আলো কুন্ডু : লেখক, সংগীত বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মী: কলকাতা, ২ আগস্ট, ২০২০। এই করোনাকালে র অতিমারীতে সরকারি কর্মী ছাড়া প্রতিটি বাড়ির রোজগারেই কমবেশি আঘাত এসেছে। প্রকৃতির এই তান্ডবের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু মানুষরূপী চেহারাও এই সুযোগে তান্ডব শুরু করে দিয়েছে।
১) দেখলাম এইসময় ভদ্রবাড়ীর দুজন ছেলে যারা দুজনেই দুটো সরকারি হাসপাতালে চাকরি করে। যদিও তারা প্যাথলজি সেন্টারের কোনো ব্যবসায়ী নয় তা সত্ত্বেও এই অতিমারীতে লোক ঠকাবার কথা ভেবে নেমে পড়েছে নকল প্যাথলজি রিপোর্ট তৈরি করার ব্যবসা করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে। এই বাজারেও দুইভাই যদি দুটি সরকারি চাকরি জোগাড় করতে পারে তাহলে ধরেই নেওয়া যায় তাদের রাজনৈতিক খুঁটির জোর খুব বেশি, তাই বোধহয় এই অপরাধের পরেও তার হয়ে উকিলও সওয়াল করতে এগিয়ে আসেন! শুধু তাই নয় তাদের বাবার পুলিশের চাকরির প্রমানপত্র দেখিয়ে জামিনের আবেদনও করা হয়। যখন এইসব ছেলের বাবা হিসেবে মুখ লোকাবার কথা, তখন বাবা যেচেই নিজের পরিচয় জাহির করছেন, শুধু তাই নয় সামান্য সামান্য ব্যাপারে যখন ১৫ দিনের পুলিশি হেফাজত গ্রাহ্য হয়, এক্ষেত্রে দুদিন!! এরপরে হয়তো দেখবো আগামীকাল ৩ তারিখে ” ছিঃ এমন করেনা” বলে জামিনও হয়ে যাবে।
২) একে এই অতিমারীতে রোজগারে আঘাত তারপর চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রথমেই ধাক্কা এম্বুলেন্স চালকের কথায়। ৫ কি.মি. যেতে হলেও সর্ব্বনিম্ন ভাড়া ৬০০০/- টাকা, ওয়েটিং প্রতি আধ ঘন্টায় ২০০০/- টাকা, এক হসপিটাল থেকে সিট না পেয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার জন্য আরও ৩০০০/-টাকা করে প্রতিবার। যদিও এই এম্বুলেন্সগুলির অধিকাংশের গায়েই লেখা থাকে দেখেছি কোনো না কোনো সাংসদ বা বিধায়ক তাঁদের জনহিতকর ফান্ড বা ল্যাডের টাকায় ক্লাবগুলোকে দিয়েছেন। সেইসব ক্লাবগুলো এর ওপরেও হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ক্লাবের অনুদানও পেয়ে থাকেন। তাদের তো এই বিপদের দিনে এমনিই মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিলো। আমরা চিরকাল দেখে এসেছি যুবসম্প্রদায় নিজের জীবনের পরোয়া না করে মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তো। তবে আজ কি সব বাঙালী যুবক তাদের যুবধর্ম ভুলে- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের কথা মেনে ব্যবসায় নেমে পড়েছে? তাও আবার অনৈতিক ব্যবসা!!
৩) এম্বুলেন্সের ঘোর কাটিয়ে সরকারি হসপিটালে ঘুরে ঘুরে সিট না পেয়ে যখন বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে, সেখানেও শুরু হয়ে যাচ্ছে নতুন খেলা, টেস্ট করে রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা তারপরেই প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে কসাইখানা কেমন হয়! নানান খবরে শুনছি ও পড়ছি খুব কম খরচ যদি হয় ২.৫ লাখ থেকে তিন লাখ আর বেশি হলে তার কোনো ঊর্ধসীমা নেই। সর্বস্ব খুইয়ে চিকিৎসা করার পরেও হয়তো রুগী বাঁচছে না কিন্তু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে।
এই দুঃসময়ে সরকারী সহযোগিতা বা সহমর্মিতা যা এইসব লুঠেরার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারতো তা থেকেও সাধারণ মানুষ বঞ্চিতই থেকে গেলো।
উকিলবাবু থেকে আরম্ভ করে এম্বুলেন্সের চালক, ক্লাবের দাদারা এমনকি ডাক্তারদের ও বলছি সাধারণ মানুষের এই দিন আপনার বা আপনার বাড়ির লোকজনের সাথেও হতে পারে, যখন সাধারণ মানুষের মতো রাস্তায় পড়ে থেকে মৃত্যুবরণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই বলছি একটু মানবিক হন। আমাদের গর্বের প্রিয় রাজ্য, প্রিয় শহর এখন আতঙ্ক নগরী হয়ে উঠেছে।
Be First to Comment