—————শুভ জন্মদিন গুলজার—————–
বাবলু ভট্টাচার্য : সম্পুরণ সিং কালরা। এই নামের মানুষকে চেনেন? খুব কম লোক এই নামে চেনেন এঁকে। বেশিরভাগই তাই ঘাড় দুলিয়ে বললেন, চিনি না! এই সম্পুরণ সিং-ই গুলজার সাহেব। হিন্দি ছবির জনপ্রিয় পরিচালক। গীতিকার। হিন্দি-উর্দু কবি। বাংলার প্রেমে পড়ে ভাষাটি শিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়ে। বিয়েও করেছিলেন বাঙালি নায়িকাকে। তখনও তিনি সম্পুরণ সিং কালরা। সম্পুরণের বাবা মাখন সিং কালরার দুটি বিয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী সুজান কৌর-এর একমাত্র ছেলে সম্পুরণ। বেচারির খুব ছোট বয়সে মা চলে যান। তারপর বাবার কাছেই মানুষ।

দেশভাগের পর বাবার হাত ধরে কালরা পরিবার চলে আসেন ভারতে। পাঞ্জাবের অমৃতসরে পাকাপোক্ত বসতি বানান তাঁরা। এখানেই পড়াশোনা শেখার পর সম্পুরণ চলে আসেন মুম্বইয়ে রুজিরুটির ধান্দায়। অনেক কাজ খোঁজার পর তিনি একটি গ্যারাজে শুরু করেন মোটর মেকানিকের কাজ। কিন্তু ছোট থেকেই কবিতা লেখার প্রচণ্ড শখ সম্পুরণের। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও রাত জেগে কবিতা লিখতেন তিনি। শেষে একসময় দেখলেন, মেকানিকের কাজ করতে গিয়ে মরে যাচ্ছে কবি মন। সঙ্গে সঙ্গে রোজগারের চিন্তা ভুলে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিলেন সেই কাজ। যোগ দিলেন মুম্বইয়ের সেই সময়ের জনপ্রিয় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পা রাখলেন রুপোলি দুনিয়ায়। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সহকারি হিসেবে কাজ করতে থাকেন পরিচালক বিমল রায়, সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বলিউডে পা রেখে সম্পুরণ রূপান্তরিত হলেন গুলজার-এ। তাঁর প্রথম কাজ ‘বন্দিনী’ ছবিতে শচীন দেব বর্মনের সুরে লেখা গান। আস্তে আস্তে গানের পাশাপাশি ছবি পরিচালনাও করতে থাকেন তিনি। গুলজারের বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে অন্যতম, মেরে তেরে লিয়ে হি সাত রঙ্গ কে স্বপ্নে চুনে, জিন্দেগি, ক্যায়সি হ্যায় পহেলি, কহি দূর যব দিন ঢল যায়ে, না জিয়া লাগে না, সজন আয়ো রে, অ্যায় বতন, চপ্পা চপ্পা চরখা চলে ইত্যাদি। প্রথম ছবি তপন সিংহের বাংলা ছবির রিমেক ‘মেরে আপনে’। এরপর একের পর এক তিনি তৈরি করেন, ‘আঁধি’, ‘মৌসম’, ‘ইজাজত’, ‘পরিচয়’, ‘কৌশিশ’, ‘মাচিস’, ‘হু তু তু’ ইত্যাদি।

বড়পর্দার পাশাপাশি ছোটপর্দাতেই স্বকীয়তার ছাপ রেখেছেন গুলজার, জঙ্গলবুক, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, পটলি বাবা কি, হ্যালো জিন্দেগি ধারাবাহিকের মাধ্যমে। জঙ্গল বুকের টাইটেল সং জঙ্গল জঙ্গল বাত চলি হ্যায় আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। কেরিয়ারে যতটা সফল ততটাই ব্যক্তিজীবনে অসফল এই কবি। বাংলার প্রেমে পড়ে তিনি বিয়ে করেছিলেন ডিভোর্সি নায়িকা রাখীকে। যদিও এই বিয়ে বেশিদিনের নয়। মেয়ে মেঘনা জন্মানোর আগেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। দু-জনের কাছেই সমান ভাবে থেকে বড় হয়েছেন মেঘনা। এখন তিনিও বাবার মতোই নামি পরিচালক। গুলজার ভারতের সাহিত্য জগতের সবচাইতে বড় পুরস্কার সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে। তিনি এখন পর্যন্ত ১৯ বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার, পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ২০০২ সালে ফিল্ম ফেয়ার লাইফটাইম এচিভমেন্ট পুরস্কার পেয়েছেন। এইতো কিছুদিন আগেই ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’ চলচ্চিত্রে ‘জায় হো’ গানটির লিরিক লিখে পেয়েছেন অস্কার এবং গ্র্যামি দুটোই।

গুলজার (সম্পুরণ সিং কারলা) ১৯৩৬ সালের আজকের দিনে (১৮ আগস্ট) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝিলানে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment