মোহনা বিশ্বাস : ২৭ জুলাই, ২০২০। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্বজুড়ে একটি নতুন রোগের নামের আবির্ভাব হয়েছে তার নাম করোনা। চীন থেকে শুরু করে ইউরোপ আমেরিকা আফ্রিকা সহ সারা বিশ্বে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগের সাথে সাথে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশ তথা আমাদের রাজ্য ও এই মহামারীর শিকার হয়েছে। এই রোগের কবলে পড়ে কোটি কোটি মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। করোনা মানে আতঙ্ক আতঙ্ক, আর আতঙ্ক।
করোনা মহামারী মানে শুধুই একটা অসুখ নয়। করোনা মহামারী মানে লকডাউন। করোনা মহামারী মানে মাস্ক, পিপিই। করোনা মহামারী মানে দূরত্ব। করোনা মহামারী মানে কোয়ারেন্টাইন। করোনা মহামারী মানে হাসপাতাল ঘুরেও কোনো হাসপাতালে অন্য রোগীর ঠাঁই না হওয়া। করোনা মহামারী মানে অনলাইন ক্লাস। আর স্মার্টফোন না থাকলে আত্মহত্যা। করোনা মহামারী মানে পাড়াতে একঘরে হয়ে যাওয়া। করোনা মহামারী মানে মানুষকে অচ্ছুত মনে করা। করোনা মহামারী মানে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার জন্য কেবলমাত্র স্ত্রীকেই পাশে পাওয়া। আর তারপর পরে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করা। করোনা মহামারী মানে পেটের জ্বালায় সন্তানকে বিক্রি করা। করোনা মহামারী মানে শহস্র পথ শুধু হেঁটে চলা। করোনা মহামারী মানে দুমুঠো খাবার আশায় মঞ্চ ছেড়ে পথে নামা। করোনা মহামারী মানে শিক্ষক আজ সব্জি বিক্রেতা। সর্বোপরি করোনা মহামারী মানে মৃত্যুমিছিল।
চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকর্মী, সাংবাদিকের পাশাপাশি করোনা যোদ্ধা আপনি-আমি প্রত্যেকে। কিন্তু তাও কেউ কারোর কথা শুনতে নারাজ। করোনা মোকাবিলায় মুখে একটা গামছা বা ওড়না বা শাড়ির আঁচলই যথেষ্ট। মাস্ক পড়ে কি আর করোনাকে ঠেকানো যায়? এটা ভাবেন আপনারা। অথচ, পাশের বাড়ির কোনো সদস্যের করোনা পজিটিভ ধরা পড়লে তখন দোষ হয় তাঁদের। পাড়ার কাকিমা, জ্যেঠিমা-সহ কিছু মাতব্বররা মুখে গামছা চাপা দিয়ে তখন গোটা এলাকার সকলকে বলে বেরান, “ওরা কেন সাবধান হয়নি আগে থেকে? ওদের বাড়িতে হয়েছে। কেউ ওদের বাড়ির দিকে যেও না। আমরাও যাবো না।”
করোনা মহামারী মানে যদি কেউ বুঝে থাকেন তবে এরকম তাচ্ছিল্য নয়, পজিটিভ রোগীর মনে সাহস জোগানোর চেষ্টা করুন। আর নিজেরাও সন্ধ্যে হলেই বাড়ির সামনে গল্পের আসর না বসিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে একটু ঘরে থাকুন। এতে আপনারাও সুস্থ থাকবেন আর পজিটিভ রোগীও সুস্থ থাকবে।
সকলের মনে রাখা দরকার যে, করোনা মহামারী মানে ভয় নয়। অনেক মানুষের সঙ্গে তো বচসা হয় লড়াইও হয়। তবে এবার ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে দেখান আমরাও পারি। তবেই তো মানব জনম স্বার্থক হবে।
এই সময়ে একে অপরের পাশে থাকুন। সশরীরে না হলেও অন্তত মনের দিক থেকে। সকলে বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করুন।
Be First to Comment