Press "Enter" to skip to content

‘আমি তিন দিন ধরে জন্মাচ্ছি। ক্রমাগত জন্মেই যাচ্ছি। এই জন্মান্তরে আমিও হতবাক।’ — অমর মিত্র……

Spread the love

—————–শুভ জন্মদিন অমর মিত্র————-

বাবলু ভট্টাচার্য : গত তিনদিন ধরেই ভক্তকূল তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি লিখেছেন— ‘আমি তিন দিন ধরে জন্মাচ্ছি। ক্রমাগত জন্মেই যাচ্ছি। এই জন্মান্তরে আমিও হতবাক।’ সহজ সরল কৌতুকপূর্ণ কথা। কেউ তিনদিন ধরে জন্মাতে পারে না। কিন্তু জন্মাচ্ছেন তিনি। এবং ক্রমাগত। এবং তিনি বিস্মিত হচ্ছেন। তিনি অমর মিত্র। গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র। কর্ম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক দপ্তরে। ১৯৭৪ সালে ‘মেলার দিকে ঘর’ গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ধীরে ধীরে নিজেকে বিকশিত করেছেন। প্রথম উপন্যাস ‘নদীর মানুষ’ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় অমৃত পত্রিকায়। প্রথম গল্পের বই ‘মাঠ ভাঙে কালপুরুষ’ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। ‘ধ্রুবপুত্র’ উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল ৭ বছর ধরে। এই উপন্যাস খরা পীড়িত প্রাচীন উজ্জয়িনী নগরের কথা। এর যা কাহিনি তার সমস্তটাই লেখকের নির্মাণ। কবির নির্বাসনে নগর থেকে নির্বাসনে যায় জ্ঞান। মেঘে তার যাত্রাপথ বদল করে নেয়। প্রকৃতির এই পরিবর্তনে নগরে নেমে আসে বিপর্যয়। দীর্ঘ এই আখ্যান শেষ পর্যন্ত শূদ্র জাতির উত্থান ও কবির প্রত্যাবর্তন এ পৌঁছয়।

এই কাহিনি যেন কবি কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের বিপরীত এক নির্মাণ। খরা, জলের অভাবে আমার দেশ নিরন্তর দগ্ধ হয়। সেই কাহিনি এখানে এসেছে রূপক হয়ে। মেঘের অভাব জ্ঞানের অভাব। সৃজন কাল বন্ধ্যা হয়ে থাকে। দেশ তার ভিতরে পোড়ে। ক্ষমতা কী ভাবে মানুষকে অন্ধকারে ঠেলে নিরন্তর, এই উপন্যাস সেই কথাও খুঁজে বের করতে চেয়েছে। ২০০৬ সালে এই উপন্যাস সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছে।১৯৯৮ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘অশ্বচরিত’ তথাগত বুদ্ধের ঘোড়া কন্থক ও তাঁর সারথী ছন্দকের কাহিনি। তারা এই আড়াই হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করছে রাজপুত্রের প্রত্যাবর্তনের জন্য। এতদিনে এই পৃথিবী হিংসায় পরিপূর্ণ।বঙ্গোপসাগরের তীরে দীঘার ছোট এক হোটেলের খরিদ্দার সংগ্রহকারী ভানুদাস নিজেকে বলে ছন্দক। হোটেলওয়ালার টাট্টু ঘোড়ার পালক সেই ভানুদাস ঘোড়াটিকে বলে কন্থক। বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে ঘোড়াটি পালায়। ভানুদাস সেই ঘোড়ার খোঁজে যায় চারদিকের গ্রামে গ্রামে, হাটে হাটে। রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে কোথায় না? এই উপন্যাস সময় থেকে সময়ান্তরে যাত্রা করেছে বারে বারে। তথাগত বুদ্ধের সময় থেকে হিংসাদীর্ণ এই সময়ে। সেই ঘোড়াটিও পালাতে পালাতে শেষ পর্যন্ত যেন হিরোসিমায় গিয়ে কালো বৃষ্টির ভিতরে গিয়ে পড়ে।

লেখক ভারতীয় প্রতিবেশে জাদু বাস্তবতার ব্যবহার করেছেন এই উপন্যাসে। ঘোড়াটি প্রতি আশ্বিনে পালাত। এইবার পালিয়েছে ঘোর বৈশাখে। প্রকৃতি এক দিনেই দুই ঋতু যেন পার হয়ে গিয়েছিল। এই উপন্যাসের কোনো শেষ নেই যেন। চলতেই থাকে। ‘অশ্বচরিত’ বাংলা উপন্যাসে এক আলাদা রীতির জন্ম দিয়েছে যেন। লেখক হিংসা আর মৃত্যুর বিপক্ষে জীবনের কথা শুনিয়েছেন। পরমাণু অস্ত্রের বিপক্ষে কথা বলেছেন। ২০০১ সালে এই উপন্যাস ‘বঙ্কিম’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। এ ছাড়া অমর মিত্র ২০০৪ সালে ‘শরৎ পুরস্কার’ (ভাগলপুর ), ১৯৯৮ সালে সর্বভারতীয় ‘কথা পুরস্কার’ স্বদেশযাত্রা গল্পের জন্য এবং ২০১০ সালে ‘গজেন্দ্রকুমার মিত্র’ পুরস্কার পেয়েছেন।

অমর মিত্রের লেখা ইংরাজি, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, উর্দু, মালায়ালম ইত্যাদি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

অমর মিত্র ১৯৫১ সালের আজকের দিনে (৩০ আগস্ট) বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কাছে ধুলিহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.