জন্মদিনে স্মরণঃ ই র ফা ন খা ন
বাবলু ভট্টাচার্য : মধ্যবিত্তের স্বপ্নীল বাসনা আর স্বপ্নের সীমাবদ্ধতা যেখানে ধাক্কা খায়, যেখানে নেপথ্যে থাকে না বিদেশি লোকেশনের রোমাঞ্চকর পটভূমি, সেখানে, প্রতি ফ্রেমকে গরিমাময় করে দিতে পারে একজন আবেগী মানুষের গভীর-গহন দৃষ্টি। ওই যে লাঞ্চবক্স হাতে মানুষটি নাকের ডগায় নেমে আসা চশমার ফাঁক দিয়ে স্মিত তাকান, ঠোঁটের কোণে ওই যে ফুটে ওঠে বাদলাবেলায় পাওয়া আলোর মতো একচিলতে হাসি, ওটুকুই জীবনের সফল উড়ান।
যেখানে বিচিত্রবর্ণের বিনোদনী উদ্ভাসকেই চাদর করে জড়িয়ে নিতে বাধ্য হয় দর্শক, সেখানে ইরফান এক আটপৌরে দুপুর হয়ে জড়িয়ে থাকেন সেই দর্শকেরই সমগ্রে। দর্শকের সত্তা ছুঁয়ে ফেলে তার সাধারণ হয়ে ওঠার অসধারণ অভিনয়।
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তিনি তার অতুলনীয় ও অকল্পনীয় সহজাত অভিনয় ক্ষমতার জন্য পরিচিত। বলিউড, ব্রিটিশ ভারতীয়, হলিউড এবং একটি তেলুগু চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করছেন। ৩৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৫০টির অধিক দেশিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার-সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
চলচ্চিত্র সমালোচক, সমসাময়িক অভিনয়শিল্পী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী বলে গণ্য করে থাকেন।
২০১১ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে।
বলিউডে তার অভিষেক ঘটে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কার মনোনীত ‘সালাম বম্বে!’ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ব্যর্থ হয়ে তিনি নাট্যধর্মী ‘হাসিল’ (২০০৩) ও ‘মকবুল’ (২০০৪) চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
নাট্যধর্মী ‘লাইফ ইন আ… মেট্রো’ (২০০৭) চলচ্চিত্রটির সফলতা তার কর্মজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং এই কাজের জন্য তিনি প্রশংসিত হন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন। ক্রীড়া নাট্যধর্মী ‘পান সিং তোমার’ (২০১১) চলচ্চিত্রে ক্রীড়াবিদ পান সিং তোমারের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাফটা পুরস্কার মনোনীত ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ (২০১৩) চলচ্চিত্রে তার অভিনয় বৈশ্বিক সমালোচক ও দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করে। এরপর তিনি আরও কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ও সমাদৃত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, ‘হায়দার’ (২০১৪), ‘পিকু’ (২০১৫), ‘তালবার’ (২০১৫), ও ‘ব্ল্যাকমেইল’ (২০১৮)।
তার অভিনীত সর্বোচ্চ আয়কারী হিন্দি চলচ্চিত্র হলো হাস্যরসাত্মক নাট্যধর্মী ‘হিন্দি মিডিয়াম’ (২০১৭), এটি ভারত ও চীনে স্লিপার হিট তকমা লাভ করে। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন।
দেশিয় চলচ্চিত্রের বাইরে তিনি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। তারমধ্যে রয়েছেঃ ‘দ্য ওয়ারিয়র’, ‘দ্য নেমসেক’, ‘দ্য দার্জিলিং লিমিটেড’, একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’, ‘নিউ ইয়র্ক, আই লাভ ইউ’, ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডার-ম্যান’, ‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ও ‘ইনফার্নো’।
২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইরফান খান ১৯৬৭ সালের আজকের দিনে (৭ জানুয়ারি) ভারতের জয়পুরের টঙ্ক জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment