Press "Enter" to skip to content

কলকাতায় যাযাবর ইতালির চিত্রশিল্পী মাউরিজিও বসচেরি….।

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : ৮ এপ্রিল ২০২২। বাংলা নববর্ষের প্রাক মুহূর্তে কলকাতায় এলেন ইটালিয়ান যাযাবর চিত্রশিল্পী মাউরিজিও বসচেরি। বন্যপ্রাণী প্রিয় এই চিত্রশিল্পীর ছবির বিষয়বস্তু বন্য প্রাণী। তাঁর কিউরেটর মারিও লিবেরালি সহ কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন মধ্য কলকাতার এক রেস্তোরাঁয়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কলকাতার ইতালি কনসাল জেনারেল গিয়ানলুসা রুবাগত্তি। ইতালির সঙ্গে কলকাতার এক আত্মিক সম্পর্ক আছে। কলকাতার টেরিটি বাজার তৈরি করেছিলেন ইতালিয়ান এডওয়ার্ড টেরেট্টা। কলকাতার জিপিও , হাইকোর্ট ও ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের স্থপতি ছিলেন ইতালির স্থপতি ওয়াল্টার লং বোজ্জি গ্রানভিল।

শিল্পীর কলকাতা আসা এই প্রথম। ঝটিকা সফরে আসায় এবার সিটি অফ জয় কলকাতার প্রাচীন ঐতিহাসিক সৌধ সব ঘুরে দেখার সময় পাননি। পরেরবার সময় হাতে নিয়ে এসে কলকাতাকে পুরোপুরি আত্মস্থ করবেন। এবার কলকাতায় আসার কারণ দুটি। এক, কলকাতার সৌন্দর্যায়নে গড়িয়াহাটে স্পেক্টাকুলার ম্যুরাল নির্মাণ করবেন সরকারি আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গী ও বন্য প্রাণীপ্রেমী এই চিত্রকর একটি ওয়ার্কশপও করছেন সিস্টার নিবেদিতা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। দেশের অন্যতম পুরানো ঐতিহ্যমন্ডিত সমাজসেবা মূলক সংগঠন রোটারি ক্লাবের আর্থিক তহবিলের জন্য তাঁর চিত্রকল্প দান করছেন। সাংবাদিকদের তিনি দেখালেন দেশের জাতীয় পশু বাঘের কিছু প্রায় জীবন্ত ছবি। তাঁর বক্তব্য, জাতীয় পশুর মূল নিবাস এই বাংলার সুন্দরবন। তাই কলকাতায় তিনি নিয়ে এসেছেন বাঘের ছবি।

চিত্র শিল্পের উত্থান আজ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে। নিয়ানডার্থান গোত্রের প্রায় মানুষদের গুহা চিত্র যার নিদর্শন। চুনাপাথরের দেওয়ালে ঘোড়া, গণ্ডার, সিংহ, ম্যামথদের ছবি আজও সাক্ষ্য দিচ্ছে সেই অতি প্রাচীন যুগের। শিল্পীর খুবই পছন্দের চিত্রকল্প অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী গুহাচিত্র। বিশ্বজুড়ে ইটালিয়ান চিত্রশিল্পের খ্যাতি । লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মাইকেলেঞ্জেলো ও রাফায়েল এর শিল্পকলা ইতালির এক আলাদা পরিচয় দিয়েছে। ইতালিতে চিত্রশিল্পের খ্যাতির মূল কারণ, রেনেসাঁ পরবর্তীকালে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও বণিকশ্রেণী আর্থিক সহায়তা করেছেন সেখানকার চিত্রশিল্পীদের। বলা হয় ‘এ প্রোডাক্ট অফ দ্য লাইফ অফ দ্য ইটালিয়ান সিটি। ‘ চিত্রশিল্পের গুণগ্রাহী দেশের মধ্যবিত্ত সমাজ ও বণিকশ্রেণী পৃষ্ঠপোষকতা না করলে চিত্রশিল্পের বিকাশ ইতালিতে হতো কিনা সন্দেহ আছে। এঁদের অন্যতম ছিলেন ইতালীয় ব্যাংক পরিচালক ও রাজনীতিবিদ কসিমোডি মেডিচি। রাজতন্ত্র থেকে মুক্ত করে ফ্লোরেন্সের শৈল্পিক কাজে আর্থিক মূলধন নিবেশে তাঁর বড় অবদান আছে। ইতালির চিত্রশিল্পের খ্যাতির অবশ্যই আর এক ঐতিহাসিক কারণও আছে। ইতালির রেনেসাঁ ১৩ শতকে শুরু হলেও বিস্তৃতি লাভ করে ১৬ শতকে। ফলে চিত্রকলার প্রতি একটা আলাদা অনুরাগ সেখানকার মানুষদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
ওয়াইল্ডলাইভ পেন্টার মাউরিজিও বসচেরি বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বন্য প্রাণীর প্রতিকৃতি আঁকেন। ওয়ার্কশপ করেন। বিশ্বের অন্যতম বন্যপ্রাণীপ্রেমী চিত্রকর হিসেবে তিনি খ্যাত। তিনি বলেন, রং আমার ত্বক, ক্যানভাস আমার বৌদ্ধিক চেতনার খাদ্য , আত্মার সংযোগ আর আবেগের প্রতিচ্ছবি আমার মূর্ত হয়ে ওঠে চিত্র সৃষ্টিতে। এ যেন রবীন্দ্রনাথের কথার প্রতিফলন। রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেন আমার চিত্রাঙ্কিত স্বপ্ন এক কাব্যিক কল্পনার দর্শন। রবীন্দ্রনাথও তিনবার ইতালি সফর করেছিলেন।সেবিষয়ে রবীন্দ্রনাথের বর্ণনাও বাঙালিকে ইতালি সম্পর্কে জানার কৌতুহল রচনা করেছে।

ইতালিয়ান এই শিল্পীর পছন্দের রং সবুজ ও হলুদ। এছাড়া কমলা, নীল, লাল ধূসর, সোনালী ও রূপালী । কলকাতায় বাঘের যে ছবি দুটি প্রদর্শিত করলেন সাংবাদিকদের কাছে , সেই ছবিতেও মিলল সবুজ ও হলুদের মেলবন্ধন। শিল্পীর জন্ম ৫ মে ১৯৫৫ সালে ইতালির রভার্তেতোতে। ১৯৯৭সাল থেকে ছবি আঁকায় নিজেকে নিজে স্বশিক্ষিত করে তুলেছেন। অর্থাৎ সে অর্থে তাঁর কোনও শিক্ষক নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে শিল্পী তাঁর ওয়াইল্ড লাইফ চিত্রের প্রদর্শনী করেন। বিশ্ব চিত্রশিল্পীদের আঙিনায় স্কিরা প্রকাশন প্রকাশ করেছে একটি বরেণ্য শিল্পীদের নিয়ে স্মারক। যেটির ভূমিকা লিখেছেন ইতালির বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক ভিত্তোরিও সাগারবি। অ্যানিমেল ইন আর্ট গ্রন্থে শিল্পী মাউরিজিও বসচেরির শিল্পকর্ম নিয়ে লিখেছেন ভ্ল্যাদেক সোয়ালিনস্কি। শিল্পীর তুলির টানে বাংলার বাঘ এক নতুন মাত্রা পেল।

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.