, ‘আইজেনস্টাইন’স আইভান দি টেরিবল : অ্যান এনালাইসিস’, ‘এনাদার সিনেমা ফর এনাদার সোসাইটি’, ‘দি সাবজেক্ট অফ সিনেমা’, ‘সাইবারবাণী’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন ‘ওয়ার্কশপ অন মুভিজ টুডে’ শিরোনামের একটি কর্মশালা পরিচালনার কাজে।
শুধুমাত্র সত্যজিৎ রায়কে বুঝবেন বলেই তিনি বাংলা শিখেছিলেন।
Be First to Comment