Press "Enter" to skip to content

চার বছর বয়সে তিরুত্তানির প্রাইমারি বোর্ড হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয় রাধাকৃষ্ণণকে। তবে শোনা যায়, পড়াশোনার প্রতি তাঁর খুব একটা আগ্রহ ছিল না……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণ

বাবলু ভট্টাচার্য : বঙ্গোপসাগর সমুদ্রোপকূলে মাদ্রাজ শহর। বর্তমান নাম চেন্নাই। এরই অদূরে বায়ুকোণে তিরুত্তানির ছোট্ট মন্দির শহর। এখানকারই তেলুগুভাষী এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয়েছিল সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণের।

তাঁর বাবার নাম ছিল সর্বেপল্লি বীরস্বামী। মায়ের নাম সর্বেপল্লি সীতা (সীতাম্মা)। সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণের বাবা স্থানীয় এক জমিদারের অধীনে স্বল্প বেতনের এক কর্মচারী ছিলেন। আটজনের সংসারে দিন আনা দিন খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল তাঁদের।

চার বছর বয়সে তিরুত্তানির প্রাইমারি বোর্ড হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয় রাধাকৃষ্ণণকে। তবে শোনা যায়, পড়াশোনার প্রতি তাঁর খুব একটা আগ্রহ ছিল না। স্কুল থেকে পালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসতেন। এ দিকে, ছেলে বেজায় বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে রাধাকৃষ্ণণের মা-বাবা তাঁকে ভেলোরের মিশনারি স্কুলে ভর্তি করান।

সমস্ত ছাত্রজীবন জুড়েই রাধাকৃষ্ণণ বৃত্তি পেতেন। প্রথমে ভেল্লোরের একটি কলেজে ভর্তি হলেও পরে বিএ নিয়ে পড়তে ভর্তি হন মাদ্রাজের খ্রিস্টান কলেজে। ভৌতবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অর্থাভাবের কারণে পড়তে পারেননি। তাঁর এক তুতো দাদা তখন ওই কলেজ থেকেই দর্শন নিয়ে পাশ করেছেন। তাঁর পুরনো বইগুলি পাওয়া গেল। তাই রাধাকৃষ্ণণ ভর্তি হলেন দর্শন শাস্ত্র পড়তে।

প্রথম শ্রেণির অনার্স-সহ বিএ ডিগ্রি পেলেন। সেরা ফলের জন্য বৃত্তি পেলেন মাসিক ২৫ টাকা। তখনও এমএ’তে অন্য বিষয় পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তা হলে মাসিক বৃত্তি ছাড়তে হত। তাই বাধ্য হয়ে দর্শন শাস্ত্র নিয়েই এমএ’তে ভর্তি হন। এমএ পাশ করার পর রাধাকৃষ্ণণকে অক্সফোর্ড বা কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন কেউ কেউ।

কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে সংসার অচল হয়ে পড়বে বলে তিনি বললেন, ‘‘যদি কখনও অক্সফোর্ড যাই, তো শিক্ষক হয়ে যাব। ছাত্র হয়ে নয়।’’ কথাটি প্রমাণও করে দেখিয়েছিলেন।

এমএ পাশ করে রাধাকৃষ্ণণ মাদ্রাজ প্রাদেশিক শিক্ষা পরিষেবায় যোগ দিয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯১১ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯১৬ সালে হন প্রফেসর। যোগ দিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রী কলেজে। ১৯১৮ সালের জুলাই মাসে রাধাকৃষ্ণণ মহীশূর মহারাজার কলেজে যোগ দেন।

১৯২১ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম জর্জ অধ্যাপকরূপে যোগদান করেছিলেন তিনি। এটি ছিল ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় অধ্যাপকের পদ। ১৯৩১ সালের ১ মে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে যোগ দেন।

১৯৩৯-৪৮ পর্যন্ত বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এর পর ১৯৫২-৬২ এই ১০ বছর ভারতের উপ- রাষ্ট্রপতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালের আচার্য এবং ১৯৬২-৬৭ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন।

এরই মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাঁর বক্তৃতা সাড়া ফেলে দেয়। একাধিক দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করে তোলপাড় সৃষ্টি করেন পণ্ডিত মহলে। তাঁর ‘অ্যান আইডিয়ালিস্ট ভিউ অব লাইফ’ গ্রন্থটির জন্য তিনি নোবেল প্রাইজের জন্যও বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু নোবেল পুরস্কার প্রাপক হিসেবে তাঁর নাম নির্বাচিত হয়নি। ১৯৭৫ সালে ‘প্রগতিতে ধর্মের অবদান’ বিষয়ক রচনার জন্য পেয়েছিলেন ‘টেম্পলটন’ পুরস্কার।

এই মানুষটি নিজের সমস্ত জীবন শিক্ষার জন্য, প্রগতির জন্য, মানবকল্যাণের জন্য নিবেদন করেছেন। তাই ‘জাতীয় শিক্ষক সংস্থা’ ১৯৬২ সালে তাঁর জন্মদিনটি সারা দেশজুড়ে সাড়ম্বরে উদ্‌যাপনের বিষয়ে উদ্যোগী হলেন।

১৭ এপ্রিল, ১৯৭৫ চেন্নাইতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের আজকের দিনে (৫সেপ্টে) তিরুত্তানি,তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EducationMore posts in Education »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.