জন্মদিনে স্মরণঃ ও ম র খৈ য়া ম
“রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে
প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে
বই, সে তো অনন্ত যৌবনা।”
[ ওমর খৈয়াম ]
বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি একইসাথে একজন দার্শনিক, কবি, গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ। রসকষহীন গণিত নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। আবার তিনিই লিখেছেন মধুর সব কবিতা। কখনো বর্ষ- পঞ্জিকা নিয়েও কাজ করেছেন। আবার কখনো চতুষ্পদী কবিতার অমর সংকলন ‘রুবাইয়াৎ’ রচনা করেছেন ওমর খৈয়াম।
আধুনিক বীজগণিতের ভিত্তি তৈরি হয়েছে তার হাতে। কাজ করেছেন ইউক্লিডীয় জ্যামিতি নিয়েও। ভূগোল, বলবিদ্যা, খনিজবিজ্ঞান, আইন, এমনকি সঙ্গীতও বাদ যায়নি তার জ্ঞানপিপাসার তালিকা থেকে। জীবনের শেষ দিকে এসে হয়েছেন শিক্ষক; শিক্ষাদান করেছেন ইবনে সিনার দর্শন ও গণিত বিষয়ে। তিনি সত্যি অসাধারণ, অতুলনীয়, অনুপম; তিনি ওমর খৈয়াম।
তার বাবা ইব্রাহিম খৈয়াম ছিলেন বিখ্যাত চিকিৎসক। তার মায়ের নাম জানা যায় না।
ওমর খৈয়াম ভাগ্যবানই ছিলেন বলা চলে। কারণ তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্মগ্রহণ করেন। সে যুগে ইসলাম ছিল সকল ধরনের গোঁড়ামি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা বিবর্জিত। আর মুসলমানরাও ছিল মুক্তমনা ও জ্ঞানপিপাসু। ওমরের বাবা ইব্রাহিমও তেমনই একজন মুসলিম ছিলেন, যিনি ছেলের জন্য জরাথ্রুস্টর ধর্মে বিশ্বাসী এক শিক্ষক বামান্যর বিন মারযবানকে নিয়োগ দেন। এই বামান্যরই কিশোর ওমরকে গণিত, বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষা দেন।
১০৬৬ সালে, অর্থাৎ যে বছর ওমর আঠারো বছরের কিশোরে পরিণত হন, সে বছরই তার পিতা এবং শিক্ষক উভয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পিতা এবং পিতৃতুল্য শিক্ষকের মৃত্যুতেও ভেঙে না পড়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি।
১০৬৮ সালে তিনি সমরখন্দে চলে আসেন। সেখানে তিনি তার বাবার বন্ধু ও সে শহরের গভর্ণর আবু তাহিরের অধীনে কাজ শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওমরের অসাধারণ গাণিতিক জ্ঞান দেখে তাকে সরকারি অফিসে চাকরি দেন তাহির। এর কয়েক মাস পরই ওমর রাজার কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। এই সময়ে তিনি বীজগণিত চর্চা করতে থাকেন।
বীজগণিত দিয়েই নিজের গবেষণা জীবন শুরু করেন খৈয়াম। ১০৭০ সালে তিনি তার জীবনের অন্যতম সেরা কাজ, ‘ডেমনস্ট্রেশন অব প্রবলেমস অব অ্যালজেবরা অ্যান্ড ব্যালেন্সিং’ প্রকাশ করেন।
ওমর খৈয়াম একজন অসাধারণ কবি ছিলেন। তার ‘রুবাইয়াৎ’ পড়লে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। এটি একটি কবিতা নয়, শত শত কবিতার সংকলন। ইতিহাসবিদ সাঈদ নাফসির মতে, ‘রুবাইয়াতে’ প্রায় ২,০০০ চতুষ্পদী কবিতা আছে, যেগুলোর সব বর্তমানে পাওয়া যায় না। তবে সর্বনিম্ন সংখ্যাটিও বলে, ওমর প্রায় ১২০০ এর মতো চতুষ্পদী কবিতা লিখেছেন। তার এই কবিতার সংকলন ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবহেলিতই ছিল।
১৮৫৯ সালে এডওয়ার্ড ফিটজগেরাল্ড এই কবিতা সংকলনের ইংরেজি অনুবাদ ‘রুবাইয়াৎ অব ওমর’ প্রকাশ করলে ওমরের কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার কবিতাগুলো পশ্চিমা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। এমনকি তার নিজ দেশের চেয়েও বেশি!
ওমর খৈয়ামের জীবনের অনেক দিকই আমাদের অজানা। তার অনেক কাজও দুর্ভাগ্যজনকভাবে হারিয়ে গিয়েছে কালের স্রোতে।
১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর ওমর খৈয়াম তার জন্মস্থান নিশাপুরে মৃত্যুবরণ করেন।
দীর্ঘকাল তার কবরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৯৬৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে তার কবর খুঁজে পাওয়া যায় এবং তা নিশাপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সে স্থানটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
ওমর খৈয়াম ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিনে (১৮ মে) পারস্যের বিখ্যাত বাণিজ্যিক শহর নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment