প্রবীর রায় : অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। ২৪ জুলাই ২০২৪। স্যার চার্লস চ্যাপলিনের নাম মাথায় রেখেই বলছি একজন সিনেমার অভিনেতা মৃত্যুর ৪২ বছর পরেও একটা ২০ কোটি জনসমৃদ্ধ জাতির নয়নের মণি হয়ে আছেন। এত আবেগ এত জনপ্রিয়তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
ইদানীং লক্ষ্য করছি এই বিপুল জনপ্রিয়তাকে আঘাত করার জন্য কিছু ফড়ে পণ্ডিত ফাঁকতালে নাম কেনার জন্য গবেষণার ছদ্মনামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যেকথা লিখছেন বা লেখাচ্ছেন। ভাগ্যিস সত্যজিৎ রায় অনেক প্রশংসা করেছেন তাই হয়ত অনেকে কুৎসা রটাতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেক পুরোনো কথা যা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং তাঁর জীবিত কালে শোনা যায়নি সেগুলো বাজারে ছাড়া হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস ।
আমি তাঁর অগ্নিপরীক্ষা, সাগরিকা ছবি থেকে ওগো বধূ সুন্দরী পর্যন্ত প্রায় সব ছবি রিলিজ হওয়ার পরই হলেই দেখেছি। পরবর্তী কালে একাধিকবার দেখেছি। কয়েকটি ছবি মাত্র একবার দেখেছি। যেমন মানময়ী গার্লস স্কুল, নেকলেস, চন্দ্রনাথ ,শিকার লক্ষহীরা, যাত্রা হল শুরু কান্না ইত্যাদি । সব নাম মনে নেই। রবীন্দ্রনাথের পর বোধহয় উত্তমকুমারই বাল্যকাল থেকে সারা জীবনব্যাপী আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছেন।
একজন সাধারণ মাপের অভিনেতা কিভাবে নিষ্ঠা ও সাধনার মাধ্যমে শীর্ষে উঠতে পারেন ভাবা যায় না। হাতকে তিনি ঠিকমত ব্যবহার করতে পারেন কোন আড়ষ্ঠতা নেই। হাত দুটোকে কখন কোথায় কিভাবে রাখতে হবে বা ব্যবহার করতে হবে সেটা সহজ কাজ নয়। তাঁর চোখের কত রকম অভিব্যক্তি !রোমান্টিক চোখ,লম্পটের চোখ। তাছাড়া ক্রোধ ,শোক ,দৃঢ়তা বিনয় ক্যাবলামি ইত্যাদি নানা রকমের চোখ। ভাবুন সব্যসাচী বাঘবন্দি খেলা শঙ্খবেলার চোখ । কে পারবে বলুন ?
আর হাঁটা ? সে এক বিস্ময়! হারানো সুরে প্রথম দিকে একরকম হাঁটা , শেষে অন্য রকম। স্ত্রী তে হাঁটা দেখুন, আবার সাহেব বিবি গোলামে দেখুন। অনবদ্য! অনেক বড় অভিনেতা তো হাঁটতেই জানেন না। এখন তো কম্পিউটার হাঁটাচ্ছে ।
প্রেমিকাকে (সে যুগে) বুকে টেনে জড়িয়ে ধরতে উত্তমকুমারের কোন আড়ষ্ঠতাই নেই,জুড়িও নেই । উচ্চারণটা দেখুন । কত স্পষ্ট ! আর টেল ড্রপ তো হয়ই না যেটা প্রায় সকলেরই হয়। আর বাচনভঙ্গিটাও কি সুন্দর এবং সাবলীল !রাজা সাজা মনে আছে? শেষের আদালতের দৃশ্যে কত বড় ডাযলগ ! হ্রদ দেখেছেন? বোধহয় ভুলে গেছেন । গানের লিপিং শ্রেষ্ঠ |
মুখমণ্ডলকে না নড়িয়ে স্থির রাখতে বা আস্তে আস্তে ঘোরাতে কে পারবে তাঁর মত ?।রাজকুমারী বা শহরের ইতিকথা শেষ দৃশ্যগুলো মনে আছে ? নাকি এর মধ্যে ভুলে গেলেন! খুব সিরিয়াসলি হাসির রোলে তাঁর জুড়ি নেই। অভয়ের বিয়ে, ওগো বধু সুন্দরী রাজা সাজা নিশ্চয়ই দেখেছেন । কত আর বলব ! তাঁর কাছাকাছি কেউ যেতে পারল না । এর মধ্যে একজন আবার কমেন্ট করে বসলেন একটা পোস্টে “উত্তমকুমারের অভিনয় না কি বহুমুখিতা”নেই ! বিরাট অভিনয় বিশেষজ্ঞ এসেছেন সব !
যাই হোক আজ ২৪শে জুলাই মহানায়কের মৃত্যুদিন স্মরণ করি। সেদিন রাসবিহারীর মোড়ে বাস থেকে নেমে দৌড়েছিলাম মিছিলে। কয়েকজন ছাতা নিয়ে চীৎকার করছে “আরে গুরু ভিজছে ছাতা ধরুন। ”স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল ,ছাদে বারান্দায় মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত কান্না। বাসে করে শিলিগুড়ি থেকে বা জেলা থেকে লরি করে লোক আনতে হয়নি।
Be First to Comment