Press "Enter" to skip to content

কি মূর্তি গড়বেন মাইকেলেঞ্জেলো! হঠাৎ মনে পড়ে গেল একটা বইতে পড়েছিলেন প্রাচীন রোমের অরণ্য দেবতা ফনের কথা। অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশু………।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ মাইকেলেঞ্জেলো

বাবলু ভট্টাচার্য : মাইকেলেঞ্জেলো বুয়োনারত্তি। বাবার নাম লোদভিকো। মাইকেলেঞ্জেলোর জন্মের পরই তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাধ্য হয়ে তাঁর জন্য ধাত্রী নিয়োগ করা হল। ধাত্রী একজন পাথর খোদাইকারীর স্ত্রী, নিজেও অবসরে পাথরের কাজ করতো। মাইকেলেঞ্জোলার যখন ছয় বছর বয়স, মা-কে হারান তিনি। তিন বছর এক অস্থির টানাপোড়েনে কেটে গেল। দশ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেন।

বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পাশ করে ব্যবসা করবে। কিন্তু ছেলের ইচ্ছে অন্যরকম, পাড়ার একটি ছেলে গিরলানদাইও নামে এক শিল্পীর কাছে ছবি আঁকা শেখে। একদিন বাবার কাছে প্রসঙ্গটা তুলতেই লোদভিকো গর্জে উঠলেন। কিন্তু মাইকেলেঞ্জেলোর প্রচণ্ড আগ্রহের কাছে শেষ পর্যন্ত তাকে মাথা নত করতে হল। ১৩ বছর বয়সে ভর্তি হলেন গিরলানাদাইওর স্টুডিওতে। স্কুলের পড়া শেষ, শুরু হল ছবি আঁকা।

বেশ কয়েকমাস কেটে গেল। একদিন ঘুরতে ঘুরতে মাইকেলেঞ্জেলো এসে পড়লেন মেদিচি (ফ্লোরেন্স গণরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রধান) প্রাসাদের কাছে। চোখে পড়ল স্কালপচার গার্ডেন। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন। কি অপূর্ব সব মূর্তি সাজানো রয়েছে চারদিকে! দেহের আকৃতি চোখের তারায় মুখের ভাবে তারা যেন এক একটি রক্ত মাংসের প্রতিমা।

কিছুদিনের মধ্যেই ডাক পেলেন ভাস্করদের স্কুল থেকে। কি মূর্তি গড়বেন মাইকেলেঞ্জেলো! হঠাৎ মনে পড়ে গেল একটা বইতে পড়েছিলেন প্রাচীন রোমের অরণ্য দেবতা ফনের কথা। অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশু। চোখ বুজতেই মনের কল্পনায় ফুটে উঠল সেই রূপ, চকখড়ি দিয়ে পাথরের উপর আঁকতে বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফনের বিচিত্র চেহারা ফুটে উঠল পাথরের উপর। তিনদিন অবিশ্রান্ত কাজ করার পর শেষ হল মূর্তি। যেন জীবন্ত ফন পৌরাণিক জগৎ থেকে উঠে এসে দাঁড়িয়েছে স্কালপচার গার্ডেনে।

কয়েকদিন পর স্কালপচার গার্ডেনের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন লরেঞ্জ দ্য মেদিচি। এখানকার প্রতিটি মূর্তি তার চেনা কিন্তু এই নতুন মূর্তিটি কোথা থেকে এলো! দাঁড়িয়ে পড়লেন লরেঞ্জ। তাকে দেখেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন মাইকেলেঞ্জেলো। তার দিকে ফিরে লরেঞ্জ বললেন, কে এই মূর্তি তৈরি করেছে?

  • ইওর এক্সলেন্সী! আমি এই মূর্তি তৈরি করেছি।
  • তোমার ফনকে দেখে তো মনে হচ্ছে বৃদ্ধ তাই না? বৃদ্ধ মানুষের মুখে কি সব ক’টা দাঁত থাকে?

থতমত খেয়ে গেলেন মাইকেলেঞ্জেলো। এ কথা তো তাঁর মনে আসেনি। কিছু বলার আগেই মেদিচি তার পিঠে সামান্য চাপড় মেরে এগিয়ে গেলেন। লরেঞ্জ চলে যেতেই কয়েক মূহূর্তে চিন্তা করলেন মাইকেলেঞ্জেলো। তারপর কাজ শুরু করলেন। পরদিন বাগানে আসতেই ফনের মূর্তির দিকে চোখ পড়ল লরেঞ্জের। তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বারতোলদো। লরেঞ্জ তাকে বললেন, কি ব্যাপার, একদিনে ফনের বয়স মনে হচ্ছে কুড়ি বছর বেড়ে গিয়েছে, ওপরের দুটো দাঁত নেই, নিচের একটা দাঁত নেই, মুখের উপরে চামড়ার ভাঁজ পড়েছে, এতটুকু ভুল নেই কোথাও।

মুগ্ধ হলেন লরেঞ্জ। প্রাসাদে পরিবারের সাথেই আশ্রয় দিলেন। শুরু হল মাইকেলেঞ্জেলো নতুন জীবন। এগিয়ে চলল তাঁর সাধনা। ফ্লোরেন্সে অশান্তি দেখে বেরিয়ে পড়লেন প্রাসাদ থেকে। বেশ অনেক জায়গায় নতুন নতুন মূর্তি গড়লেন। পোপের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন ছবি আঁকার। দুটি ছাদে আঁকবেন বাইবেলের সৃষ্টি আর ধ্বংসের চিত্র। হাসিমুখে পোপ অনুমতি দিলেন।

প্রথমে শুরু করলেন আদম-ইভ আর স্বর্গোদ্যানের চিত্র। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন পৃথিবী, জল, আকাশ, জীবজন্তু। সব শেষে মানুষ। প্রথম মানুষ আদম ইভের কাহিনি, স্বর্গ থেকে বিচ্যুতি। দু’বছর কেটে গেল কাহিনি শেষ করতে। দীর্ঘ চারবছর বাদে শেষ হল সিসটাইল চ্যাপেলের বিরাট চিত্র।

সৃষ্টির ব্যাপ্তিতে গভীরতম উৎকর্ষতায় সিসটাইনের এই চিত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি। শেষ বিচারের ছবি আঁকা শেষের পূর্বেই মাইকেলেঞ্জেলোর জীবনে এলেন ভিত্তোরিয়া। রোমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। বিদুষী কবি ধর্মীয় সাধিকা। বয়স ছেচল্লিশ।

হঠাৎ পোপ তৃতীয় পল মারা গেলেন। নতুন পোপ হলেন চতুর্থ পল। মাইকেলেঞ্জেলোর প্রতি তার গভীর ঘৃণা আর বিদ্বেষ। পোপ হয়েই তিনি আদেশ দিলেন শেষ বিচারের ছবি মুছে দিতে কিন্তু রোমের শিল্পীদের আক্রোশে শুধু নগ্নতা ঢেকে দিলেন।

মাইকেলেঞ্জেলো জীবন শুরু করেছিলেন ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে। তারপর চিত্রকর, তারপর কবি, জীবনের শেষ প্রান্তে হলেন সেন্ট পিটার্স গীর্জার স্থপতি।

১৫৬৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, গীর্জার কাজ শেষ হয়ে এসেছিল। অসুস্থ মাইকেলেঞ্জেলো জানলা দিয়ে গীর্জার দিকে তাকালেন। তাঁর মনে হল শিল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি সমস্ত জীবন ধরে যে পরিপূর্ণ মুক্তির অন্বেষণ করেছেন, এতদিনে তার পালা শেষ হয়েছে। এবার পরিপূর্ণ বিশ্রাম। পরম তৃপ্তিতে চোখ বুজলেন মাইকেলেঞ্জোলো।

মাইকেলেঞ্জেলো ১৪৭৫ সালের আজকের দিনে (৬ মার্চ) ইতালির ক্যাপ্রিসির আরেজ্জোতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.