#শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে গরমে ফলের ভূমিকা অনবদ্য।#
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ১৭ জুন, ২০২০। গরমে, ঘামে, ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরে যে খাবার আমাদের দেহে শান্তি এনে দেয় তাহলো ফল। গ্ৰীষ্মের ফল গুলি র মধ্যে জলের ভাগ বেশি হওয়ায় আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখে। এছাড়া মরশুমি ফলে র পুষ্টিগুণ এর জন্য যে সমস্যা থেকে মুক্তি পাই তা হলো- বদহজম, আ্যসিডিটি, কনষ্টিপেশন, ডায়রিয়া, জন্ডিস, সর্দি কাশি, জ্বর ঘাম-ঘামাচি, ব্রন, ফোঁড়া, ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, নেফ্রাইটিস, হাইপার লিপি ডেমিয়া। এইজন্য সব মরশুমেই ছোটো থেকে বৃদ্ধ সকলেরই যে কোন ফল প্রতিদিন খাওয়া উচিত। গ্ৰীষ্মের আবহাওয়া য় ফল অবশ্যই সকলের খাওয়া দরকার। #আমঃ- অসাধারন পুষ্টি গুনে ভরপুর, নানা রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য আম নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। নুন, চিনি সহ কাঁচা আম পোড়া সরবত দেহে জল ও ইলেকট্রলাইট ব্যালেন্স রেখে গরমে হিট স্ট্রোক কে প্রতিরোধ করে। গরমের ক্লান্তি কাটিয়ে শরীর কে তরতাজা চনমনে রাখতে কার্বোহাইড্রেট, ক্যালোরি, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ আম মানব দেহে এনার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে। আমে সোডিয়াম কম, পটাশিয়াম-ম্যাগনেশিয়াম বেশি, ও ফাইবার পূর্ণ হওয়ায় হার্টের সমস্যা দূরে রাখে। তাই খুব গরমে কাঁচা আমের ডাল, ঝোল, টক, শরবত ইত্যাদি প্রতিদিন খাওয়া শরীরের পক্ষে খুব ভালো।
#কাঁঠালঃ- ভিটামিন সি, ক্যরোটিনয়েড়স ও ফ্লাভোনয়েডস জাতীয় শক্তিশালী আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় দেহের ক্ষতি করে ফ্রি রাডিক্যালস দমন করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কাঁঠাল। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় ফাইবার যুক্ত কাঁঠাল। প্রচুর আয়রন কপার সমৃদ্ধ হওয়ায় আ্যনিমিক ও থাইরয়েড এর রোগীদের খাওয়া খুব ই লাভ দায়ক হয়। #জামঃ- কার্বোহাইড্রেট, ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ জাম গরমের ফল হিসেবে বেশ পরিচিত। উচ্চমাত্রায় ফাইবার নিউট্রিয়েন্টস, আ্যন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ছোট্ট ফলটি র মেডিসিনাল ব্যবহার আছে। এই অম্লধর্মী ফলে এক বিশেষ ধরনের এনজাইম আছে যা গরমে ত্বকের সুরক্ষা দেয়।
গরমে কয়েকটা জাম ফল খেলে বদহজম, হিট স্ট্রোক, জ্বর জারি, সর্দি কাশি, টাইফয়েড ইত্যাদি নানা ছোটো খাটো সমস্যা ও জটিলতা থেকে রক্ষা করা যায়। #জামরুলঃ- অত্যন্ত পুষ্টিকর, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জামরুল ক্লান্ত স্নায়ু কে উদ্দীপ্ত করতে এবং শরীরের দূষিত বর্জ্য নিষ্কাশন করতে জামরুল অনবদ্য। এই ছোট্ট ফলে জলের ভাগ বেশী থাকায়, পটাসিয়াম, সোডিয়াম এর মাত্রা বেশি থাকায় এবং প্রখর রোদে ডিহাইড্রেশন এড়াতে ডায়াবেটিক ও হাই প্রেসার এর রোগীরা জামরুল খেতে পারেন। #লিচুঃ- ভিটামিন সি, মাঝারি মাপের ক্যালোরি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত গরমের সমস্যা নিরসনে এই লিচু ফল ছোটো বড়ো সবার পছন্দ। তীব্র তাপ জ্বালায় ক্লান্তি পিপাসা কাটাতে মাত্র ৫-৬টি পাকা লিচু সরবত করে খেলে নিমেষে ই ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়।
আর্দ্রতা, ভারসাম্য রেখে শক্তির যোগান দেয় লিচু। #পেঁপেঃ- কাঁচা য় সবজি, পাকায় সোনার বরন অমৃত সম গরমের এই প্রয়োজনীয় ফল টি হলো পেঁপে। অসামান্য পুষ্টি গুনে ভরপুর পেঁপে সহজলভ্য ও বটে। এই ফলটি শিশু, বৃদ্ধ সুস্থ অসুস্থ সকল মানুষের উপকারী ফল হলো পেঁপে। ভিটামিন সি, ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, পাকা আম এর তুলনায় কম হওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীরাও খুশিমনে পেঁপে খেতে পারেন। যে কোনো প্রকার শারীরিক অসুস্থতা প্রতিরোধে পেঁপে অনবদ্য। #তরমুজঃ- গরমে র বিশেষ আকর্ষণ তরমুজ। গাঢ় সবুজ বর্ণের ফলের ভেতর লুকানো টুকটুকে লাল রঙের রসালো সুমিষ্ট স্বাদের রসালো ফলে অসাধারণ শক্তিশালী লাইকোপেন জাতীয় আন্টিড্যান্ট তরমুজের ঔষধি মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ১০০গ্ৰাম তরমুজ এ প্রায় ৬৮৮৮ মাইক্রো গ্ৰাম লাইকোপিন পাওয়া যায়। এছাড়াও, উচ্চরক্তচাপ, হাইপার লিপিডিমিয়া, হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ এ তরমুজ অনন্য। #ফুটি:- ভিটামিন সি, ক্যলসিয়াম, পটাশিয়াম, সমৃদ্ধ ফুটি বা মাস্ক মেলন গরমের আদর্শ ফল বলেই বিবেচিত। পিপাসা ক্লিষ্ট গলা কে আরাম দিতে ফুটি র গুরুত্ব অপরিসীম। #আতাঃ- অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর, ফাইবার, ফলিক আ্যসিড, ভিটামিন সি, ক্যলসিয়াম, পটাসিয়াম সমৃদ্ধ আতা নানা রোগপ্রতিরোধ এ সাহায্য করে। #শসাঃ- তীব্র গরম, অথবা ঠান্ডা, বর্ষা সব ঋতুতে অত্যন্ত পরিচিত সকলের পছন্দ শসা ফল হিসেবে এর জুড়ি মেলা কঠিন। পিপাসা ও ক্লান্তি দূর করতে, শরীর শীতল রাখতে শসা অনন্য। ফাইবার, জল, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, বিভিন্ন পলিফেনল সমৃদ্ধ শসা সকল মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারে।
শসা য় একধরনের প্ল্যান্ট হরমোন থাকে যা প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন ক্ষরণে সাহায্য করে, যা টাইপ-টু ডায়াবেটিক দের পক্ষে খুবই উপকার দেয় নিয়মিত শসা খাওয়া। #সবেদাঃ- গরমে র এই রসালো ফলটি সহজেই হজম হয়। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সবেদা সহায়ক ফল। এতেও প্রচুর ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস থাকে। #বেলঃ- সব মানুষের কাছে বেল অত্যন্ত প্রিয় ফল। গরমকালে বেলে র সরবত অসাধারণ সুস্বাদু। বেলের ভেষজ গুণ থাকায়, আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরিতে বেলে র ব্যবহার আছে। লিভার সুস্থ রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেলে র কদর কখনো কমবে না। গরমকালে শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একটা ফল খাওয়া সকলের জন্য খুব ই জরুরি।
Be First to Comment