Press "Enter" to skip to content

গুড ফ্রাইডে তে কি জীশুর মৃত্যু হয়েছিল?…….

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: ২ এপ্রিল ২০২১। সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হয় প্রভু যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের কাছে একটি পবিত্র দিন।খ্রিস্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিউ টেস্টামেন্টের বিবরণ অনুযায়ী দিনটি কেন শুভ শুক্রবার বলা হবে তাই নিয়ে বিতর্ক আছে। ঈশ্বর পুত্রের কষ্টকর মৃত্যু দিন কি করে শুভ হয়? তাই জার্মানি সহ বহু দেশে দিনটি ব্ল্যাক ফ্রাইডে হিসেবে পালিত হয়।অবশ্য উপকথায় দিনটি গড ফ্রাইডে হিসেবে পালিত হতো।

তিনদিনব্যাপী ইস্টার পর্বের প্রথম দিন। বাকি দুটি দিনকে বলা হয়, ইস্টার স্যাটারডে, ও ইস্টার সানডে। শুক্রবারে মৃত্যু আর রবিবারে ঈশ্বর পুত্র যীশুর পুনরুত্থান। প্রথমে ইস্টারের দিন ছিল স্প্রিং ইকুইনক্স মহাবিষুব এর সময়। যা বসন্তের বন্দনা প্রথমে ধরা হয়েছিল যীশুর মৃত্যু হয় ৩৩ খ্রিষ্টাব্দে। দিনটি ছিল ৩ এপ্রিল। বিজ্ঞানী গ্রহ নক্ষত্রের গণনা করে সময়টিকে নির্দিষ্ট করেন ৩৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই অনুষ্ঠানকে জীবনের রুপক হিসেবে ডিমের কুসুমকে চিহ্নিত করা হয়। তাই মুরগির ডিম রং করা এই পর্বের লৌকিক প্রচলন। ইস্টার সান ডে তে যীশু স্বর্গে যান। বিতর্ক অন্যত্র। সত্যিই কি যীশুর ৩৪ বছর বয়সে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল? এই বিষয়ে বলার আগে জেনে নেওয়া দরকার যীশু তো রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ক্ষমতা দখলে যাননি। তিনি তো খালি একটি ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেছিলেন। যে মতবাদের প্রধান বিষয় মানবপ্রেম। তাহলে কেন দেশের রাজা ও পুরোহিতেরা তাঁর শত্রু হলেন?

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে জানতে হবে সেই সময়ের ভৌগলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। পিছিয়ে যেতে হবে দুহাজার বছর আগে। যীশু জন্মেছিলেন বেথলেহেম শহরে। যীশুর জন্মের অনেক আগে থেকেই প্যালেস্টাইন জেরুজালেম প্রভৃতি অঞ্চল ছিল ইহুদি জাতি অধ্যুষিত। যীশু নিজেও ছিলেন ইহুদি। ইহুদি কারা? বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট বলছে, পৃথিবীর প্রথম পুরুষ নারী আদম ইভ। থুড়ি। ইভ প্রথম নারী নন। প্রথম নারী ছিলেন লিলিথ।পুরুষের যৌন ইচ্ছায় সাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় ঈশ্বর তাঁকে নির্বাসন দিয়ে আদমের যৌন ইচ্ছা মেনে নিতে ইভ কে পাঠান। ইভ পুরুষ প্রাধান্য মেনে নেন। এই প্রসঙ্গ থাক। আমরা বরং যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কিনা জানার চেষ্টা করি। এই আদমের বংশধর মুসা। যিনি খ্রিস্টপূর্ব ১৩৯৯ অব্দে জন্মান। তিনিই ইহুদি ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পৌত্র ইয়াকুবের ১২ টি পুত্রের ১২ টি গোষ্ঠী হয়। এই গোষ্ঠীর একটিতে জন্ম নেন মহামানব ইয়েশুরা। তাঁকেই আমরা জেসাস বা যীশু নামে চিনেছি। যীশু তাঁর পরিবারের ধর্মমত সেমেটিক ধর্ম মানতেন। তবে এই ধর্মের ত্রুটি খুঁজে সঠিক পথে মানুষকে পরিচালিত করতে চান। তাই ধর্ম ব্যাবসা করে বেঁচে থাকা পুরোহিতেরা যীশুর শত্রু হয়ে ওঠেন। সে যুগে রাজারা রাজত্ব রক্ষা করতে পুরোহিতদের ব্যবহার করতেন। তাই পুরোহিতদের পক্ষে তাঁরা গেলেন। ফলে রাজতন্ত্র ও পুরোহিতদের শত্রু হন যীশু।


একসময় জেরুজালেমের রাজা হেরোদের মৃত্যু হলে যীশু ভেবেছিলেন তাঁর বিরোধিতা আর হবে না। কিন্তু বাস্তবে যীশুর বিরোধিতা আরও বেড়ে গেল। ঘটনা এটাই যীশুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গ্রেপ্তার করে বিচার প্রহসনে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। যীশুর মৃত্যু হয়নি তাতে। তিনি যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর রাজার সেনারা যীশুর মৃত্যু হয়েছে ভেবে চলে যায়। এরপর অপেক্ষারত যীশুর শিষ্যরা এবং প্রেমিকা ম্যাগদনেল এক পাহাড়ের গুহায় যীশুকে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। অ্যালোভেরা আর গাছ গাছালির ঔষুধি গুণ দিয়ে যীশুকে সুস্থ করে তোলেন।এরপর প্রাণ বাঁচাতে যীশু ইরানের পথ ধরে ভারতে কাশ্মীর উপত্যকায় আসেন।
ঐতিহাসিকদের অনেকে মনে করেন যীশু ইরান আফগানিস্থান, লাদাখ তিব্বত হয়ে কাশ্মীরে এসে থিতু হন। জহরলাল নেহেরু তাঁর বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ (আনন্দবাজার প্রকাশন, ১৯৯২, পৃষ্ঠ ৮২) এমন কথাই বলেছেন। তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করে কবিশেখর ভুবনমোহন দাস ও বলেন, যীশু ভারতে এসে বৌদ্ধ সংঘা রামে শিক্ষা নিয়ে গৌতম বুদ্ধের ধর্মই প্রচার করেন। ২০১৫ সালে গোয়া থেকে প্রকাশিত নব হিন্দ টাইমস্ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কয়েকজন গবেষক দাবি করেছেন, বাইবেলে যিশুর ১২থেকে ৩০বছর পর্যন্ত কোনও তথ্য নেই। তাই বলা হয়, লস্ট ইয়ারস। যীশু ভারতে থাকাকালীন এসেছিলেন পুরী, বেনারসে। কেউ বলেন ৩০বছর পর যীশু স্বদেশে ফিরে যান। কেউ বলেন, তিনি কাশ্মীরে ই আবার যান ৪৯ বছর বয়সে। কাশ্মীরে রোজা বাল্ মাজার নামে ভারত সরকারের সংস্কারে তৈরি ভিজা আসাফ সমাধিই যীশুর সমাধি।


এমনও বিতর্ক আছে যে যীশু আসলে ব্রাহ্মণ ছিলেন। যদিও সে প্রসঙ্গে পরে আলোচনা করা যাবে। যীশুর জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে যাই বিতর্ক থাকুক না কেন ভারতবাসীর কাছে তিনি পরম শ্রদ্ধেয়। স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বলতেন ঋষি কৃষ্ণ।দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণের ঘরে ছিল যীশুর ছবি। আজও যীশুর জন্মদিনে কেক দিয়ে বেলুড়মঠে বড়দিনের উৎসব পালিত হয়। বন্দনা করা হয় প্রভু যীশু হিসেবে।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.