[ প্রদীপের সঙ্গে আলাপ = প্রলাপ ] পর্ব নং-১০২
~~~~~~অন্তর থেকে আস্থার বাণী~~~~~~~
প্রকৃতির ওপর ভরসা রাখুন,
সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে
শুধু মেনে চলতে হবে একটা মন্ত্র!!
——“বেশি ছোট হয়ো না, ছাগোলেতে খাবে।—— _____বেশি বাড় বেড়োনা, ঝড়ে ভেঙ্গে যাবে।”____
From the DESK of P C SORCAR Junior
জাদুশিল্পী Dr.প্রদীপ চন্দ্র সরকার, M. Sc., Ph. D. জাপানের বিগত যুগের স্বনামধন্য কবি, ্ ‘ইৎসা-কোবায়াশি’-সান, একটা তিন লাইনের ‘হাইকু’ কবিতার মাধ্যমে, তৎকালীন ভেঙ্গে-পড়া সমাজকে চাঙ্গা করে তুলেছিলেন। সেই হাইকু-টা হলো:- ….” ইয়াসে গায়েরু,
মাখেরু না ইৎসা,
খোকো নি আরি । ”
এর মানে বুঝতে গেলে, দৃশ্যপটটা কল্পনা করে নিতে হবে। নইলে জমবে না।
একদিন কবি ‘ইৎসা’ দেখেন দুটো ব্যাঙ্ খুব মারপিট করছে। লড়ছে। কিন্তু শক্তিতে বা আকৃতিতে তারা মোটেই সমান সমান নয়। একজন বেশ বড়ো, ধেড়ে। তাগড়াই, তার চেহারা। আর অন্যটা ছোট্টো, রোগা , লিকপিকে পাতলা। কবি, কাজ ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। কোমরে হাত দিয়ে ওই রোগা ব্যাঙ্-টাকে উৎসাহ দিয়ে লিখলেন, “রোগা ব্যাঙ্, হেরে যেও না, ইৎসা (কবি) তোমার পাশে, এখানে আছি।”
জানিনা, তারপর কি হয়েছিলো। কিন্তু সমাজে ঘটেছিলো ম্যাজিক। শুনেছি, কল্পনা-প্রবণ দেশপ্রেমী জাপানি জাত, আবেগের স্রোতে সবাই নড়েচড়ে, কোমর বেঁধে একসাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ভুরু কুঁচকে, রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
‘অশুভ শক্তি’, এরকম দলবদ্ধ, প্রতিবাদী মানুষের চেহারার মুখোমুখি কখনও হয়নি। ভয় পেয়ে যায়। সে আগে নির্বোধ স্তাবকদের জমায়েতে, শুধু তাঁর স্তুতিই শুনে এসেছে। আপনজনদের শাসন বা বকুনিকেও পরোয়া করেনি। শত্রু ভেবেছে। জনরোষের শক্তির কথা জানতো, তবে, মুখে উচ্চারণ করতো না। এড়িয়ে যেতো। তার অনুচরেরাও ছিলো অপরাধী, বদমায়েশের দল। তারা কখনও সুবুদ্ধি দিতো না। শুধু দুর্বল মুহূর্তের সন্ধানে তক্কে-তক্কে থাকতো। ব্যাস্, তখন ঘটে গেলো তার জীবনের ম্যাজিক!
কবি ইৎসা কোবায়াশির ব্যাঙের লড়াই-এর সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি ঘটনাটা। বড় ব্যাঙ্-টা বয়সে বড়ো, সেজন্য সে মানুষের চরিত্র ভালোভাবে জানতো। সুতরাং কবির উপস্থিতি দেখে, তার কাছ থেকে একটা বিশাল লাথি খাবার আগেই ও রণে ভঙ্গ দেয়। পালায়। কিন্তু ছোটো ব্যাঙ্-টা তো অনভিজ্ঞ। সেজন্যই তো সে বড়োটার সঙ্গে লড়তে গেছিলো। পরে, সেটাই ওর ক্যাপিটাল হয়ে দাঁড়ালো। ওর ওই সাহস, কবির দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মানুষের সমর্থন পেয়ে ও সাহিত্যে স্থান পেয়ে, জিতে যায়।
আমিও তো ছোট্টো নিরীহ একটা প্রাণী। কতটুকুই বা আমার ক্ষমতা ! কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সব সময়েই সোচ্চার। ঈশ্বর আমাকে যদি এমন একটা কোনও ক্ষমতা দিতেন, যা দিয়ে আমি, আমাদের এই দুঃসময়টা হঠিয়ে, সবাইকে চাঙ্গা করতে, শান্তি, স্বস্তি দিতে পারতাম। কিন্তু…
–কিন্তু…কী?
–কিস্যু না, আমি রসিকতা করছিলাম।
এড়িয়ে যাচ্ছিলাম সত্যি কথাটা বলতে।
আমার ক্ষমতা নেই মানে?
ভালোবাসা দিয়ে জিতে যাবার ক্ষমতাটা আমার পুরোপুরি আছে। আলবৎ আছে।
শুধু আমার নয়, আমাদের সব্বার আছে। কে বললো নেই। ‘অশুভ শক্তি’ বলেও কিছু নেই। ওসব হচ্ছে অজুহাত, বাহানা। নিজের দুর্বলতা আর অজ্ঞতাটা আড়াল করার বাহানা।
আসলে সবই হচ্ছে ‘সময়ের’ গ্যারাকল। বিশ্বজুড়ে নানা রকম মহামারী লেগেছে। কেউ-ই সুখে নেই। এই সুযোগে, সুবিধেবাদীরা একে, ওকে, তাকে দুষছে। নিজেকে বাহাদুরী দিয়ে রক্ষাকর্তা ভাবাচ্ছে।
ভাবাক। তাতে আমি চিন্তিত নই। বরঞ্চ নিশ্চিন্ত। কারণ, দেশ চালানোটা , বোকা, দুর্বল, কাপুরুষের কাজ নয়। শক্ত মানুষ চাই, শক্ত।
আমরাই পারি, শক্ত হয়ে রুখে দাঁড়িয়ে দুঃসময়কে লাথি দিয়ে ভাগিয়ে, সুদিন ফিরিয়ে আনতে। আমরাই তো আমাদের পছন্দ মাফিক শক্ত প্রতিনিধিদের দিয়ে দেশ চালাচ্ছি। তারা খারাপ কাজ করলে আমরা দায়ী। আমরাই তাঁরা। আমরাই পারি পাওনা-মাফিক জিততে। আমরাই পারি অভিশাপটাকে কাটাতে, ভাগাতে। আমি হয়তো বড়ো তাগড়া, ঝগড়ুটে ব্যাঙ্ নই। কিন্তু, আমার সৎ সাহস আছে। আমি সত্যি কথা বলি। মিথ্যে বলার প্রয়োজন হয় না। সততাই আমার আমার শক্তি। আমাদের শক্তি। আমি একা নই। আমরা সবাই মিলে ‘আমি’ একজন। সব দলই এক। ওঁরা আজকে এ-দল, কালকে ও-দল করে বুঝিয়ে দিয়েছেনঃ, সব দল এক।
আমরা মেহনত করে খাই। আমরা সংখ্যায় লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি। আমি হাঁক দিলে , সব্বাই না হোক, তার সিকির সিকি ভাগের লোকেরও সিকির সিকি ভাগ লোক যদি আসেন, তাহলেও কলকাতা শহরটাতে দাঁড়াবার জায়গা থাকবে না। ছাপিয়ে যাবে।
তাঁরা সুখে থাকতে, আমার পাশে এসে কোমড় বেধে দাঁড়াবেন। একবার যদি সবাই মিলে রুখে দাঁড়াই, জানেনই তো, ওই তথাকথিত ‘অশুভ শক্তি’, প্যান্টে ‘ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া’ করে দেবে।
আমরা আর একটুও সবুর করবো না। প্রভাতের অপেক্ষায় আর থাকবো না। কারণ, জেনে ফেলেছি, “যখনই চিত্ত জেগেছে, তখনই হয়েছে প্রভাত। ” চলুন, যথেষ্ট সয়েছি আর নয়। ” বাঁচার মতো বাঁচি। সেটা আমাদের পাওনা।
আসুন, প্রথমেই সাহায্য করি নিজের সংসারের সবাইকে দিয়ে। নিজের সংসার অগোছালো হলে দেশের এতো বড়ো সংসারটা সামলাতে শিখবো কি করে। আগে নিজের মা, তারপরই দেশমাতৃকা।
নিজের খাওয়া চায়ের কাপটা দিয়ে শুরু করা যাক। অন্ততঃপক্ষে নিজে ধুয়ে, মুছে জায়গা মতো রেখে, স্ত্রীকে সাহায্য করতে শুরু করি। এই ভাবে একের পর এক, যতোটা সম্ভব। দেখবেন, এক সপ্তাহে আমাদের দেশ ঝকঝকে চকচকে হয়ে গেছে। ম্যাজিক।
Be First to Comment