জন্মদিনে স্মরণঃ গৌতম চট্টোপাধ্যায়
বাবলু ভট্টাচার্য : গৌতম চট্টোপাধ্যায় একাধারে ছিলেন গায়ক, সুরকার, গীতিকার, পরিচালক ইত্যাদি। তবে এভাবে বলে আসলে বুঝানো যাবে না যে উনি কি পারতেন আর কি করতেন। যখন যেটা করতে ইচ্ছে বা ভালো লাগতো তিনি সেটাই করতেন এবং ভালোভাবেই করতেন।
গৌতম গ্র্যাজুয়েট করেছিলেন সাইকোলোজিতে, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। এই সময়ই তিনি নাকশাল আন্দোলনে যোগ দেন এবং কিছুদিন জেলও খাটেন। জেল থেকে ফিরে গঠন করেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ নামের গানের ব্যান্ড।
সময়ের আগে ধাবিত হওয়া গানের দলটি পরিচালিত, সংঘটিত হয়েছিল গৌতম চট্টোপাধ্যায় নামক এক সাবলীল এবং গুণী দলনেতার কারনে। সত্তর দশকে এই ধরনের গান বুঝতে পারা, এই ধরনের গানকে গ্রহণ করার মতো মানুষ ছিল কম। এই ব্যান্ডকে ধারণ করে রাখার মতো শক্তি ছিল না সেই সময়ের সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলস্বরূপ তিনটি অ্যালবাম, গোটা পনেরো অনুষ্ঠান করেই তখনকার মতন বিদায় নেয় ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’।
ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি নিজের গানের জগৎকে একাই টেনে নিতে থাকেন। বিভিন্ন ছবিতে মিউজিক কম্পোজ করেন। এবং এই সময়েই শুরু করেন ছবি বানানো। তাঁর প্রথম ছবি ‘নাগমতি’— যার জন্য ১৯৮৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘সময়’— যা প্রকাশিত হয়নি। তিনি কিছু ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। ঢোলক বাদক সম্প্রদায়দের নিয়ে তৈরি করেন The Primal Call। এক আমেরিকান টেলিভিশন গোষ্ঠীর জন্য নির্মাণ করেন-To Love is to Paint।
১৯৯৫-এর বইমেলায় আবার ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ফিরে আসে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ‘আবার বছর কুড়ি’ পরে দিয়ে মহীনের ঘোড়াগুলি’র পুণরাবির্ভাব ঘটে।
কুড়ি বছরের ব্যবধানে উৎপন্ন এই বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়ার একটি কারণ যদি হয় শ্রোতাদের নতুন গান শোনার আগ্রহ, অপর কারণ অবশ্যই লিরিসিস্ট গৌতমের আত্মপ্রকাশ। মহীনের গৌতম ছিলেন মূলতঃ সুরকার গায়ক ও যন্ত্রী। অথচ ১৯৯৫ থেকে শুরু তাঁর ইনিংসে দেখি যন্ত্র এবং গলার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মকে। নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন দুই সোনার কাঠি, রূপোর কাঠি– কথা ও সুর। গৌতমের কথা, ‘মহীনে’র মতই কবিত্মময় এবং প্রয়োজনীয়, স্হির- লক্ষ্য, আমোঘ।”
জীবনমুখী গানের ধারার আদিস্রষ্টা গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৯ সালের ২০ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৪৮ সালের আজকের দিনে (১ জুন) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment