/////////[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ ]\\\\\\\(((((((((((((((((((((((পর্ব-০৬৯)))))))))))))))))))))))
জাদুশিল্পী মঞ্চ-মায়াবী পি সি সরকার জুনিয়র
**Dr.Prodip Chandra Sorcar, M. Sc., Ph. D**
কলকাতা, ১০ই জুন, ২০২১। এই তো সেদিনের কথা। স্কন্দনাভ (স্ক্যান্ডানেভিয়া) , দিনেমার (ডেনমার্ক), ওলন্দাজ(হল্যান্ড) ব্যবসায়ীরা গাল ফুলিয়ে বসে আছে, কারণ ইংরেজ , ফরাসী আর পর্তুগিজরা মিলে, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে যে যার মতো লুটে পুটে খেলেও তারা অন্য ইউরোপীয়ানদের মতো ‘ন্যায্য’ পাওনাটা, মানে, বাকী অংশটুকুর ‘কাটমানি’টাও খুবলে খেতে দিচ্ছে না । চাইলেই, সাহেবরা নিজেদের মধ্যেই কামড়া-কামড়ি শুরু করে দেয়। যেন রেল লাইনে কাটা পড়া আহত ভারতীয় সভ্যতার দেহের ওপর একের পর এক ইউরোপ থেকে বিভিন্ন শকুন উড়ে এসে, আহতর চামড়ায় ফুটো করে মাথা ঠেসে ঢুকিয়ে, মাংস ছিঁড়ে খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। শিক্ষিত, সাহেবদের উন্নয়নের ঝগড়া। আমাদের ‘শিক্ষিত করে’, ‘আসলি প্রেম-ধর্ম-পথে’ চলা শেখানোর চেষ্টায় ওদের সেই আঁচড়-কামড়ের মারামারিটা দেখার জিনিস। যেন শয়তানের চেলারা হাতে উন্নত বিজ্ঞানের অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসেছে ঈশ্বরকে বাতিল করে নিজে রাজা হতে।
বাঃ ! মানবিকতার শিক্ষা, দার্শনিক দীক্ষা পাবার আগেই তো ওরা জ্ঞান-বৃক্ষের ফল খেয়ে ঝোপের আড়ালে ঈভকে নিয়ে, শর্টকাটে ঝটপট জ্ঞানী হয়ে গেছে না!! সেই জ্ঞান আমাদের ছড়িয়ে দিতে এসেছে ভালোবেসে । আমাদের কষ্ট দেখে বুক ফেটে যাচ্ছিলো, তাই এত্তো ঝক্কি বয়ে কতদূর থেকে আসা।
জ্ঞান, ভালোবাসা ঠিকমতো গুঁজে দিতে তারপর কতো আধুনিক উন্নত রকমের সব মারণাস্ত্র নিয়ে ওরা আসলো! কেউ নিয়ে আসছে জাহাজে বোঝাই করে, কেউ অস্ত্র আনছে প্লেনে, কেউ আনছে ডুবো জাহাজে । কেউ আসছে শান্তি বিলোতে ঘোড়া অথবা উটে চেপে মরুভূমি ডিঙিয়ে তরোয়াল ঘোরাতে ঘোরাতে হৈ হত্যা করতে করতে। তখন কেউ নিজেদের দেশকে রক্ষা করতে এলেই তাকে বলা হচ্ছে কাফের, রাক্ষস, গুণ্ডা, অমানুষ, অশিক্ষিত ডাকাতের দল। তাদের ধরে ফাঁসি, নয়তো জেলে বা আন্দামানে পাঠানো হচ্ছে। মুণ্ডু কেটে পাহাড় বানাচ্ছে, আর স্থানীয় যারা ওই ‘ডাকাত, বিপ্লবী’দের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে, তাদের দেওয়া হচ্ছে নানা রকম বখশিশ, ইনাম। সেই বখশিসের লোভে, নিজের দেশের ক্ষতি করতে এই দেশীয় বোকা- বেইমানের দল, বিখ্যাত। নিজেদের ক্ষতি করতে এরা দলে দলে পুলিশ আর সৈন্যদলে যোগ দিচ্ছে ‘চাকরি’ করতে। দুনিয়া সেটা অবাক হয়ে দেখেছে আর হাসছে।
এখন বললে বলে, “আমি আমার ‘ডিউটি’ করছিলাম। ডিম্ভাতের নুন খেয়েছি, বেইমানি, নেমকহারামী তো করতে পারি না। আমরা শিক্ষিত, উঁচু জাতের ভদদোরনোক। ”
আহা রে।
তোরা যে কতো ডিউটি মতো, সৎ ভাবে ঘুষ না খেয়ে কাজ করিস , তার নমুনা তো আমরা সব্বাই দেখতে পাচ্ছি।
দাড়া না, একটু সবুর কর। শূয়োরের বাচ্চা (Sorry, I take my words back. শূয়োররাও ওদের চেয়ে ভালো। এরকম ভদ্র পরিবেশে শূয়োরের অপমান করলে হিউম্যান রাইটস না হলেও পশু নির্যাতনের দায়ে পড়তে পারি। ওরা দলে ভারী। এবং সৎভাবে মাঠ পরিষ্কার রাখে।)
. .. হ্যাঁ যা বলছিলাম, শূয়োরদের বাচ্চা শূয়োরই হবে। তার বাচ্চাও হবে শুয়োর। এভাবে পৃথিবী একদিন শূয়োরে ভর্তি হবে। কিলবিল করবে শূয়োর। সামনে শূয়োর, বাঁয়ে শূয়োর, ডাইনে শূয়োর…কি দারুণ ব্যাপার। কেউ ঘুষ খাবে না। কেউই লেখাপড়া করবে না। খাটতে হবে না। সবাই মাঠে খাবার পাবে, ফ্রী । আঃ, স্বপ্ন রাজ্য!!
সুসভ্য দেশ ইতালি । তার যে প্রধান, তিনি ইউরোপের সব উন্নত দেশকে ঝগড়া-ঝাটি না করে, নিজেদের মধ্যেই আফ্রিকা মহাদেশটাকে, জন্মদিনের কেক কাটার মতো সমান মাপের টুকরো টুকরো করে কেটে ভাগ করে নিয়ে সুখে রাজত্ব করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেউ আমল দেয়নি। দ্রৌপদীর মতো পাঁচ ভাই মিলে শেয়ার করা আর কি। কিন্তু আফ্রিকা মহাদেশ তো আর দ্রৌপদীর মতো জীবন্ত নন। সুতরাং ভাগ করতে ঝগড়া শুরু হলো। এ বলছে আমার আফ্রিকার মুড়োটা চাই, ও বলছে আমি পেটিটা চাই , আবার অন্য একজন বলছে আমায় দিতে হবে ল্যাজাটা… এই নিয়ে লাগলো বিবাদ। দ্রৌপদীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রত্যেকেই পুরোটা পেয়েছেন, তবে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। কিন্তু আফ্রিকার ক্ষেত্রে তো আর তা চলবে না। সুতরাং কামড়া-কামড়ি চললো। বেলজিয়াম এসে দখল করলো কঙ্গো অঞ্চলকে, রোমানরা করলো মিশর সভ্যতাকে, ইংল্যান্ড ধরলো সাউথ আফ্রিকা, কেনিয়া ইত্যাদি আর ফ্রান্স আক্রমণ করলো আরও অনেক জায়গার সঙ্গে আলজেরিয়া দেশ কে। আলজেরিয়ায় তখন রাজত্ব করছেন আরব থেকে আসা মানুষেরা। সেটা গোঁড়া দেশপ্রেমী, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেশ। বাইরের জগতের প্রগতির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। পবিত্র কোরাণের অনুশাসন অনুযায়ী নিয়ম মানা সরল মনের মানুষ। ফ্রান্সের আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত অস্ত্র-সজ্জিত মারকূটে সুশিক্ষিত সৈন্যদল আক্রমণ করে আলজেরিয়াকে আক্রমণ করে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো।
আলজেরিয়ার উরাস্ প্রদেশে মস্করা শহরের পাশে ‘মোরাবেতীন’ সম্প্রদায়ের কিছু সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবার বহুদিন ধরে বসবাস করতেন । এখনও আছেন। তাঁরা নাকি হেজাজের হাশেমী বংশের অর্থাৎ উঁচু স্তরের মানুষ। তাঁদেরই গোত্রের এক ধর্মপ্রাণ পরিবারে, ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে, “নাসিরউদ্দিন আবদুল কাদের বিন্ মহীউদ্দীন” নামে এক দেশপ্রেমী বীর নায়ক জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর ছোটবেলার ইতিহাস নিয়ে কিছু জানা না গেলেও, তিনি যে তখন খুব পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর ২১ বছর বয়সেই প্রবীণ পণ্ডিত আলেমদেরও যুক্তি-তর্কে হারিয়ে দেওয়া থেকে। বিখ্যাত মুসলমান পণ্ডিত, মৌলানা মছউদ নবী লিখেছেন,” আমীর আবদুল কাদের -এর সঙ্গে আমাদের টিপু সুলতানের কর্মজীবনের মিল আছে। আরব রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে তিনি একজন ঊজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।”
এটা উত্তর আফ্রিকার আলজেরিয়া দেশের, প্রায় দুশো বছর আগের কথা।
হঠাৎ এমন আলজেরিয়া দেশের দু-শো বছরের আগের এক অচেনা ধর্ম-নায়কের কথা আমি লিখতে বসলাম কেন? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।
হ্যাঁ,আছে। বিরাট সেই কারণ। আমি আর মানেকা যখন ফ্রান্সে তৃতীয়বার ইন্দ্রজাল দেখাতে যাই, তখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক, মঁশিয়ে ক্রিশ্চিয়ো ফ্রেশ্চনার মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ হয়। উনি একটা “দুনিয়া কাঁপানো”, নতুন সিনেমা করতে চলেছেন। ফ্রেঞ্চ গভর্ণমেন্টের প্রযোজনায় বিশাল বড়ো বাজেটের এক বায়োপিক, যাতে এই ‘আমীর আবদুল কাদের’-এর এক বড় ভূমিকা আছে এবং… এবং …. এবং… আমাকে, সেই ভূমিকায় অভিনয় করবার প্রস্তাব খুব সম্মানের সঙ্গে মেলে ধরলেন।
বললেন, আমার চেহারা নাকি, ওনার কল্পনায়, ঠিক ‘আমীর আবদুল কাদের’- এর মতোই দেখতে !! মিউজিয়ামে একটা অয়েল-পেইন্টিংও নাকি আছে। আমি পার্টটা করলে খু-বই যথাযতভাবে মানাবে। আমার চলাফেরা, হাব-ভাবের মধ্যেও নাকি উনি ‘আমীর আবদুল কাদের’-কেই দেখতে পান। তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় আমার আরবীয় পোষাক পড়া ছবিও উনি দেখেছেন। চমৎকার নাকি মানিয়েছে। আমার নাকটাও নাকি আমীরের মতো। . .. আমাকে নাকি রাজী হতেই হবে।
আমি ভিরমি খাই।
এতো চমক আমি জীবনে কখনো খাইনি। বললাম, “আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। কত দিনের ব্যাপার !! শুটিং কোথায় হবে? আমি কি পারবো? ”
উনি বললেন, “এক বছরের প্রোজেক্ট। তবে আপনার কাজ হবে ডাবিং-সহ মাস দুয়েকের। শুটিং হবে ‘ওমান’ দেশের মরু অঞ্চলে। পারিশ্রমিক?…
–আপনি যা বলবেন তাই। কিন্তু আপনাকে আমার চাই।”
আমি বললাম গল্পের চরিত্রটা কী। আমি কি ধর্মযাজক, সৈনিক, জাদুকর, নাকি রাজনৈতিক নেতা।
উনি বললেন, “সব মিলিয়েই এই একটা চরিত্র”।
— ” ঠিক আছে আমি পারবো। কিন্তু গল্পের পুরোটা আমায় শুনতে হবে।
—–“আপনি জানেন গল্পটা। ফ্রান্সের প্রবাদ প্রতিম জাদুকর, মঁশিয়ে রবেয়ার উঁদ্যার জীবনী। আলজেরিয়াতে তিনি ম্যাজিক দেখিয়ে এক বিরাট ফরাসী-বিদ্বেষী-বিদ্রোহকে বন্ধ করেছিলেন। সেই বিদ্রোহকে পরিচালনা করেছিলেন ওদের ‘অলৌকিক শক্তি ধারী এক দেশ-নায়ক– ‘আমীর আবদুল কাদের’। আপনাকে ‘রবেয়ার উদ্দ্যা’র বিপরীতে সেই ‘আমীর আবদুল কাদের’-এর পার্টটা করতে হবে। ”
——— “এটা কি নেগেটিভ চরিত্র? ভিলেইন? আমি কিন্তু নগেটি্ভিটির বিরুদ্ধে।”.
———-” এতে নেগেটিভ পজিটিভ কিছু নেই। যা সত্যিই তাই। এটা বায়োপিক। সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। একটুও পরিবর্তন করা হবে না। তাতে আন্তর্জাতিক মামলা হয়ে যেতে পারে। ”
——“ঠিক আছে। আমি একটু জয়শ্রী, মানেকা, মৌবনি, মুমতাজ আর আমাদের ল-ইয়ার, অ্যাডভাইজর , এবং ফ্রান্স-স্থ ভারতীয় অ্যাম্বাসাডর সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করি, ইতিহাস ঘেঁটে সত্যি চরিত্রটাকে বুঝে হৃদয়ঙ্গম করি, আপনার স্ক্রিপ্টটা পড়ি , তারপর বলবো।… প্রস্তাবের জন্য আমি খুব গর্বিত বোধ করছি ।
ধন্যবাদ। ”
যথা সময়ে স্ক্রিপ্টের বাধানো বই আমার হোটেলে উনি পাঠিয়ে দেন। যা ভেবে ছিলাম ঠিক তাই ; তবে একটু মার্জিত ভাষায়, আনেক রীতি-নীতিকে রেখে ঢেকে। এবং বলাই বাহুল্য, ফরাসী অত্যাচারকে একদম গোপন রেখে।
এতে আমার কোনও বিশেষ আপত্তি নেই। নিজের দেশের গরিমা প্রকাশে একটু আধটু অতিরঞ্জন দোষনীয় হলেও ঠিক অপরাধ নয়। এটা নির্মাতা এবং দর্শকদের চরিত্র এবং গ্রহণযোগ্যতার পরিচয়। আমার আপত্তি ছিল আবদুল কাদের এর চরিত্র নির্মাণ এবং উঁদ্দ্যা’ সাহেবকে ‘তোল্লাই’ দিতে ইতিহাসকে এড়িয়ে ,অসত্য লোককথা এবং প্রচার-সাহিত্যের ওপর ভর করে এক অসত্য চরিত্র সৃষ্টি করাটায়। ভারতবর্ষের ম্যাজিকের কাছে ঋণ স্বীকার না করাটায়, বিজ্ঞানকে বিপথগামী করার চেষ্টাটায় এবং স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের গুণ্ডা, নির্বোধ দস্যু এবং নৃশংস প্রতিপন্ন করার চেষ্টাটায়।
আবদুল কাদেরকে নির্বোধ না বানালেও ওই পুরো ধর্মভীরু মোরাবেতীন সম্প্রদায়কে একদম জংলি মানুষ বানাবার বা দেখাবার প্রবণতাটা ঠিক নয়। জাদুকর রবেয়ার উঁদ্যাকে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতীকী চরিত্র বনানোতেও আমার আপত্তি প্রকাশ করেছিলাম । কারণ উঁদ্যা সাহেব পুরোপুরি বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করেই ম্যাজিক দেখাতেন। ধর্মপ্রচার নয়, কল্পবিজ্ঞান।
ব্যাপারটা একটু খুলে না বললেই নয়। ফরাসীদের এই আক্রমণ প্রতিহত করতে সর্বশক্তিমান আল্লার শক্তির ওপর ভরসা রেখে, আমীর আবদুল কাদের, ওই আলজেরিয়া দেশের সমস্ত মুসলমানদেরকে একত্রিত করে , জেহাদ ঘোষণা করে, ফরাসী সৈন্যদের নাস্তানাবুদ করেছিলেন। তখন ফরাসীরাও তাদের মুখপত্র হিসেবে জাদুকর রবেয়ার উঁদ্যাকে এনে শক্তি পরীক্ষার আসর বসিয়ে ওদের ঘাবড়ে দিয়েছিলেন। একটা বাক্স এনে সেটাকে একবার হালকা এবং পরক্ষণেই সেটাকে প্রচণ্ড ভারী দেখিয়ে নাকি শক্তি পরীক্ষায় তিনি জিতে যান। কাজটা সেরে ছিলেন তিনি ইলেকট্রো ম্যাগনেট দিয়ে। স্টেজের তলায় কয়েল করা বিরাট ইলেকট্রো-ম্যাগনেট ছিলো। সুইচ অন করলেই তাতে শক্তিশালী চুম্বক সৃষ্টি হয়। বাক্সের তলায় ছিলো লোহার পাত। ব্যাস্, সুইচ টিপলেই চুম্বক লোহাটাকে টানবে। বাক্সটা তখন মনে হবে ভারী। সুইচ অফ করলেই হয়ে যাবে হালকা। আলজেরিয়ার লোকজন ছিলো অশিক্ষিত। তারা নাকি ‘ইয়াল্লা’ বলে ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করেন। বিদ্রোহ বন্ধ হয়… ইত্যাদি। আমার মনে হয়, পুরোটাই গপ্পোকথা, সত্যি নয়। কারণ:–
(1) ওই সময়ে, সবে সবে ইলেকট্রিসিটির বিভিন্ন কাজ কায়দা, আবিষ্কৃত হচ্ছে। Paris শহরে এক্সিবিশনে আলো জ্বালানো, জল গরম করা, বেল বাজানো, জিনিস নড়ানো ইত্যাদি প্রাথমিক কাণ্ড দেখানো চলছে। উঁদ্দ্যা সাহেবও সেই এক্সিবিশনে একটা কাজ দেখিয়ে পুরষ্কার পান। সুতরাং বড়ো ইলেকট্রোম্যাগনেট যেটা নাকি একটা পালোয়ানের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, তার আকৃতি, হ্যান্ডলিং তেমনি বিশাল হতে হবে। সেই জমানায় সেটা কি পাওয়া সম্ভব?
(2) ইলেকট্রিসিটি অতো ভোল্টের, তাও আবার আলজেরিয়ায় ,পাবেন কোত্থেকে? জেনারেটর?
তখনও বাজারে আসেনি।
(3) স্টেজের তলায় ইলেকট্রোম্যাগনেট আটকে রাখা। এঃ, অতোই সহজ? আসুন না মহাজাতি সদন বা রবীন্দ্রসদন খুলে দিচ্ছি, লাগিয়ে দেখান তো।
সেজন্যই বলছিলাম। গপ্পো কথা। এগুলোকে ‘সত্যি’ বলে বায়োপিক বানাতে আমার আপত্তি আছে।
সত্যি কথাটা হলো, রবেয়ার উঁদ্যা তার অনুষ্ঠান নিয়ে আলজেরিয়ান দের চমকে দিয়ে বলে ছিলেন এগুলো সুপার পাওয়ার নয়। বিজ্ঞান। মনোরঞ্জনের জন্য। টিকিট কেটে দেখতে হয়। বিজ্ঞান শেখো তুমিও পারবে। কিন্তু প্রচার হয় অন্যরকম।
আর ওদিকে, দেশপ্রেমী মুক্তিকামী নেতা, আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইতে না পেরে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে, দেশ থেকে বিতাড়িত হন। আর ফেরেন নি। আমি এই ভূমিকায় অভিনয় করতে আপত্তি করেছি।
রবেয়ার উঁদ্যার সুনাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার, বিদেশে তিনি পরিচিত হন, নিজের নামেই কিন্তু অন্য উচ্চারণে। তিনি পরিচিত হন রবার্ট হুডিন হিসেবে। ফরাসী রবেয়ার (ROBERT) নামটার ইংরিজি উচ্চারণ হচ্ছে রবার্ট; এবং উঁদ্যা (HOUDIN) নামটার ইংরিজি উচ্চারণ হচ্ছে হুডিন। তাঁর নাম এতো ছড়িয়ে ছিলো যে পরবর্তীকালে ‘এরিখ ভাইস্’ নামের অন্য এক শিল্পী, HOUDIN নাম টার পর একটা ‘I’ জুড়ে দিয়ে নিজের নাম রাখেন HOUDINI. এই ‘হুডিনি’ নামটা নকল মানুষটার নাম হলেও, সেই নকল নামটাই হয়ে ওঠে আসলের চেয়ে পপুলার।
Be First to Comment