গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ১৯ আগস্ট, ২০২১। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে করোনা অতিমারীর তান্ডব। এই তাণ্ডব আমাদের জীবনের উৎসাহ ও উদ্দীপনা কে আজও পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারেনি। এই সময় কালে বাঙালির নানা পূজাপার্বন আয়তনে ও বিশেষ জাঁকজমকপূর্ন ভাবে আয়োজন করা সম্ভবপর না হলেও করোনা মহামারী আমাদের স্তব্ধ করে দিতে পারে নি।
আগামী অক্টোবর মাসে দেবী দুর্গা মায়ের আগমন হবে এই মর্তলোকে। এর মধ্যেই গতকাল অর্থাৎ ১৮ আগস্ট টালা পার্ক ১৫ পল্লীতে শুরু হলো এই বছরের ঝুলনযাত্রা উৎসব। এই উৎসবে হাজির হয়েছিলেন বিধায়ক অতীন ঘোষ সহ বিশিষ্টজন। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে ঝুলনযাত্রা উৎসব। আগামী রবিবার ২২আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন ঝুলন উৎসব শেষ হবে। উৎসব শেষে জন সাধারণের জন্য পুজোর ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে বলে জানালেন উৎসবের আয়োজকরা।
হিন্দু ধর্মে বর্ণিত আছে বারো মাসে তেরো পার্বণ। তারই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ঝুলনযাত্রা। শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে বৈষ্ণব ধর্মের এই শ্রেষ্ঠ উৎসব। ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করেন রাধা -কৃষ্ণের লীলা হল ঝুলনযাত্রা। প্রতিবছর নবদ্বীপ, মায়াপুর, মথুরা, বৃন্দাবন সহ গোটা দেশের বিভিন্ন স্থানে জাক-জমকপূর্ণভাবে পালিত হয় এই উৎসব। সুপ্রাচীন এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা সামাজিক ও পৌরাণিক তাৎপর্য।
‘ঝুলন’ শব্দটি মূলত এসেছে ‘দোলনা’ শব্দটি থেকে। রাধা-কৃষ্ণের ভক্তেরা এই বিশেষ দিন দোলনা সাজিয়ে যুগলবিগ্রহ স্থাপন করে পুজো করেন। শুধু মন্দির বা বনেদিবাড়িতে নয়, বহু হিন্দু বাড়িতেই আয়োজন করা হয় ঝুলন উৎসবের (Jhulan Utsav)। দোলনার ওপর দেব-দেবীকে বসিয়ে, নানা রকমের মাটির পুতুল, গাছপালা, ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় ঝুলনে।
ঝুলনযাত্রার পৌরাণিক গুরুত্ব অপরিসীম ::–
শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ যাত্রার উল্লেখ থাকলেও, সবকটা পালন করা হয় না, সাধারণত। তবে যেগুলি নিয়মিত পালন হয় তার মধ্যে- রথযাত্রা, রাসযাত্রা, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা ও ঝুলনযাত্রা উল্লেখযোগ্য।
শাস্ত্র মতে, বৃন্দাবনে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে দ্বাপরযুগে সূচনা হয়েছিল ঝুলন উৎসবের।
ঝুলন উৎসবের দিন রাধা -কৃষ্ণের বিগ্রহ পূর্ব -পশ্চিম দিকে দোলানো হয়। আসলে সূর্যের উদয় ও অস্ত এবং উত্তরায়ন – দক্ষিণায়নের ওপর নির্ভর করেই এই অবস্থানের দিক নির্দিষ্ট করা হয়েছে বলে জানা যায়।
ঝুলনযাত্রার নিয়ম কানুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক::–
মনে করা হয় ঝুলন উৎসবে রাধা-কৃষ্ণের পুজো করলে সংসারে সুখ -সমৃদ্ধি ভরে ওঠে।
এদিন রাধা-কৃষ্ণকে হলুদ বস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে, হলুদ ফুল উৎসর্গ করা শুভ।
কৃষ্ণকে ময়ূরের পালক দিয়ে সাজিয়ে, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে এদিন।
পুজোর আগে রাধা-কৃষ্ণের পায়ে তুলসি পাতা অর্পণ করা নিয়ম।
ঝুলনের সময় প্রতিদিন ২৫-৩০ রকমের ফলের নৈবেদ্য, লুচি -সুজি ইত্যাদি নিবেদন করা হয়।
পুজো শেষ হলে, গীতা পাঠ ও গায়ত্রীমন্ত্র জপ করলে সংসারে শান্তি বজায় থাকে।
Be First to Comment