স্মরণঃ চা র্ল স ডি কে ন্স
বাবলু ভট্টাচার্য : ‘অলিভার টুইস্ট’, ‘অ্যা ক্রিস্টমাস ক্যারল’, ‘ডেভিড কপারফিল্ড’, ‘নিকোলাস নিকলবি’, ‘অ্যা টেল অফ টু সিটিস’ এবং ‘গ্রেট এক্সপেকটেশন’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাসের রচয়িতা ডিকেন্সকে ঊনবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
চার্লস ডিকেন্স একাধারে ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, সম্পাদক, সচিত্র প্রতিবেদক এবং সমালোচক ছিলেন। তবে চার্লস ডিকেন্সকে ইতিহাস মনে রাখবে তার অসাধারণ লেখনীর জন্য।
তার উপন্যাসের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ এবং সামাজিক অসঙ্গতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে সাধারণ বন্ধুত্ব কিংবা প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বাসরুদ্ধ উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্যও তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় সাহিত্যিক।
ডিকেন্স ১৮১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জন ডিকেন্স এবং মা এলিজাবেথ।
ডিকেন্সের শৈশবের দিনগুলো কাটে চ্যাথামে। বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সংসারের ব্যয় মেটাতে খুবই কষ্ট হত। এমনকি এক সময় ডিকেন্সের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। দেনার দায়ে তার বাবাকে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। এরপরই শুরু হয় ডিকেন্সের সংগ্রামী জীবন।
মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি চাকরি নেন জুতার কালির কারখানায়। সারাদিন কর্মক্ষেত্রে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে বাবার কাছে শর্টহ্যান্ড শিখতেন। অসাধারণ মেধার কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিষয়টি তিনি রপ্ত করে ফেলেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে জুটে যায় ‘ট্রু সান’ পত্রিকায় শিক্ষানবিস সাংবাদিকের চাকরি। কিছুদিন পর যোগ দেন ‘মর্নিং ক্রনিক্যাল’ পত্রিকায়। তখন থেকেই শুরু হয় তার লেখার জীবন।
ডিকেন্স যখন কারখানায় কাজ করতেন তখন তিনি শিশুদের দুঃখ-বেদনার যন্ত্রণা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছিলেন। শুধু কারখানা নয়, অনাথ আশ্রমে শিশুরা কীভাবে নির্যাতিত হয় তাও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখলেন তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অলিভার টুইস্ট’। এটি প্রকাশের পর শুধু লন্ডনে নয়, সমগ্র ইংল্যান্ডে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
১৮৫০ সালে প্রকাশিত হয় ডিকেন্সের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘ডেভিড কপারফিল্ড’। এরপর তার কলম থেমে থাকেনি। বিচার ব্যবস্থায় শ্লথগতির জন্য মানুষকে কীভাবে কষ্ট পেতে হয় তা নিয়ে লিখলেন ‘বিলক হাউস’। ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘হার্ড টাইমস’। এরপর একে একে লিখে চললেন ‘এ টেল অব টু সিটিস’ ও ‘গ্রেট এক্সপেকটেশন’-এর মতো বিখ্যাত উপন্যাস।
শুধু সৃষ্টির জন্যই যে তিনি কলম ধরেছিলেন, তা নয়। তাইতো সমাজের সব অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তার লেখনী হয়ে উঠেছিল নির্মম। তিনি বিপ্লবী না হলেও সমাজে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন— যা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঝড় তুলেছিল।
চার্লস ডিকেন্স ১৮৭০সালের আজকের দিনে (৯জুন) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ৫৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
Be First to Comment