Press "Enter" to skip to content

চলে গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে ভৌতিক সিনেমার জনক রামসে ব্রাদার্স এর বড় ভাই কুমার রামসিঙ্ঘানি…….।

Spread the love

মধুমিতা শাস্ত্রী : ৯ জুলাই, ২০২১। এই ভদ্রলোককে চেনেন?
ছবি দেখে চিনতে পারবেন না জানি, তবু বললাম। এমনকী এঁর আদত নাম বললেও চিনতে পারবেন না। এঁর নাম কুমার রামসিঙ্ঘানি। তবে যদি বাজার চলতি নামটা যদি বলি তাহলে হয়তো আন্দাজ করতে পারবেন। ওঁকে কুমার রামসে নামেই লোকে চেনে। হ্যাঁ হিন্দি সিনেমা জগতের বিখ্যাত রামসে ব্রাদার্সের বড় ভাই ইনি। গত ৮ জুলাই ভোর সাড়ে পাঁচটায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। দিলীপ কুমারের মৃত্যু নিয়ে বাংলা সংবাদ জগত এত ব্যস্ত ছিল যে ওঁর মৃত্যুর খবরটা মিস করে গিয়েছে বোধহয়। বা হয়তো অতটা গুরুত্ব দেয়নি। বম্বে, দিল্লির মিডিয়া কিন্তু কভার করেছে। করারই কথা। কারণ রামসে ব্রাদার্স হিন্দি সিনেমার দুনিয়ায় একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিল। কী সেই বিপ্লব তা বলব।
ফতেচাঁদ উত্তমচাঁদ রামসে করাচিতে ইলেকট্রনিকস গুডসের কারবার করতেন। দেশভাগের পর স্ত্রী, সাত ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে চলে এলেন বম্বে। এখানেও শুরু করলেন ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা। কিন্তু বম্বের ফিল্মি দুনিয়ার মোহে পড়ে গেলেন। শুরু করলেন ফিল্ম প্রোডাকশন। ‘শহিদ এ আজম ভগৎ সিং’, ‘সোহরাব রুস্তম’ করলেন। মন্দ চলেনি ছবি দুটো। ঠোক্কর খেলেন তৃতীয় ছবি ‘এক নান্নি মুন্নি লেড়কি থি’ করে। ছবি ফ্লপ। বাজারে ধারদেনা প্রচুর। কী করা যায়? এই ছবিটি ফ্লপ করলেও এর একটা দৃশ্য খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সে দৃশ্যে পৃথ্বীরাজ কাপুর একটা ভয়ঙ্কর মুখোশ পরে মমতাজকে ভয় দেখিয়ে ডাকাতি করতেন। এই দৃশ্য থেকেই এল আইডিয়া। ভয়ের সিনেমা বানালে কেমন হয়! শুরু হল নতুন ছবি ‘দো গজ জমিন কে নীচে’-র কাজ। আর এখান থেকেই বলিউডকে একটা নতুন পথ দেখালেন তাঁরা। সিনেমার অর্থনীতিটা বদলে দিলেন। যা অনেক পরে টলিউডে করেছিলেন স্বপন সাহা। শুরু করলেন শ্যু স্ট্রিং বাজেটে কাজ।


সেটা ১৯৭০ সাল। একটা ছবি বানাতে খরচ হত ৫০ লাখ টাকা। সময় লাগত বছরখানেক। রামসেরা ছবিটা বানালেন সাড়ে তিন লাখ টাকায়। সময় লাগল ৪০ দিন। কীভাবে হল এই অসাধ্য সাধন? রামসেরা একটা বাস ভাড়া করে তাতে চড়ে বসলেন সপরিবারে। সঙ্গে অপরিচিত কয়েকজন অভিনেতা অভিনেত্রী আর খুব কম সংখ্যক ক্রিউ। চলে গেলেন মহাবালেশ্বর। সেখানে একটা সরকারি গেস্ট হাউজের আটটি রুম ভাড়া নিলেন একমাসের জন্য। একেকটা রুমের ভাড়া ১২ টাকা। ওখানেই শ্যুটিং হবে। বেঁচে গেল স্টুডিও আর সেটের পয়সা। স্ক্রিপ্ট লিখলেন কুমার, ডিরেক্টর তুলসি আর শ্যাম, প্রোডাকশন ম্যানেজার কেশু, সাউন্ডে কিরণ, ক্যামেরায় গাঙ্গু আর এডিটিং ও পোস্ট প্রোডাকশন অর্জুনের দায়িত্ব। এইভাবে সাত ভাই দায়িত্ব নিলেন বিভিন্ন বিভাগের। বাঁচল আরও টাকা। বাদ গেলেন না মহিলারাও। ড্রেস, মেকআপ আর রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব তাঁদের।
সাড়ে তিন লাখ টাকা বাজেটের ছবিটা ব্যবসা করেছিল ৪৫ লাখ টাকা। একটা নতুন দিগন্ত খুলে গেল। শুরু হল রামসে ব্রাদার্সের জয়যাত্রা। একের পর এক লো বাজেটের হরর মুভি করে বাজার ধরে নিল সাতভাই। পুরানা মন্দির, ভিরানা, খোঁজ এসব ওঁদের হিট ছবি। পরের দিকে ঋষি কাপুর, শত্রুঘ্ন সিনহাদের মতো স্টারদের নিয়েও ছবি করেছেন রামসে ভাইরা। ছোট তিন ভাই আগেই মারা গিয়েছিল। কুমার ছিলেন সবথেকে বড়। তিনি চলে গেলেন। একটা যুগ শেষ হতে চলল। তবে খুশির কথা রামসেদের এই জয়যাত্রা নিয়ে একাধিক বই আছে। সম্প্রতি অজয় দেবগন ঘোষণা করেছেন তিনি রামসেদের নিয়ে একটা ছবি বানাবেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.