**কেয়াফল??**
সুস্মিতা দাস : কলকাতা, ৮, আগস্ট, ২০২০। কিছু দিন আগে কেওড়া ফল সম্পর্কে একটি পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন কেওড়া ফল থেকেই কি কেওড়া জল তৈরি হয়? আজকের এই পোস্ট তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে, সাথে এই ফল সম্পর্কে আরো কিছু নতুন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
**কেয়াফল সম্পর্কে কিছু তথ্য ??**
কেয়া গাছ, একটি সুগন্ধি জাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছের অনেক নাম আছে। যেমন – কেতকী, কেওড়া। কেয়া ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Pandanus tectorius. Pandanus গনের অন্তরভুক্ত। এই গাছ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। কেয়া গাছ লম্বায় ১০ থেকে ১২ ফুট হয়। কান্ড কাঁটাময়।কান্ড থেকে অনেক শাখা প্রশাখা বের হয়। পাতা লম্বা লম্বা হয়, প্রায় ২ থেকে ৩ মিটার, চওড়া ৫ থেকে ৬ সে. মি.। গাছ গুলো বক্রাকারে হয়।গাছের নিচ থেকে মোটা শাখা পর্যন্ত অনেক মূল বের হয়, যা গাছটিকে মাটির সাথে ঠেস দিয়ে সোজা ভাবে দাড়াতে সাহায্য করে। তাই এই মূল গুলিকে ঠেস মূল বলে। এই মূল গুলি মাটির সাথে গাছকে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করে এবং গাছের ভারবহন করে। এর পাতা সরাসরি পত্রমূল ছাড়াই কান্ড থেকে বের হয়।
পাতার অগ্রভাগ সরু এবং কিনার গুলি করাতের মতো কাঁটাকাঁটা হয়। পাতার রঙ সবুজ ও উভয় তল মসৃণ। এই গাছ স্ত্রী ও পুরুষ গাছ আলাদা আলাদা হয়। স্ত্রী কেয়া গাছকে স্বর্ণ বা হেম কেয়া ও পুরুষ কেয়া গাছকে সিত কেয়া বলে। আষাঢ় – শ্রাবণ মাসে ফুল ফোটে। এই ফুল সাদা এবং সুগন্ধি হয়। আশ্বিন- কার্তিক মাসে ফুল থেকে ফল হয়। এই ফল গুচ্ছাকার এ হয়। এক গুচ্ছে ৫ থেকে ২০ টি ফল হতে পারে। স্বাদে তিতকুটে হয়।এই কেয়া গুচ্ছ ফলকে দূর থেকে আনারসের মতো দেখতে লাগে। ফলের আবরণ শক্ত হয়। কাঁচা কেয়া ফলের রং সবুজ এবং পাকলে আনারসের মতো লাল -কমলা হয়। এই ফল ১০ থেকে ১৫ সে.মি লম্বা হয়। এই গাছ পরস্পরের সাথে জড়াজড়ি করে বেড়ে ওঠে। ভারত, বাংলাদেশ, জাপান, ইন্দনেশিয়া প্রভৃতি দেশে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। সুন্দরবন অঞ্চলেও কেয়া গাছ প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। তবে এখন নগরায়ন এর ফলে এই গাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
***উপকারিতা??**
এই গাছ একটি গন্ধ জাতীয় উদ্ভিদ। কেয়া গাছের ফুল থেকে বাষ্পীভবন এর মাধ্যমে কেওড়া জল তৈরি হয়। যা নানা ধরনের খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। যেমন সুগন্ধি বরফি, রসগোল্লা, পিঠা, রসমালাই, বিরিয়ানি ইত্যাদি।
কেয়া ফুল থেকে এক ধরনের তেল তৈরী হয়, সেই তেল ব্যবহারে পেট ব্যাথা নিরাময় হয়।
কেয়া পাতার রস ব্রনো, ডায়াবেটিস, হৃদপিণ্ডের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথা ব্যাথা নিরাময় করে।
এছাড়াও কান্ড, বীজ, ঝুড়ি নানা ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। বিষাক্ত পোকা এবং চুলের খুশকি কমাতে এই ফল খুব উপকারী। কেয়া বীজ যকৃৎ এর সমস্যা দূর করে।
কেয়ার তেল অনিদ্রা দূর করে। এই ফল কাঁচা ও রান্না করে খাওয়া হয় এবং এর থেকে জ্যাম জেলি তৈরী করে খাওয়া হয়। বিদেশে কেয়া ফল স্যালাড হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কেয়া পাতা মাদুর, নৌকার পাল, পাতার ছাদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। শুষ্ক ফাইবার দিয়ে ছবি আকার ব্রাশ তৈরি করা হয়।
ছবি ~ গুগল থেকে সংগ্রহ করা।
Be First to Comment