#রঙীন আ্যন্টাসিডে আছন্ন জনজীবনে হজমিগোলি ও বদহজম প্রতিরোধের হাতিয়ার।#
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ২৩ জুন, ২০২০। সঠিক ও সুষম খাদ্যাভ্যাস একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সঠিক খাদ্য গ্রহন যেমন সুস্থ সবল নীরোগ শরীর গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়, তেমনি অপুষ্টি কর খাদ্যাভ্যাস শরীরে নানা সমস্যা র সৃষ্টি করে। অনিয়মিত খাওয়া, যত্রতত্র খাওয়া, চটজলদি তৈরি মশলাদার খাবার, অপরিস্রুত পানীয় জল পান করা ইত্যাদির জন্য বর্তমানে মোট জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ পেটের নানা ধরণের অসুখে আক্রান্ত। যার প্রধান উপসর্গ বদহজম, গ্যাস, অম্বল। আর এই সমস্ত উপসর্গ উপশমের একটাই ওষুধ আমজনতার হাতের মধ্যেই আছে তা হল আ্যন্টাসিড। বাজার চলতি হজমের বড়ি, আমলকি চূর্ণ-যা স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়, ওষুধের দোকানে র নানা রঙের, নানা আকৃতির আ্যন্টাসিড আমাদের সংগ্রহের তালিকা দীর্ঘ। এই ওষুধ আমরা পাই ওষুধের দোকান দার এর পরামর্শ মতো, নয়তো দোকানে, বাসে, ট্রেনের হকারদের বিক্রি করা বিভিন্ন হজমিগোলি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সব ওষুধ আদতে বদহজমের সমস্যা কে কতটা সমাধান করছে। সাধারণত এগুলো র কোনোটার প্রয়োজন হয়না। আমাদের শরীরের পরিপাক তন্ত্রের প্রতিটি অঙ্গ যদি সুষ্ঠুভাবে কাজ করে তাহলে সবরকম খাদ্য ই ঠিক মতো বিপাক হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত পাকরস, পিত্তথলির পিত্তরস, অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত অগ্নাশয় রস, ক্ষুদ্রান্তের আন্ত্রিক রস বিভিন্ন ধরনের উৎসেচক এ পরিপূর্ণ। যা আমাদের দেহে শর্করা বা কার্বহাইড্রেট, স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট, প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই প্রক্রিয়া য় কোনো জটিলতা তৈরি হয় তাহলে মানবদেহে পরিপাকে ব্যাঘাত ঘটে। তার ই ফলস্বরূপ নানা সমস্যা র সৃষ্টি হয়। তখন, সঠিক রোগ নির্ণয়ে দরকার পরীক্ষা নিরীক্ষা, চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই সহজেই পাওয়া আ্যন্টাসিড নয়। সাধারণ মানুষের এক্ষেত্রে স্বভাব হল, পেটে গ্যাস হচ্ছে, পেট ভার, বুকজ্বালা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি র জন্য নিজেই ওষুধ কিনে টপাটপ খেয়ে ফেলা। কোনো কোনো ব্যক্তি তার বন্ধু র অথবা প্রতিবেশী র পরামর্শে নিয়মিত আ্যসিডিটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেসক্রাইব ওষুধ ও নির্দ্বিধায় খেয়ে ফেলেন। আবার কারনে অকারণে মুড়ি মুড়কি র মতো আ্যন্টাসিড খেয়ে ফেলা ও একপ্রকার অভ্যাস বলা যায়। তাই তাদের এই বিভ্রান্তিকর আচরণের জন্য নানা প্রকার হজমিগোলি হজমিচূর্ণ, মুখরোচক মশলা বড়ি বাজারে দারুণ বিক্রি হচ্ছে। আসলে এগুলো আ্যন্টাসিড বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কোনো বড়ি নয়। অন্য কোনো গাছের ফল বা আচার জাতীয় দ্রব্য, চলার পথে খানিকটা কৌতূহল বশত কিনে ফেলেন। খেতেও ভালো, দাম ও কম, কমলে কমতেও পারে এই যুক্তি তে খেয়ে নিলেও আ্যসিডিটির সমস্যা একি থাকে। বর্তমানে, জনমানসে এগিয়ে যাওয়া র জোয়ার এসেছে। সেই সাথে প্রচুর সুযোগ সুবিধা। কিন্তু মানুষ তার শারীরিক শক্তি, স্ফূর্তভাব, হারিয়ে ফেলেছে, যার প্রধান কারণ গুরুপাক ভোজন, অসময়ে আহার, মানসিক উদ্বেগ, অনিদ্রা। বাস্তবমুখী জীবনে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই। অন্যদিকে, বাজার নানা লোভনীয় ভেজাল খাবারের ঠেলায় গৃহীত খাবার হজম করা দুঃসাধ্য। তখন হজমশক্তি র হাতিয়ার রূপে বাজারে নেমে পরেছে জলজিরা, অম্ল পাচক, হজমোলা, অম্লজিনচূর্ণ, কায়েম চূর্ণ প্রভৃতি। এগুলো র কোনোটাই আ্যসিডিটি বা গ্যাস কে দমন করতে পারে না। এগুলো তে থাকে প্রচুর সোডা ও লবন যা খেলে পেপটিক আলসার, লিভার সমস্যা শুরু হবে। অন্যদিকে, নিজে কেনা আ্যন্টাসিড গুলো বিভিন্ন রসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রনে তৈরি, সেগুলো কার কোনটি কাজে লাগবে কেউ জানে না। ফলে, যখন তখন আ্যন্টাসিড খেলেই যে গ্যাসট্রিক আলসার, ডিওডেনাম আলসার, গ্যাস সহজেই কমবে তা নয়। আয়ুর্বেদ, কবিরাজী, হোমিওপ্যাথি, এ্যলোপ্যাথি, কোনোটাই নিজে নিজে করা যায় না।
তার ফল কখনো ই ভালো হয় না। আ্যসিডিটি, অম্বল, বুকজ্বালা, বদহজমের অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় এর মধ্যে কোনটি আপনার দরকার তা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ই ঠিক করতে পারবেন। তাই আগে জেনে নিন কেন আপনি বদহজমের সমস্যায় জর্জরিত। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খান। রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রেনে বিক্রি হওয়া ওষুধ খেয়ে যদি রোগ ভালো হতো তাহলে পৃথিবীতে চিকিৎসকের প্রয়োজন হতো না। তাই নিজের শরীরের ভালো মন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকুন, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ কিনে খান।
Be First to Comment