Press "Enter" to skip to content

এবার ফুল বিজুর প্রধানতম প্রার্থনা ছিল করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তিলাভ করা…..।

Spread the love

আজ বৈসাবি উৎসব

বাবলু ভট্টাচার্য : বৈসাবি বাংলাদেশে তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব। বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু– এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামের উৎপত্তি। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করে বাংলা নববর্ষ। পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় তারা।

বর্ষবরণ উৎসবকে ত্রিপুরারা ‘বৈসু’, মারমারা ‘সাংগ্রাই’ ও চাকমারা ‘বিজু’ বলে অভিহিত করে এবং এগুলি বৈসাবি নামে পরিচিত। সাধারণত বছরের শেষ দুইদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি পালিত হয় বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়।

ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম বৈসু। বৈসু উৎসব এদের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব।

বৈসু উৎসবের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা ঘরদোর লেপেপোঁছে। বসতবাড়ি কাপড়চোপড় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে। ত্রিপুরারা বিশেষ একপ্রকার গাছের পাতার রস আর হলুদের রস মিশিয়ে স্নান করে। ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। গবাদিপশুদের স্নান করানো হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয়। তরুণ-তরুণীরা প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়। দেবতার নামে নদীতে বা ঝর্ণায় ফুল ছিটিয়ে খুমকামীং পূজা দেওয়া হয়।

সবাই গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাচন, সেমাই ও মিষ্টি খায় এবং কলাপিঠা, চুয়ান পিঠা, জাল পিঠা, উন পিঠা ও মায়ুং পিঠা খায়। সারাদিন ঘরের দরজা খোলা থাকে। এতে গৃহস্থের কল্যাণ হবে বলে মনে করা হয়।

মারমা’রা পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার উৎসবকে ‘সাংগ্রাই উৎসব’ বলে। তারা বৈশাখের প্রথম দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালন করে বাংলা নববর্ষ। পাচন, পিঠা এবং নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন করে মারমা জনগোষ্ঠী। সবাই নতুন পোশাক পরে, একে অপরের বাড়ি যায় এবং কুশল বিনিময় করে। সববয়সের নারীপুরুষ সম্মিলিতভাবে নাচ আর গানে মেতে উঠে।

মারমা জনগোষ্ঠীর এ দিনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে জল খেলা। মারমা ভাষায় জল অনুষ্ঠানকে বলা হয় রিলংপোয়ে। বাড়ির আঙিনায় আগে থেকে জল খেলার জন্য প্যান্ডেল তৈরি করা থাকে। মারমা যুবকরা বাদ্য আর গানের তালে তালে এসে উপস্থিত হয় অনুষ্ঠানস্থলে। সেখানে ফুলে ফুলে সজ্জিত প্যান্ডেলের ভিতরে জল নিয়ে অপেক্ষায় থাকে মারমা তরুণীরা। চলে যুবক-যুবতীদের একে অপরের প্রতি জল ছিটানো। জলকে পবিত্রতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা জল ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নেয়।

চাকমাদের বর্ষবরণ উৎসব হলো ‘বিজু’। এরা তিন ভাগে ভাগ করে বিজু উৎসব পালন করে। চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ফুল বিজু, ৩০ তারিখে মূল বিজু এবং বৈশাখের প্রথম দিনে গজ্যাপজ্যা বিজু নামে অনুষ্ঠান পালন করে। ফুল বিজুর দিন গভীর অরণ্য থেকে ফুল সংগ্রহ করে চারভাগে ভাগ করে একভাগ ফুল ও নিমপাতায় ঘরবাড়ি সাজায়, দ্বিতীয়ভাগ ফুল বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে প্রার্থনা করে ও ভিক্ষুসংঘ কতৃক  প্রদত্ত ধর্মোপদেশ শ্রবণ করে, তৃতীয়ভাগ ফুল নদী, খাল বা পুকুরের পাড়ে তৈরি পূজামন্ডপে রেখে প্রার্থনা করে এবং চতুর্থভাগ ফুল প্রিয়জনকে উপহার দেয় এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়।

মূল বিজুর দিনে অসংখ্য কাঁচা তরকারি সংমিশ্রণে পাচন বা ঘণ্ট তৈরি করা হয়। এছাড়া পায়েস ও নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা হয় এবং মাছ-মাংস রান্না করা হয়। বিন্নি ধানের খই, নাড়ু, সেমাই ও পাহাড়ি মদও থাকে। এই দিনে চাকমারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে র‌্যালিতে যোগ দেয়। অবালবৃদ্ধবনিতা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় এবং শিশু- কিশোর তরুণ-তরুণীরা খেলাধুলায় মেতে উঠে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর, উঠান ও গোশালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করা হয়। মন্দিরে গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে ফুল দিয়ে বুদ্ধের পূজা করা হয়।

নদীতে ফুল ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী ‘বৈসাবি’ উৎসব।

আজ (মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল) ভোরে সবার মঙ্গল কামনায় কলাপাতায় করে ভক্তি শ্রদ্ধাভরে গঙ্গাদেবীর  উদ্দেশ্যে চেঙ্গী নদীসহ বিভিন্ন প্রবাহমান ছড়া-খালে ফুল ভাসিয়ে দিনটি উদযাপন করছেন পাহাড়ি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা।

এবার ফুল বিজুর প্রধানতম প্রার্থনা ছিল করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তিলাভ করা। এছাড়া পুরোনো বছরের দুঃখ গ্লানি ভুলে নতুন বছরে ভালো কিছু প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন পাহাড়িরা।

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.