Press "Enter" to skip to content

আর্থিক অনটনের কারণে কিশোর রামকিঙ্করের হাতে নরুন দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয় দোলতলার এক গাছতলায়; যদি কিছু আয় হয়…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণ : রা ম কি ঙ্ক র বে ই জ

‘হারিয়ে গেলে মনের মানুষ
খুঁজলে মেলে না…’

বাবলু ভট্টাচার্য : ভরা গলায়, গুরুগম্ভীর রোদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে গাইতেন রামকিঙ্কর। শান্তিনিকেতনে সবার প্রাণের মানুষ, আত্মার আপনজন, এক রক্তিম প্রাণউচ্ছ্বাস মাখা কর্মনিপুণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

চিত্রী-ভাস্কর শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ। আশ্রমের ফাঁকা আকাশের নিচে, পাখির কাকলিতে গলা মিলিয়ে গাইতেন কখনো লালন, কখনো রবীন্দ্রনাথ। হাতে নরম মাটির তাল, কখনো বা সিমেন্টের মতো কিছু একটা।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষের জন্য মানুষের জীবনযাত্রাকে ধরছেন। কেউ বললে হাসতেন— প্রাণখোলা ছিল তাঁর সেই অম্লান হাসি। সেদিনের আশ্রমিকরা সকলেই এত বড় মানুষটাকে ‘কিঙ্করদা’ বলেই ডাকতেন।

প্রথমদিকের শান্তিনিকেতনকে যাঁরা দু’হাত দিয়ে ভরিয়ে গেছেন— রামকিঙ্কর তাঁদের একজন। শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ চৌধুরী, সোমনাথ হোড় আর সঙ্গে ছিলেন গুরু নন্দলাল বসু।

সেদিনের শান্তিনিকেতনের গ্রামীণ হাটে গোয়ালপাড়া, বাহাদুরপুর, রূপপুর, রায়পুর, রজতপুর, খোয়াই, বল্লভপুর, ডাঙাপাড়া থেকে মানুষজন আসতো বিকিকিনি করতে। হাটে যাওয়ার পথে, ক্যানেলের শাল-মহুল-বহেরা জঙ্গলের সরু সিঁথি আঁকা ধুলো লাল মোরামের পথ দিয়ে ক্ষেত থেকে ফেরা আদিবাসী পরিবার— তিনি তন্ময়তার দৃষ্টিতে গভীরে নিয়ে দেখতেন! দেখতেন গরিব মানুষগুলির জীবনযাত্রা। পরে সে সবই ফুটে উঠেছে তাঁর ক্যানভাসের রঙে।

কর্মপথের ক্লান্তিহীন দিশা দেখানো প্রাঞ্জল সবুজ মানুষটির শিল্পকর্মজুড়ে শান্তিনিকেতনের সুন্দর আর সেই সুন্দরের মধ্যে গরবে কংক্রিটে ‘সাঁওতাল পরিবার’, ‘ধানঝাড়াই’, ‘বুদ্ধ’ ‘কলের বাঁশি’, ‘মৎস্য-মহিষ’, ‘গান্ধী’ ও ‘তিমি’।

রামকিঙ্করের বাবা চণ্ডীচরণ, আর মা সম্পূর্ণা। বাবা ছিলেন পেশায় একজন নাপিত। ক্ষৌরকর্ম ছিল তাদের পারিবারিক পেশা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ডানপিটে আর পাগলাটে স্বভাবের ছিলেন রামকিঙ্কর; বেইজ পদবী তিনি নিজে দিয়েছিলেন। পারিবারিক পদবী ছিল প্রামাণিক।

মামার বাড়ি বিষ্ণুপুরের কাদাকুলি যাওয়ার পথে, সূত্রধরদের বাস। সে সময়ই অনন্ত সূত্রধর নামের এক মিস্ত্রির কাছে শিল্পী রামকিঙ্করের মূর্তি গড়ার প্রথম পাঠ। সে সময় বিষ্ণুপুরের মন্দিরের কাজও তাঁকে টেনেছে। মন্দিরের পোড়ামাটি আর পাথরের কাজের নকল করেই শিল্পীর পথ চলা শুরু।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল না। ছবি আঁকা আর মূর্তি গড়াতে ছিল তাঁর আসল মনোযোগ। বাড়ির দেয়ালে ঝোলানো দেবদেবীর ছবিগুলি দেখে দেখে আঁকতেন প্রায়শই।

আর্থিক অনটনের কারণে কিশোর রামকিঙ্করের হাতে নরুন দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয় দোলতলার এক গাছতলায়; যদি কিছু আয় হয়। কিন্তু ক্ষৌরকর্ম বাদ দিয়ে নরুন দিয়ে গাছের গায়ে অনুবাদ করে চলেন তাঁর মনে তৈরি ছবি।

১৯৮০ সালের ২ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন রামকিঙ্কর।

রামকিঙ্কর বেইজ ১৯০৬ সালের আজকের দিনে (২৫ মে) বাঁকুড়ার যোগীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.