Press "Enter" to skip to content

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেলী, কীটস প্রমুখ ইংরেজ কবির সাথে বিহারীলালের পরিচয় থাকলেও পাশ্চাত্য প্রভাব তার উপর খুব একটা পড়েনি…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘ভোরের পাখি’ নামে খ্যাত বিহারীলাল চক্রবর্তী ছিলেন একজন রোমান্টিক কবি। তিনি আধুনিক বাংলা গীতিকবিতার উদগাতা, জনক, পথ প্রদর্শক হিসেবে নিজেকে স্বতন্ত্র আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেলী, কীটস প্রমুখ ইংরেজ কবির সাথে বিহারীলালের পরিচয় থাকলেও পাশ্চাত্য প্রভাব তার উপর খুব একটা পড়েনি। সারদামঙ্গল কাব্য পরিকল্পনার পশ্চাতে বিশেষ করে কবি মনের উপর প্রাচ্য চিন্তাধারারই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

আধুনিক বাংলা গীতিকবিতার অন্যতম পুরোধা এবং রবীন্দ্রনাথের কাব্যগুরু হিসেবে পরিচিত বিহারীলাল। তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল ফরাসডাঙ্গায়। তাঁদের আদি পারিবারিক পদবি ছিল ‘চট্টোপাধ্যায়’।

বিহারীলালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি নয়, কিন্তু নিজ উদ্যোগে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন করেন এবং অল্প বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর পূর্বে বাংলা গীতিকবিতার ধারা প্রচলিত থাকলেও এর যথার্থ রূপায়ণ ঘটে তাঁর হাতেই।

তিনি বাংলা কাব্যের প্রচলিত ধারার রদবদল ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার প্রবর্তন করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন।

তাঁর রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কবিদের প্রভাব থাকলেও নিজস্ব রীতিই ফুটে উঠেছে। বিহারীলাল বস্তুতন্ময়তার পরিবর্তে বাংলা কাব্যে আত্মতন্ময়তা প্রবর্তন করেন। বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম কবির অন্তর্জগতের সুর ধ্বনিত করে তোলেন।

তাঁর কবিতায় রূপ অপেক্ষা ভাবের প্রাধান্য বেশি। প্রকৃতি ও রোম্যান্টিকতা, সঙ্গীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা এবং তৎসম ও তদ্ভব শব্দের যুগপৎ ব্যবহার বিহারীলালের কাব্যকে করেছে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।

তাঁর কবিতার বিষয়-ভাবনা, প্রকাশভঙ্গির অভিনবত্ব, অনুভূতির সূক্ষ্মতা, সৌন্দর্য প্রকাশের চমৎকারিত্ব, ছন্দ- অলঙ্কারের অভূতপূর্ব ব্যবহার অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পঁয়ত্রিশ বছরের কবিজীবনে বিহারীলাল অনেক গীতিকাব্য ও রূপককাব্য রচনা করেছেন।

বিহারীলালের রচনাবলির মধ্যে ‘স্বপ্নদর্শন’, ‘সঙ্গীতশতক’, ‘বন্ধুবিয়োগ’, ‘প্রেমপ্রবাহিণী’, ‘নিসর্গসন্দর্শন’, ‘বঙ্গসুন্দরী’, ‘সারদামঙ্গল’, ‘নিসর্গসঙ্গীত’, ‘মায়াদেবী’, ‘দেবরাণী’, ‘বাউলবিংশতি’, ‘সাধের আসন’ এবং ‘ধূমকেতু’ উল্লেখযোগ্য।

বিহারীলাল কাব্যচর্চার পাশাপাশি পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা: পূর্ণিমা, সাহিত্য-সংক্রান্তি, অবোধবন্ধু প্রভৃতি। এসব পত্রিকায় অন্যদের রচনার পাশাপাশি তাঁর নিজের রচনাও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ভারতী, সোমপ্রকাশ, কল্পনা প্রভৃতি পত্রিকায়ও তাঁর রচনা প্রকাশিত হয়েছে।

১৮৯৪ সালের ২৪ মে এই মহান কবি মৃত্যুবরণ করেন।

বিহারীলাল চক্রবর্তী ১৮৩৫ সালের আজকের দিনে (২১ মে) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.