Press "Enter" to skip to content

এস এম সুলতান— একটি নাম। একটি প্রতিষ্ঠান। যার যাত্রা সৎ এবং মহৎ কবির মতো সেই পথেই, যে পথ নির্জন। নিঃসঙ্গ। কিন্তু প্রকৃতির মতোই বাতাসে ভরা……।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ শিল্পী এস এম সুলতান

বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁকে আমরা জানি ঝড়ের পাখি হিসেবে। তিনি হলেন সেই রকম এক হতভাগ্য মানুষ অঙ্কের নিয়মে দুই যুক্ত দুই-এর যোগফল শৃংখলাময় চার-এর পরিবর্তে জীবন যাকে উপহার দিয়েছে বিধ্বস্ত ডানা-ঝাপটানোর সাত-পাঁচ।

সভ্যতার পক্ষে অনুপযুক্ত, সমাজের পক্ষে অ-নিরাপদ, জীবন যাপনে যাযাবর, অনিয়মে আগ্রহী, প্রথায় বীতশ্রদ্ধ, আপাত- কুশ্রীতার ভিতরে সত্য এবং সৌন্দর্য সন্ধানী, সারল্যে শিশু, আবেগে যুবক, কবির মতো কল্পনা এবং সম্রাটের মতো সৃষ্টি— বহু বৈপরীত্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই রকম একটি মানুষের নাম এস এম সুলতান।

এস এম সুলতান— একটি নাম। একটি প্রতিষ্ঠান। যার যাত্রা সৎ এবং মহৎ কবির মতো সেই পথেই, যে পথ নির্জন। নিঃসঙ্গ। কিন্তু প্রকৃতির মতোই বাতাসে ভরা। আলোতে উজ্জল। ছায়াতে আন্দোলিত। জীবনের স্পন্দনে মর্মরিত। আলো-অন্ধকারময় এক অবিশ্বাস্য আধ্যাত্মিকতায় উন্মোথিত।

শিল্পের এক নিজস্ব ভূবন নির্মাণ করেছেন প্রায় আয়াশহীন নিরন্তর প্রচেষ্টার মধ্যে। তাঁর ছবির যে প্রকৃতি তা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের— আবার বিশ্বেরও। তাঁর ছবির রমণীরা এক আপ্লুত যৌবনের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ তা বাংলাদেশের গ্রামীণ রমণীর প্রতিমূর্তি হয়েও এমন এক পৃথিবীর অধিবাসী— যা এস এম সুলতানের একান্ত নিজস্ব নির্মাণ। তাঁর চিত্রাবলীতে যে পেশীবহুল পৌরুষের ঔজ্জ্বল্য তাও বাংলাদেশের গ্রামীণ নিয়ত কর্মচঞ্চল কৃষকেরই প্রতিনিধি।

সুলতান জীবনে এবং শিল্পকর্মে ছিলেন অস্থিরচিত্ত, বিবাগী। শৈশবে ডাক নাম ছিল লাল মিয়া। রাজমিস্ত্রি পিতা শেখ মেছেরের ফরমায়েসী সাগরেদ হিসেবে তাঁর হাতে খড়ি ইট পাথরের কাজে। আবার স্কুলেও পড়েছেন।

স্বভাব শিল্পী হিসেবে বাল্যবয়সে পৌঁছে ছিলেন কলকাতা আর্ট স্কুলের শিক্ষাঙ্গনে। শিশু চোখে পিতাকে দেখেছিলেন, বিশাল ইমারতের নির্মাণ কর্মে দক্ষ পুরোহিত হিসেবে। পরে সুলতানের নিজস্ব বিশেষ ঝোঁক ছিল বিশাল ক্যানভাসে লোকজীবনের স্মৃতিচিত্র রচনায়।

প্রকৃতির শোভা আর মানুষের কলরব নিয়ে ছোট বড় অজস্র ছবি এঁকেছেন তিনি সারাজীবন ধরে। ব্যাকারণ মেনে চলেন নি। নিয়মিত শিক্ষার শৃঙ্খলাকেও শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে পারেন নি। হাতে কলমে আশৈশব যে সব ছবি এঁকে গেছেন, তাতে প্রথমে মানুষের চেহারা, তারপর প্রকৃতির, শেষে কল্পনায় জীবন স্মৃতি তার উপজীব্য।

সুলতানের বিচিত্র জীবন। তিনি গতানুগতিকভাবে আর্ট কলেজের পরীক্ষায় পাশ করে বের হন নি। নিয়মিত ছবি এঁকে প্রদর্শনী করেন নি। কোথাও তাঁর কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না। চিরকুমার এই শিল্পী গৈরিক শাড়ী পরে, রাধা হয়ে বৈষ্ণব লীলার আধ্যাত্মরসে মগ্ন থেকেছেন। নেশা করেছেন কসমিক রিয়্যালিটির সত্য অনুভবের জন্যে। মিশতেন সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষদের সঙ্গে আপনজন হয়ে।

তাঁর ছবির বিষয় ছিল বড় বেশী গ্রাম্য। আদিম মানুষের মতো তাঁর ছবির মানুষগুলো অপরিচিত। সব মিলিয়ে সুলতান বাংলাদেশ তথা এই উপমহাদেশের চিত্রকলার এক নতুন ঐতিহ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।

এস এম সুলতান ১৯২৩ সালের আজকের দিনে (১০অগাস্ট) নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.