Press "Enter" to skip to content

উনিশ শতকের একজন প্রভাবশালী ইংরেজ ঔপন্যাসিক ছিলেন জেন অস্টেন। তিনি প্রধানত রোমান্টিক কথাসাহিত্যিক। কৈশোর কেটেছিল গ্রামীণ সমাজে। কখনও সখনও নিকটবর্তী শহরে গিয়ে বল নাচে অংশ নিতেন……….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ জেন অস্টেন

বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি উনিশ শতকের একজন প্রভাবশালী ইংরেজ ঔপন্যাসিক ছিলেন জেন অস্টেন। তিনি প্রধানত রোমান্টিক কথাসাহিত্যিক। সে সময়ের ভদ্রসমাজের পটভূমিতে কাহিনি নির্মিত হলেও সমাজের স্বরূপ সূক্ষ্মভাবে উদ্ঘাটন করেছেন।

তাঁর বাবা জর্জ অস্টিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হলেও আর্থিক দিক থেকে ছিলেন দরিদ্র। তিনি ছিলেন রেক্টর। স্টিভেনটনে ধর্মশিক্ষা দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই সঙ্গে নিজের সন্তানদেরও শিক্ষাদান করতেন।

জেন অস্টিন ছিলেন তার সপ্তম সন্তান। জেনের শিক্ষা কিছুটা হয়েছিল তার দাদাদের কাছে। তার দুই দাদা ছিলেন ধর্মযাজক। অপর দুই দাদা ছিলেন নৌবাহিনীতে। পরে তারা অ্যাডমিরাল পদে উন্নীত হন। আর এক দাদা এডওয়ার্ড ভাগ্যক্রমে ভূম্যধিকারী ভদ্রসমাজে প্রবেশের সুযোগ পান।

শিশুদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য অস্টিন পরিবারের আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। গ্রামভ্রমণ, ধাঁধাখেলা, গ্রন্থপাঠ, গল্প ও পারিবারিক নাটক রচনার মাধ্যমে পরিবারের শিশুরা যে শিক্ষা পেত, তা প্রথাবহির্ভূত হলেও খুব উঁচুদরের ছিল। এর ফলেই শিশু জেনের মনে ঔপন্যাসিক হওয়ার ইচ্ছা জেগে ওঠে।

অক্সফোর্ড, সাউদাম্পটন ও রিডিং-এর বোর্ডিং স্কুলে তিনি অল্প কয়েকদিন পড়াশোনা করেছিলেন। তবে এই পড়াশোনা তার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।

জেনের কৈশোর কেটেছিল গ্রামীণ সমাজে। কখনও সখনও নিকটবর্তী শহরে গিয়ে বল নাচে অংশ নিতেন। এই সব সামাজিক ক্রিয়াকলাপ আর যে গ্রাম্য সমাজে জেন বাস করতেন, সেই সমাজকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতেন জেন। এইভাবে কৈশোরেই তিনি শিখে ফেলেছিলেন উপন্যাস লেখার কৌশলটি।

জেন ও তার প্রিয় বোন ক্যাসান্ড্রা কেউই বিয়ে করেননি। ক্যাসান্ড্রার বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের আগেই তার ভাবী স্বামী জলে ডুবে মারা যান। জেনের বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল তার দাদার এক বন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু পরদিনই তিনি সম্বন্ধ ভেঙে দেন। প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস উপন্যাসে শার্লট লুকাস বিয়ে করতে চেয়েছিল সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা আর নিজস্ব একটা বাড়ির জন্য। জেন নিজে এই সবের জন্য মেয়েদের বিয়ে করাকে ঘৃণা করতেন।

১৮০১ সালে তার বাবা অবসর নেন। তারপর তারা সপরিবারে বাথে চলে আসেন। বাথ ছিল অভিজাত শহর। যদিও তার আভিজাত্য সেই সময় কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। ১৮০৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর তারা সেখান থেকে চলে যান সাউদাম্পটনে। বাথ বা সাউদাম্পটন– কোথাও গিয়ে জেন আনন্দ পাননি। এখানে এসে জেন অস্টিন দাদার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার ভার নেন।

১৮১৫ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘এমা’। এই উপন্যাসটি উৎসর্গিত হয়েছিল প্রিন্স রিজেন্টের প্রতি। জেনের সাফল্য প্রিন্সের দৃষ্টিও তার প্রতি আকর্ষিত করে।

১৮১৬ সালে জেন অ্যাডিসন’স ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়েন। ১৮১৭ সালের মে মাসে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তিনি উইনচেস্টারের বাড়ি ভাড়া নেন। কিন্তু সেযুগে সেই রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৮১৭ সালের ১৮ জুলাই জেন অস্টিনের মৃত্যু হয়। উইনচেস্টার ক্যাথিড্রালে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

প্রথম যৌবনে জেন অস্টিন তিনটি উপন্যাস লিখেছিলেন। এই তিনটি উপন্যাস পরে তিনি আগাগোড়া সংশোধন করে প্রকাশ করেন। এগুলি হল : ‘সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি’, ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ ও ‘নরদ্যাঙ্গার অ্যাবে’।


পরিণত বয়সে তিনি লিখেছিলেন ‘ম্যানসফিল্ড পার্ক’, ‘এমা’ ও ‘পারসুয়েশন’।

জেন অস্টেন ১৭৭৫ সালের আজকের দিনে (১৬ ডিসেম্বর) ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার, স্টিভেন্টনে জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.