সংগীতা চৌধুরী: কলকাতা, ২ জুলাই, ২০২০।অনেক টালবাহানার পর গত ১১ই জুন থেকে টলিউডে ছোটপর্দার শুটিং শুরু হয়েছে। করোনার প্রকোপে গত তিন মাসে আমাদের পরিচিত জগতটা পুরো পাল্টে গেছে। ‘নিউ নর্মাল’ – এ নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সকলে । গ্ল্যামারের দুনিয়া ও এর ব্যতিক্রম নয়। টলিপাড়ার তারকারা এই নতুন ধারায় নিজেদের কতটা অভ্যস্ত করে তুলতে পেরেছেন কয়েকজন অভিনেত্রীর মুখ থেকেই জানা গেল সেই সব তথ্য। স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘শ্রীময়ী’- র মুখ্য চরিত্রাভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদার জানালেন, “সত্যি কথা বলতে কি প্রথম দিকে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল, কারন এই রকম একটা নতুন জীবনে তো আমরা কেউই অভ্যস্ত নই। সব সময় একটা বাঁঁধো বাঁধো ব্যাপার। বার বার হাত ধোঁয়া আর স্যানিটাইজ করা। যা কিছু ধরছি সবই স্যানিটাইজ করে নিতে হচ্ছে। আমাদের জীবনে এ রকম একটা সময় আসবে তা আমরা কল্পনা ও করতে পারিনি। শুটিংয়ে এসে স্ক্রিপ্ট পড়ার আগে আমাদের কাজ হচ্ছে সবকিছু ঠিকঠাক স্যানিটাইজ হচ্ছে কিনা দেখে নেওয়া। এরপর সেটে যাবার আগে একটা বিরাট প্রস্তুতি থাকে। এই যেমন এই স্যানিটাইজারের বোতল, হ্যান্ডওয়াশ, সারফেস স্যানিটাইজার সবকিছু মনে করে গুছিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এরজন্য প্রথম প্রথম বেশ অস্বস্তি হতো। শট দেওয়ায় সময়ও মনটা ঐদিকে চলে যেত যে সব কিছু ঠিকঠাক হয়েছে তো। আসলে প্রায় আড়াই মাস বাদে এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করলে এ ধরনের মানসিকতা খুবই স্বাভাবিক। তবে আস্তে আস্তে অনেক ধাতস্থ হয়ে গেছি।
এখন আর আলাদা করে মনে রাখতে হয় না, বরং অভ্যেস তৈরি হয়ে গেছে। ওরাও স্ক্রিপ্ট দেওয়ার আগে স্যানিটাইজ করে দেয়। তারপর যেখানে বসে আমরা শট দিই, শটের আগে সে জায়গাটাও স্যানিটাইজ করে দেয়। আবার কিছু স্পর্শ করার হলে আগে স্যানিটাইজ করে দেয়। তবে ওরা স্যানিটাইজ করলেও আমি নিজে আবার স্যানিটাইজ করি। কারন এই দায়িত্বটা এখন সবাইকেই নিতে হবে। আর একটা কথা বলতেই হয় যে প্রযোজকের তরফ থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে থার্মাল চেকিং থেকে শুরু করে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে, ওরা সরকারি গাইড লাইন মেনেই সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করছে।
তাছাড়া সেটে আমি কাউকে মাস্ক আর ফেস শিল্ড ছাড়া ঢোকার অনুমতি দিই না। গিল্ড থেকেও মাঝে মাঝে চেকিং – এ আসে সব কিছু ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা দেখতে। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলেই সাসপেন্ড করে দেওয়া হবে। এত কিছুর পর মনের দ্বিধা অনেকটাই কেটে গেছে, এখন অনেকটা নিশ্চিতভাবে কাজ করতে পারছি। তবে সাবধানতার অটুট বাঁধনে ঢিলে দিলে হবে না।” জি- বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ করুনাময়ী রানী রাসমণি’ – তে রাসমণির চরিত্রাভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া বললেন,
“আজকাল সেটে কাজ করার সময়সীমাটা একটু বেড়েছে, কারন একটা শট টেক হবার পরই স্যানিটাইজ করে পরবর্তী শট টেক হয়। সময় একটু বেশি লাগলেও এটা সবার সুরক্ষার ব্যাপার। এখন সর্বাধিক ছয় জন আমরা একটা শটে থাকতে পারি। সবাই মাস্ক পড়েই ফ্লোরে অপেক্ষা করি, শট শুরু না হওয়া পর্যন্ত। সব রকম সুরক্ষা-বিধি মেনেই কাজ হয়। শুটিং শুরু হওয়ার প্রথমদিকে একটু টেনশন হত, তবে এখন সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। কারন আমাদের সবাইকেই এখন এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। সবাই যে ভাবে নিয়ম মেনে চলছে আমিও সেভাবেই মাস্ক আর স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি, মাঝে মাঝে একটু গরম চা খাচ্ছি। তবে ঠান্ডা কোন খাবার এখন খাচ্ছি না।”
জি- বাংলার আরও একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণ কলি’ – র শ্যামা ওরফে তিয়াসা স্পষ্টই জানালেন, ” ভয় তো সাময়িক একটা লাগবেই কারন করোনা সংক্রমনের এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে। তবে কতদিন আর বাড়িতে বসে চলবে, এখন আমাদের করোনাকে নিয়েই বাঁচতে হবে। তাই আমাদের জীবনে এখন মাস্ক ও স্যানিটাইজার আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। এখন সেগুলোই ঠিক ঠিক ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছি। বার বার করে সবকিছু স্যানিটাইজ করছি। আমার যদি কখনও মনে না থাকে তাহলে পাশের বন্ধু মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারন সবাই একই কাজ করছে। আগে আমরা এই ইউনিটের সব মহিলা শিল্পীরা একটা মেকআপ রুমই শেয়ার করতাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়, শুধু মাত্র ছয় জন দূরত্ব -বিধি মেনে রয়েছি। তাই আমরা এখন আমাদের সেই পুরনো আড্ডা খুব মিস করছি, কিছু করার নেই ‘নিউ নর্মাল’ -এর সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতেই হবে। এখন সবাই নিজেরাই মেকআপ করে মাস্ক পড়ে নিচ্ছি। যারা পারছেন না তাদেরকে মেকআপ ম্যান পিপি ও ফেসলিল্ড পড়ে মেকআপ করিয়ে দিচ্ছেন। একমাত্র শট চলাকালীনই মাস্ক খুলতে হয়। তবে কিছু দৃশ্যে মাস্ক পড়েও শট থাকছে। বর্তমান করোনা আবহে চিত্রনাট্যও নতুন করে সাজানো হয়েছে।” স্টার জলসার ‘কে আপন কে পর’ – ধারাবাহিকে বড়মা কল্যানী মন্ডল, গাইড লাইন মেনে ফিটনেস সার্টিফিকেট জমা দিয়ে তবে কাজ করার পারমিশন পেয়েছেন।
এই সিনিয়র অভিনেত্রীর বক্তব্য, “দুনিয়া কাঁপানো এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন যতদিন না বেরোয়, ততদিন এর হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই। আর এজন্য যদি আতংকে বাড়িতে বসে থাকি তাহলে না খেতে পেয়ে এমনই মারা যাব। তাই অতশত চিন্তা না করে কাজে যোগ দিয়েছি। তবে নিজেকে সুস্থ রাখার নিয়মগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। এই যেমন মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, বারে বারে গরম জল খাওয়া। এখন আগের থেকে কাজ একটু বেড়েগেছে। প্রতিদিন শুটিংয়ের ব্যবহৃত পোশাক বাড়িতে নিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করতে হয়, যে দায়িত্ব আগে ছিল না। যাইহোক বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সকলকেই সমান সচেষ্ট থাকতে হবে।” আমরা অভিনেত্রী আমাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না, যতই অসুবিধা হোক আমাদের প্রিয় দর্শকদের কথা ভেবে অভিনয় চালিয়ে যেতে হবে।
Be First to Comment