সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কলকাতা, ১৫ এপ্রিল ২০২২। ১লা বৈশাখ নববর্ষ কবে চালু হলো, তা নিয়ে দুটি মতবাদ আছে। একটি হলো, আকবর বাংলায় বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিকে সূচনা করেন সভাসদ টোডরমলের পরামর্শে। কারণ কর আদায়ের সুবিধা। প্রাচীনকালে পৃথিবীর বহু দেশের মত আমাদের দেশে বা বাংলায় নিজের রাজত্বের সময়সীমাকে স্মরণীয় করতে অব্দ বা সন গণনা চালু করেন রাজারা। অবতার পুরুষের আবির্ভাবের দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে অব্দের প্রবর্তন করা হয়। শকাব্দ, বঙ্গাব্দ, হিজরি অব্দ, খ্রিষ্টাব্দ, গৌরাব্দ , চৈতন্যাব্দ ইত্যাদি। ১লা বৈশাখ সাধারণত হয় ইংরেজি বছরের হিসেবে ১৪ বা ১৫ এপ্রিল। ফতেউল্লাহ শিরাজির পদ্ধতি ছিল সূর্যের মহাবিষুব রেখার স্থিতি থেকে। যখন বঙ্গাব্দ চালু হলো তখন ১৪ এপ্রিল ছিল সূর্যের মহাবিষুব স্থিতি। আজ যা এগিয়ে এসেছে ২১মার্চ। ফলে গণনায় পার্থক্য হয়েছে ২৩দিনের। অয়ন বিন্দুর একদিন সরণ হতে যেহেতু সময় লাগে প্রায় ৭২বছর, তাই ২৩ দিনের পার্থক্য হতে সময় লেগেছে ২৩×৭২ মোটামুটি ১৬০০ বছর। অর্থাৎ ৪০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ।সুতরাং বৈশাখ মাস আর বঙ্গাব্দের প্রথম মাস নয়।প্রথম মাস এখন গণনার হিসেবে চৈত্র।
বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজিকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের নববর্ষের গণনাগত ত্রুটি দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় বর্ষের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তাঁর দাবি মেনে ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন। ১৯৫৭ সালের ২২ মার্চ বাংলার ১৮৭৯ বঙ্গাব্দের পয়লা চৈত্র নববর্ষের প্রথম দিন ধার্য হয়। একটা সময় ছিল, অগ্রহায়ণ মাসে মাগশীর্ষ অর্থাৎ বছরের প্রথম মাস ধরা হতো। মাগশীর্ষ শব্দটির উৎস মৃগশিরা নক্ষত্র থেকে।অর্থাৎ মৃগশিরা নক্ষত্রে চন্দ্রের অবস্থিতিকালে যদি পূর্ণিমা হয়, তাহলে সেই মাস মাগশীর্ষ। মজার কথা, চৈত্রের শুক্লা প্রতিপদে মারাঠিরা পালন করেন গুড় পড়ওয়া, কানাডিগা। তেলেগুরা উগাড়ি বা যুগাদি সিন্ধিরা চৈতি চাঁদ, কাশ্মিরীরা নওরোজ। একমাত্র বাংলা, অসম, ত্রিপুরা,বাংলাদেশ ও নেপালেই বৈশাখে নববর্ষ পালিত হয়।
ঐতিহাসিকরা কেউ বলেন, কুষাণ বংশের সেরা রাজা কণিষ্ক ৭৮ খ্রিষ্টাব্দে শকাব্দ নামে একটি সন প্রচলন করেন। এই কারণেই শকাব্দের সঙ্গে ৮২ যোগ করলে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ মেলে। বঙ্গাব্দের সৃষ্টিকর্তা রাজা শশাঙ্ক। তাঁর রাজত্ব কাল ছিল ৫৯৩-৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। তাঁর রাজ্যাভিষেকের বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বঙ্গাব্দের সূচনা হয়। সেই কারণে চলতি বঙ্গাব্দ ১৪২৭এর সঙ্গে ৫৯৪যোগ করলে মেলে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ। বাংলায় একটা সময় অগ্রাহয়ন মাস ছিল নববর্ষ।১লা অগ্রহায়ণ। পৌষ সংক্রান্তি হতো বছরের শেষ দিন। উৎসব পালিত হতো পিঠেপুলির উৎসব দিয়ে। যা কৃষি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। রাজা শশাঙ্কের আমলে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটি নতুন বছরের দিন নির্ধারণের কারণ বর্ষায় পাট তিল, ভাদ্রে আউশ ধান, কার্তিকে কলাই, অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে নতুন ধান ও ফাল্গুন চৈত্র মাসে রবি শস্য ফলনের মধ্য দিয়ে বছরভর চাষের সমাপ্তি হয়। রাজস্ব আদায়ের সেরা সময় তাই বৈশাখ।
সম্রাট আকবরের সিংহাসন প্রাপ্তি ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন রাজ্যে ছিল বিভিন্ন সময়ে নববর্ষ। মোঘল সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো মুসলিম হিজরি সন মেনে।৬২২ খ্রিষ্টাব্দে ২২ জুলাই মক্কা থেকে প্রাণরক্ষার কারণে হজরত মুহাম্মদ মদিনা চলে আসেন ।এই ঘটনার ১৬বছর পর হজরত ওমর ইসলাম এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি চান্দ্র অব্দের চল সৃষ্টি করেন। এই সনের নাম হয় হজরতের নামে। হিজরি সন।১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে নবদ্বীপ ও গৌড় জয় করে বখতিয়ার খিলজি বাংলায় হিজরি সন চালু করেন।বাংলার হিন্দুরা কিন্তু তখন শকাব্দ পালন করতেন।
সম্রাট আকবর দেখেন চন্দ্র গণনায় হিজরি সনের নববর্ষ প্রতি বছরেই বিভিন্ন সময়ে পড়ে। ফলে রাজস্ব আদায়ে সমস্যায় বিকল্পের সন্ধান করেন। তাঁর রাজ্যসভার রাজজ্যোতিষী ও বিশিষ্ট পণ্ডিত আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজিকে সৌর গণনাভিত্তিক একটি নতুন ফসলি সন নির্মাণের নির্দেশ দেন।পণ্ডিত সিরাজি সম্রাটের সিংহাসন প্রাপ্তির বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে হিসেব কষে দেখলেন বঙ্গাব্দ ও হিজরি সনের ব্যবধান ২৯ বছর। তাই হিজরি সনের সঙ্গে ২৯ বছর যোগ করে প্রস্তুত করলেন নতুন সৌর সন। অর্থাৎ আকবরের সিংহাসন প্রাপ্তির বছর ১৫৫৬_৬২২=৯৩৪ হিজরি সন যোগ করেন ২৯ বছর। ফল হলো ৯৬৩ বঙ্গাব্দ।১৫৫৬_৫৯৩=৯৬৩।
১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল ছিল ১ লা বৈশাখ।বঙ্গাব্দের প্রচলন হলো ভারত জুড়ে। নামকরণ হলো ‘তারিখ ইলাহি’। প্রজারা বলতো আকবরী সন। এরপর থেকে বাংলার জমিদার আর ব্যবসায়ী বণিকেরা এই নববর্ষ মানতে শুরু করেন। জমিদাররা রাজস্ব আদায় করেন এবং ব্যবসায়ীরা দেনা পাওনা বুঝে প্রজাদের পেটপুজো করাতেন। স্রেফ বেনিয়া বৃত্তি বদলে গেল উৎসবে। এই উৎসবের আড়ালে রাজস্ব আদায়ের পন্থাটিকে সামাজিক রূপ দিতে সফল হন নদীয়ার রাজা গোপাল ভাঁড় খ্যাত কৃষ্ণচন্দ্র। তিনি পংক্তিভোজনের পাশাপাশি রাজবাড়িতে গানবাজনা, কাব্য সম্মেলন এমনকি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসাতেন। আমন্ত্রিত হতেন গণ্যমান্যদের সঙ্গে প্রজারাও। আমন্ত্রিত হতেন লর্ড ক্লাইভ,বর্ধমানের রাজা কৃষ্ণরাম, শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ প্রমুখ।
বর্ষপঞ্জি যেমন ছিল, তেমন ছিল তিথি নক্ষত্রের হিসেব ব্রাহ্মণেরা হাতে লিখে রচনা করতেন পঞ্জিকা।সেখানে থাকত তিথি নক্ষত্রের হিসেব। জমিদাররা বিবেচনা করেন ব্রাহ্মণদের হাত থেকে এই পঞ্জিকার সত্ত্ব নিজেদের হাতে রাখা দরকার।তাই রাজসভায় মাস মাইনের পণ্ডিতদের নিয়ে পঞ্জিকা লেখানো শুরু করেন। ক্রমশঃ পঞ্জিকা প্রজাদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।বাঙালি মুসলিমরাও তাঁদের বৃহৎ মোহাম্মদী পঞ্জিকা ও খ্রিস্টানরা খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা লেখা শুরু করেন।কলকাতার বটতলার বাজার ছিল কাঠখোদাই এর বইয়ের। ছাপা শুরু হলো পঞ্জিকার। বিক্রি হতে লাগলো হাজারে হাজারে। ফলে চাহিদা পূরণে নানা নামে নানা পঞ্জিকার ভিড় বাড়তে লাগলো বটতলায়। আজও সেই ট্র্যাডিশন চলছে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের হিসেব বলছে, সেবার বাংলায় পঞ্জিকা বিক্রি হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ কপি। এখনও তার বিক্রি আকাশছোঁয়া। কিন্তু ভিন্ন পঞ্জিকার ভিন্ন হিসেব। মানুষ হচ্ছেন চূড়ান্ত বিভ্রান্ত। কারণ গণনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বিজ্ঞানের হিসেব বলছে, এমন যদি চলতে থাকে আজ থেকে ৯৫০বছর পর বাংলা নববর্ষের তারিখ পড়বে ১লা মে। অর্থাৎ মে দিবসের সাথে পালিত হবে বাংলা নববর্ষ। তারপর কোনও একদিন আসছে যখন নববর্ষ হবে জুন মাসে।
একটু খতিয়ে দেখা যাক। আকবরের আমলে বাংলা নববর্ষ হয় ১১ এপ্রিল। পরবর্তী সময়ে অধিমাস (লিপ ইয়ার) ও মল মাসের গাণিতিক সঙ্কটে এখন বাংলা নববর্ষ হচ্ছে ১৪ বা ১৫ এপ্রিল।বাংলাদেশ আইন করে ১৪ এপ্রিল নববর্ষের দিন ধার্য করেছে। কিন্তু এপার বাংলায় সমস্যা মেটেনি। ফলে ১০০ বছরে ২৫ টি অধিবর্ষ’র বদলে অধিবর্ষ হচ্ছে ২৬ টি। অর্থাৎ চারশ বছরে ১০০ র বদলে অধিবর্ষ হবে ১০৩ টি। ফলে চার হাজার বছর পর বাংলা নববর্ষ হবে এপ্রিলের বদলে জুন মাসে। বিজ্ঞানের গণনাকে অবজ্ঞা করে শুধু সংস্কারের গণনায় তৈরি পঞ্জিকা কেনা মানে পয়সার বরবাদ।
বাংলাদেশে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ শহী দুল্লাহ’র বৈজ্ঞানিক গণনা মেনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন (অধুনা বাংলাদেশ) পঞ্জিকা সংস্কার করে। স্থির হয়, বৈশাখ থেকে ভাদ্র প্রতিমাসের দিন হবে ৩১দিন। আশ্বিন থেকে চৈত্র হবে ৩০ দিন। ফলে শুধু নববর্ষ নয়, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, পৌষ সংক্রান্তি এপার বাংলায় একদিন আগে পালিত হয়।এমন ভুল পথে যে পঞ্জিকা গণনা হচ্ছে সেকথা বলেছিলেন, বিশিষ্ট গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। আগেই বলেছি, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় পঞ্জিকা নির্মাণের জন্য একটি কমিটির প্রধান করেন মেঘনাদ সাহাকে। তিনি ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে পঞ্জিকা সংস্কার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পেশ করেন। সেখানে তিনি ১ লা চৈত্র বছরের প্রথম দিন নতুন বছরের প্রথম দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু সেই পঞ্জিকা কার্যকর হলো না কোনও অজ্ঞাত কারণে।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার অধ্যাপক এস পি পাণ্ডের সভাপতিত্বে আর এক পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি গঠন করে। পান্ডে কমিটি ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে রিপোর্ট পেশ করে। এই গণনা বিশ্লেষণ সাহা থিওরি নামে পরিচিত হয়। যদিও কিছু পরিবর্তনও করা হয়। ভারত সরকার ২০০২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে তা গ্রহণ করে। বাংলার নববর্ষ আঞ্চলিক হিসেবে ১৪ এপ্রিল স্থির হয়। দিন গণনার ক্ষেত্রে রাত ১২ টা স্থির হয়। ফাল্গুন মাসের ৩১ তারিখ হবে অধিবর্ষ হিসেবে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত ব্যবহারিক জীবনে প্রভাব ফেলেনি।
কারণ বাংলার পঞ্জিকা নির্মাণকারী প্রকাশকরা সেই প্রাচীন সংস্কারপন্থী গণনাতেই আস্থা রেখে পঞ্জিকাকে বিজ্ঞানসম্মত করছেন না। বাংলা পঞ্জিকা তৈরি হয় সৌর গণনার ভিত্তিতে। সূর্য সিদ্বান্ত মতে, ১বছর ৩৬৫.২৫৮৭ দিন। কিন্তু ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ১ বছর ৩৬৫.২৪২২ দিন। বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেবে একদিন০.০১৬৫৫৬দিন যা ২৪মিনিট২৪ সেকেন্ড বেশি।ফলে হিসেবের গরমিল থেকেই যাচ্ছে।
ধর্মীয় নিদানে হিন্দু বাঙালি ব্যবসায়ী লক্ষ্মী গণেশের পুজো করেন লাল খেরোর খাতায় স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে আর কাঁচা টাকা সিঁদুরে ছাপ দিয়ে। কিন্তু বাংলায় লক্ষ্মী আর গণেশের তেমন মন্দির নেই। তাই এই যুগল দেবতার পুজো হয় কালী মন্দিরে বা শিবমন্দিরে। আজকাল অবশ্য খেরোর খাতার বদলে ই কমার্সের দৌলতে কম্পিউটার এর শরীরে লেপা হচ্ছে সিঁদুর। ব্যবসায়ীর লক্ষ্মীপুজোর একটা যুক্তি আছে। তিনি অর্থ ও প্রাচুর্যের দেবী। যা ব্যবসায়ীর কাম্য।কিন্তু গণেশ? হিন্দু শাস্ত্রে গণেশকে বলা হয়েছে সিদ্ধিদাতা। শুভ লাভের দেবতা। সত্যিই কি তাই? খ্রিস্টের জন্মের ৪০০ বছর আগে রচিত মানবগুহ্য সূত্রে বলা হয়েছে, বিঘ্নকারক দেবতা। যেখানে বলা হয়েছে, গণেশের দৃষ্টিতে লোকের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই কুমারীর বিয়ে হয় না। বিবাহিতের সন্তান হয় না। সন্তানবতীর সন্তান হয় না। রাজা রাজ্য হারায়। চাষীর ঘরে ফসল ওঠে না। ব্যবসায়ীর লাভ হয় না।
প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন এই উল্টাপুরান? ঐতিহাসিক মতে, হাতি ফসল খেয়ে চাষীর ক্ষতি করত। তাই হাতি ছিল অনিষ্ঠ প্রাণী। সেই অর্থে শূদ্রদের আরাধ্য দেব গণেশ ব্রাহ্মণ্যবাদে ব্রাত্য দেবতা। গণেশতন্ত্রে বলা হয়েছে, গজানন সুরা ও নারীতে আসক্ত। গণেশ যে কর্মসিদ্ধির দেবতা নন, একথা ঐতিহাসিক অতুল চন্দ্র গুপ্তও লিখে গেছেন। তাই কি হিন্দু ধর্মের কোনও গ্রন্থেই ১ লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের উল্লেখ নেই। বরং নববর্ষের শুভ দিন হিসেবে উল্লেখ আছে ১ লা বৈশাখের কয়েকদিন পর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। সেদিন পৌরাণিক মতে সত্য যুগের সৃষ্টির দিন। অনেক বাঙালি তাই নববর্ষ পালন করেন এই অক্ষয় তৃতীয়ার তিথিতে। হিন্দু ধর্মে গনেশ ব্রাত্য দেবতা। তিনি ব্রাহ্মণ নন। ক্ষত্রিয়ও নন। তাই গলায় নেই চিরাচরিত পৈতে। তিনি পরেন নাগ সাপের পৈতে। বলা হয় নাগপোবীত। গীতায় ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ছাড়া বাকিদের শুদ্র বলা হয়েছে। তাই বৈশ্য সম্প্রদায়ও শুদ্র বর্ণ । ঋক বেদেও বাংলাকে মেলেচ্ছ স্থান পাপভূমি হিসেবে চিহ্নিত। সে অর্থে ব্যবসায়ীরাও শুদ্র। তাই কি ব্যবসায়ীর গণেশ পুজো?
হাল আমলে বাংলার বানিজ্য শুধু এক গল্প। তাই লক্ষ্মীর আরাধনা বাড়লেও গণেশ ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। আজ কজন বাঙালি বলতে পারবেন আগামী বাংলার নববর্ষে কত সন আসতে চলেছে? অধিকাংশই বলতে পারবেন না।কারণ নাকি জীবনযাত্রার কাজে বাংলার সনের কোনও প্রয়োজন নেই। বাংলা সন টিঁঁকে আছে কেবল ১লা বৈশাখ,২৫ শে বৈশাখ, পৌষ সংক্রান্তি এবং চৈত্র সংক্রান্তিতে। রবিকবি বোধহয় ভুল বলেননি। ‘রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি।’
।
Be First to Comment