স্মরণঃ কামিনী রায় —–
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”
অথবা
“করিতে পারি না কাজ, সদা ভয় সদা লাজ,
সংশয়ে সঙ্কল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।”
এই সব কবিতার জননী কামিনী রায়।
কামিনী রায় এমন একটি সময়ের, যখন নারী শিক্ষা ছিল একটি জঘন্য অপরাধের সামিল। কামিনী যে সময়ে মানুষ হয়েছেন তখন মেয়েদের পড়াশোনা শেখার প্রচলন ছিল না। এটি একটি নিন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হত।
মূলত কামিনীর বাবা-মার একান্ত প্রচেষ্টার কারনেই ওই সময়ে তার শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব হয়েছিল। মায়ের সাথে রান্নাঘরে তালপাতায় অক্ষর শিক্ষা, পিতার লাইব্রেরীতে তার কাছে গণিত শিক্ষায় অনেকটা পটু হয়ে উঠেছিলেন শিশু কামিনী রায়। গণিতে পারদর্শীতার দরুণ স্বয়ং গণিতের শিক্ষক দিয়েছিলেন ‘লীলাবতী’ উপাধি। শিশু বয়সেই কামিনীর পিতা কন্যাকে পাঠ্য শিক্ষার পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও শিক্ষা দিয়েছিলেন।অনেকটা খেলার ছলেই ১৫ বছর বয়সে কামিনী তার সেই বিখ্যাত ‘সুখ’ কবিতাটি লেখেন। এই কবিতা সম্পর্কে কবি বলেন…. “সকলের ভাল লাগিয়াছে বলিয়া এটা রাখিয়া দিয়াছিলাম। নতুবা বয়সের অনুচিত পাকামি হইয়াছে বলিয়া কবে ছিঁড়িয়া ফেলিতাম। সাড়ে পনের বৎসর ছিল তখন আমার বয়স।” কামিনী রায় ছিলেন প্রথিতযশা বাঙালি কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রীধারী ব্যক্তিত্ব। তিনি একসময় “জনৈক বঙ্গমহিলা” ছদ্মনামে লিখতেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র সমসাময়িক কবি।
কামিনী তার কবিতায় শুধু সুখ-দুঃখ, প্রেম ভালো বাসার কথাই লিখতেন না। তিনি তার কবিতায় বলেছেন দেশপ্রেমের কথা, নিপীড়িতদের কথা, নারী অধিকারের কথা। কবি তার নিজ লক্ষের কথাও প্রকাশ করেছেন তার কবিতার। ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জে জন্ম নেয়া কবি কামিনী রায় তার কাজের অবদান স্বরূপ নানা সময়ে সমাদৃত হয়েছেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৯ সালে তাকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ দান করে সম্মানিত করে। অনাবিল দেশপ্রেম, অবিচল আদর্শবোধ, নীতিজ্ঞান, শোক ও দুঃখকে জয় করার মানসিক দৃঢ়তা, মানবতাবোধ, ভাষা ও বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা তার কবিতার মূলমন্ত্র।
কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের আজকের দিনে (২৭ সেপ্টেম্বর) ঝাড়খন্ড রাজ্যের হাজারীবাগে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment