Press "Enter" to skip to content

গণনাট্যর হয়ে অনেক গান করেছেন সুচিত্রা মিত্র। ১৯৫১ সালে পূর্ব বার্লিনে গিয়েছেন গান গাইতে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও দেবব্রত বিশ্বাসের সাথে….।

Spread the love

স্মরণঃ সু চি ত্রা মি ত্র

বাবলু ভট্টাচার্য : রবীন্দ্রনাথের গান সবাই গান, কিন্তু এমনভাবে তা নিজের জীবনেও অনুসরণ করতে পারেন কয়জন? তার জীবন সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দায়িত হয়ে বয়ে চলেছে এতটা কাল। তিনি সুচিত্রা মিত্র— শুধু একটি নামই নয়, একটি ইতিহাস।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর সুচিত্রা মিত্রের জন্ম। তার পিতা রামায়ণ-অনুবাদক কবি কৃত্তিবাস ওঝা’র উত্তর পুরুষ সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় (১৮৮৪-১৯৬৬) ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক; মায়ের নাম সুবর্ণলতা দেবী। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন সুচিত্রা মিত্র।

দারুণ সংস্কৃতিমনা পরিবার থেকে উঠে আসা বলে তার পরবর্তী জীবন ধারায় তার প্রভাব দেখা যায়। বাবা উকিল হলেও পেশায় যত না মন, তার চেয়ে সাহিত্যে মনোযোগ বেশি। ফলে, অভাব তার খুব অপরিচিত কিছু ছিল না।

ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা। একবার শুনলেই কোন গান শিখে ফেলেন আর তারপর গলা ফাটিয়ে সবাইকে শুনিয়ে বেড়ানো— এই স্বভাবের সুচিত্রা যে পরের সময়টা গান শুনিয়েই কাটিয়ে দেবেন, তা কি খুব অমূলক মনে হয়?

তার বড়বোনের বান্ধবী উমা স্নেহানবীশ তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ হলে কবিগুরুর স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে। কবি তখন সদ্য প্রয়াত। গান গাওয়ার কোনও যন্ত্রপাতি নেই। তার মাঝেই ছোট সুচিত্রা খালি গলায় গেয়ে উঠলেন— ‘যখন পড়বে না মোর পয়ের চিহ্ন এই বাটে’… গানটি সবার খুব মনে ধরেছিল। তারপর সুচিত্রা বৃত্তি নিয়ে সংগীতভবনে ভর্ত্তি হলেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর মাত্র ২০ দিন পর।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে বোলপুর তখন কিছুটা শুন্য মনে হলেও সংগীতভবন মোটেও তারকাশূন্য নয়। ছাত্রদের মধ্যে কণিকা বন্দোপাধ্যায়, অরুন্ধতী গুহঠাকুরতা, কমলা সেন (বসু), চিত্রা মজুমদার, অশোকতরু— এরকম সব ছাত্র। আর শিক্ষকদের নামও কম ভারী নয়, শৈলজারঞ্জন তো ছিলেনই মাথা হয়ে। আরও ছিলেন ইন্দিরা দেবীচৌধুরানী, অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভিভি ওয়াঝেলওয়ার প্রমুখ।

মোহরদি (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) পরে বলতেন— ‘কীরকম ঝরঝরে চেহারা, টরটরে কথাবার্তা, কী স্মার্ট চলাফেরা— আমরা অবাক হয়ে সুচিত্রাকে দেখতুম। তখন সুচিত্রার সাথে কিছুটা সমান তালে পাল্লা দিতে চেষ্টা করত অরুন্ধতী। কিন্তু ঠোক্করও খেতেন।’

সুস্থির আশ্রমকন্যা তিনি ছিলেন না। কলাভবনের ছাত্রদের সাথে ভলিবল খেলেছেন। আবার কেন্দুলিতে জয়দেবের মেলায় যাওয়ার সময় সারাটা পথ সুচিত্রা ছেলেদের সাথে পায়ে হেঁটে গেছেন— অন্য মেয়েদের সাথে গরুর গাড়িতে যান নি। কোনও কিছুতে সুবিধা প্রত্যাশা, তার চরিত্রে ছিল না। এই মানসিকতাই পরবর্তী জীবনে তাকে অনেক সাহায্য করেছে।

সঙ্গীতভবন থেকে বের হওয়ার বছরেই তার প্রথম রেকর্ড বেরোয়। তার একদিকে ছিল—‘মরণরে, তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান।’ অন্য পিঠে— ‘হৃদয়ের একূল ওকূল।’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সেইকালেও প্রথম রেকর্ডে অপরিমেয় সাফল্যলাভ! সেইকারনে সম্মেলক কন্ঠে ছাড়াও দেখা যাচ্ছে, তার ’৪৭ এ দুটি, ’৪৮ এ তিনটি, ’৪৯ এ তিনটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়।

গণনাট্যর হয়ে অনেক গান করেছেন সুচিত্রা মিত্র। ১৯৫১ সালে পূর্ব বার্লিনে গিয়েছেন গান গাইতে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও দেবব্রত বিশ্বাসের সাথে তিনি বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের একটা বিভাগও খুলেছিলেন— যার প্রধান ছিলেন ১৯৮৪ পর্যন্ত। তার অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৭৪ এ পদ্মশ্রী, পরবর্তীতে দেশিকোত্তম ও এইচএমভি’র গোল্ডেন ডিস্ক এওয়ার্ড পান।

তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ‘দহন’ এ অসাধারণ অভিনয় করেন।

সুচিত্রা মিত্র ২০১১ সালের আজকের দিনে (৩ জানুয়ারি) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.