Press "Enter" to skip to content

“আমারে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবা না”……..।

Spread the love

/////[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ]\\\\
=============(পর্ব-০৪২)==========≠==
মঞ্চ মায়াবী, জাদু শিল্পী পি সি সরকার জুনিয়র।
Dr.Prodip Chandra Sorcar M.Sc., Ph.D. কলকাতা, ৭, ফেব্রুয়ারি, ২০২১।

“আমারে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবা না” আজ ৬ই ফেব্রুয়ারি, একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন । আজ থেকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডে এসে এপার বাংলার মানুষের কাছে, "... ভাইয়েরা আমার..কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবে না...(ইত্যাদি)" , সেই হৃদয় নিংড়ানো , ভালোবাসায় টইটুম্বুর ঐতিহাসিক

ভাষণটা দেন। ওনার সঙ্গে ছিলেন, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী,প্রিয়দর্শিনী, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। আপামর বাঙালি সমাজ, রাজনৈতিক দলাদলি ভুলে, মিলে মিশে একাকার হয়ে যাবার জাদুতে হাবুডুবু খেয়েছিলো। বাঙালির সে চেহারা পৃথিবীতে আগে কেউ কখনোও দেখেনি।

পাকিস্তানের খান সেনারা নিজেরা মুসলমান হয়েও লক্ষ-লক্ষ বাঙালি মুসলমানকে, শুধুমাত্র ‘বাঙালি’ হওয়ার অপরাধে, নির্বিবাদে, নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিলো। সঙ্গে হিন্দু নিধন তো আছেই । হিন্দু মহিলাদেরকে স্বামী,পুত্র, ভাই এর চোখের সামনে তারা লাগাতার গণধর্ষণ করে, তাদের সেনাধ্যক্ষের আদেশে ,মুখে গো-মাংস ঠেসে, ধর্ম বিশ্বাস ভেঙ্গে দেয়। পরবর্তিকালে প্রায় প্রতিটি হিন্দু মহিলাই গর্ভবতী হয়ে যান ওই পশ্চিম-পাকিস্তানি ধর্ষকদের কারণে। সংসার ভেঙ্গে হয়ে যায় তছনছ। এই নবজাত সন্তানেরা তাদের জন্মদতা খান-সেনা পিতার পক্ষ নেবে, নিজেকে বাঙালি ভাববে না, এই ছিলো তাদের সংখ্যা-গরিষ্ঠ হওয়ার চক্রান্ত। ফলে লক্ষ লক্ষ বাঙালি পালিয়ে বাঁচেন। বাস্তুহারা হয়ে, এপার বাংলায় আশ্রয় নেন। সে এক বিভৎস সময়, ধর্মের অভিশপ্ত অধ্যায়, অমানবিকতার বিষাক্ত পরিবেশ। এদিকে আমরা, নিজেরাই খেতে পাইনা, তো অন্যেকে খাওয়াবো কি ? “কিন্তু আমার কলকাতা, সবার জন্য কোলপাতা।”

ভারত জেগে ওঠে। দিল্লি থেকে আদেশ আসে, বাঙালিকে সাহায্য করতে সবাই এগিয়ে এসো। পাঠিয়েও দেন , বেশ কিছু ভারতীয় রক্তত্যাগী জওয়ানদের স্যাম্পেল। বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয়দের সেই চেহারাটা আগে কখনও দেখেন নি। স্থানীয় দুর্বল জমি কামড়ে পড়ে থাকা কিছু হিন্দু পরিবারকে দেখেই ওরা ভারতকে চিনে এসেছে। সেজন্য সহায়তার শক্তির ওপর ভরসা ছিলো কম।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষায়:- “ভারতবর্ষ থিক্যা নাকি সৈন্য‌ আইতাছে । তাগোর শক্তি তো জানি। কিন্তু, অবাক কান্ড ! এক লরীভর্তি সৈন্য আইছিলো, কুচকুচা, ভুষূইণ্ডা-কালা। লাফাইয়া বন্দুক হাতে নাইমলো ! নাম নাকি ম্যাড্রাস রেজিমেন্ট। ভাবলাম ভারতীয় সৈন্যরা কালা হয়! পরের লরীতে সৈন্য আইছিলো ফর্সা লম্বা লম্বা,মাথায় পাগড়ি বান্ধা, পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ! সেও নাকি ভারতীয় ! তারপর আইলো কুতকুতা চোখের ,বাইট্যা বাইট্যা সৈন্য। হালার বেটা হালা ইন্ডিয়ার চেহারাডা যে কিরকম, বুইঝলাম না।” পাকিস্তানের সৈন্যরা যুদ্ধে গো-হারান হেরে যায়। পাকিস্তানের সেনাপতি, নিয়াজী মহাশয় হার স্বীকার করে। তৈরি হয় নতুন একটা দেশ- ‘বাংলাদেশ’ । সে মাটিতে ভারতীয় বিভিন্ন প্রদেশের অনেক নাম না জানা সৈনিকের রক্ত মিশে আছে। আমরা যেন ভুলে না যাই। সেটা হবে বেইমানী।

আমি এর সব কিছুর সাক্ষী। আমার রক্ত টগবগিয়ে উঠেছিলো, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমিতো নিছক এক মাদারি। এতে আমি কী সাহায্য করতে পারি?

করেছিলাম। কি করেছিলাম বলবো না। তবে এটুকু বলছি, জাদু লাঠির যে-টুকু ক্ষমতা, আমার যেটুকু মুরোদ, সাধ্য, সাহস, সে টুকুই করেছিলাম। আরোও করার ইচ্ছে ছিলো। করেছি । লোক দেখিয়ে নয়। গোপনে।

ওরা কিন্তু সে খবরটা রেখেছেন। আমাদের দেশ না জানলেও, ওঁরা কিন্তু ভোলেন নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাশয়া আরও কয়েকজন “গোপন দেশপ্রেমী”র সঙ্গে আমাকেও ঢাকায় আমন্ত্রণ করেন !! আমাকে , বাংলাদেশের জনগণের হয়ে সংবর্ধনা দেন, ধন্যবাদ দিয়ে লজ্জা দেন। আমি মুখ লুকিয়ে কূল পাই না।

ওনারা আজকে আবার আমাকে লজ্জা দিয়েছেন। আজ, সেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিন এই ৬ই ফেব্রুয়ারি এবং বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে, একযোগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে আজকে আবার আন্যান্য মহান ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাকেও সংবর্ধিত করেন। ওরা বেইমান নন।

তার কিছু ছবি পেলাম, এখানে প্রকাশ করলাম।ঢাকার ছবিগুলো খুঁজছি। পেলে পরে দেখাবো।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.