Press "Enter" to skip to content

আমাদের ছেলেবেলা ও যৌবনের সেই সিনেমা হলগুলোই ভ‍্যানিস, তাই চৌরঙ্গির সেই গ্ল্যামারও শেষ, ধর্মতলা যেন নুন ছাড়া তরকারি……..

Spread the love

প্রবীর রায় : অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্র পরিচালক। ৮ জুলাই, ২০২০। এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন বাঙালি এক পাত্তর হুইস্কি সেবন করে অথবা অনাদির মোগলাই খেয়ে সিনেমা দেখতে হলে ঢুকত ব্ল‍্যাকে টিকিট কেটে। আর যারা কয়েকদিন আগেই আ্যডভান্স টিকিট কাটতো তারা চলে যেত সটান হলে। সিনেমা ভাঙার পর রেস্তোরায় খাওয়া দাওয়া, নিউ মার্কেটে শপিং করা, ফেরার সময় হাতে থাকতো গরম প‍্যাটিস, কেক। টুক করে ট্রাম ধরে সিনেমার সেই গল্প করতে করতে বাড়ি। এলিটিসিজম ও রোম্যান্টিসিজমের সেই আঁতুড়ঘরটি ছিল ‘গ্লোব’ … দুটি শব্দের চাবুক চালানো শিহরণ ছিল যার শরীরে … লিন্ডসে স্ট্রিটে ঢুকে ডান হাতের ছোট একচিলতে গলি দিয়ে ঢুকে বাঁ হাতে ছিল কাউন্টার … ডান হাতে বার … দোতলায় কাচের দরজা ঠেলে ঢুকলে আরও একটি বার … সেখানেই দরজা ঠেলে ভিতরে পুরু গালিচা পথ নিয়ে যেত গদি মোড়া সিটে … ডিমার কোন অলক্ষে অফ হত টেরই পেতাম না … অন্ধকারের রূপকথায় তখন গ্রেগরি পেক … আন্থনি কুইন … ওমর শরিফ …. উরি উরি বাবা কী দারুণ মেরি উর …. মা কসম, সেদিনের সেই গ্লোব আজকের মাল্টিপ্লেক্সগুলোকে বলে বলে ১০ গোল দিতে পারত … সেই রোমহর্ষক গ্লোবের সামনে মাল্টিপ্লেক্সগুলো যেন হঠাৎ দু’ পয়সা করে ফুটানি মারা ছিঁচকের দল, এখন সেখানে আরতি নামে একটি সংস্থা শপিং মল বানিয়েছে, যেখানে ব্র‍্যান্ডেড ন্যাকড়া বিক্রি হয়!

আর গ্লোব নামটিকে ছুঁয়ে রেখে একটি পুচকি সিনেমা হল বানাচ্ছে যেটা বড়জোর ভিডিয়ো পার্লারেরই বড়ভাই গোছের…আর কি। ন্যাকড়া বিক্রি হয় “টাইগারেও” … এখানে দেখেছিলাম ডায়মন্ড স্মাগলার … টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস্ আন্ডার দ্য সী। কলকাতায় কোনও নীল সমুদ্র নেই … তবুও তার একটি “লাইটহাউস” ছিল … তার দোতলায় পরম যত্নে রাখা ছিল একটি পিয়ানো … কোনও দিন একটি আঁচড়ও তাতে লাগেনি … এক মন সম্ভ্রম নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকত হলিউডি সিনেমাখোর বাঙালি … হয়ত তাতে কখনও তুলতুলে আঙুলে রিনরিনে সুর তুলত কোনও রাজকন্যে … সেখানেই দেখেছিলাম, রাইডার ইন দ্য রেইন … চার্লস ব্রসনন … টাওয়ারিং ইনফার্নো … স্টিভ ম্যাকুইন … রিটার্ন অফ দ্য ড্রাগন … ব্রুস লী। এখন সেখানে ড্রেস মেটিরিয়ালের কেচ্ছা … লাইট হাউস আর বাতি জ্বেলে পথ দেখায় না … কলকাতাটাই যে ডুবতে বসেছে…

গা ঘষাঘষি করে “নিউ এম্পায়ার” … কোনও এক মহাজাগতিক বিস্ময়ে সেটি এখনও টিকে রয়েছে… ইম্পেরিয়াল হাউস … শ্বেত পাথরের বাঁকানো সিঁড়ি উঠে গিয়েছে … বেলজিয়াম গ্লাসের মিরর … দেওয়ালে হিচককের দ্য বার্ড, রোমান হলিডের অদ্রে হেপবার্নের, come september এর জানা লোলোব্রিগেডার বাঁধানো পোস্টার … ভিতরে হোয়ার ইগলস ডেয়ার … রিচার্ড বার্টন, ক্লিন্ট ইস্টউড… আর ছিল “এলিট” একমাত্র যেখানে ‘Ginger Beer’ (non alcoholic) পাওয়া যেত। আমরা যখন স্কুলের উচ্চ শ্রেণীতে পড়াশুনা করি, তখন ঐ Beer খেয়ে একটা নিষিদ্ধ আনন্দ উপভোগ করতাম!
জ্যোতির কথা জানেন?

মাইরি বলছি, বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে সেটি এখন ছাঁট লোহার গোডাউন … আদিগন্ত বিশাল পর্দায় ঘোড়া ছুটত গব্বর সিং আর তার সাঙ্গপাঙ্গোদের … ঠাকুর সাহাবের সঙ্গী দুই ছিঁচকে চোর জয় আর বীরুর সেই টক্কর-দৃশ্য … স্টিরিও সাউন্ড;… জ্যোতি জ্যোতিই… তার কোনও বিকল্প ছিল না… এখনও আছে কি?
প্রাক ইন্টারনেট আর ইন্টারনেট উত্তর সময়ের মধ্যে কলকাতার চৌরঙ্গির সিনেমা পাড়া নিশব্দে চুরি হয়ে গেল। রোম্যান্টিসিজমের কফিনে পেরেক পুঁতে দেওয়া হল ….
আচ্ছা বলুন তো এই কলকাতাকে লইয়া কী করিব ….আর কী বা পাওয়ার আছে আর এই আধমরা কলকাতা থেকে?
আমরা আধ-বুড়ো-হাবড়ার দল ভাবি আর মনে মনে অশ্রুমোচন করি… ????

#আচ্ছা কলকাতার একটা শ্রাদ্ধ করলে হয় না?#

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার:- দুলাল লাহিড়ী )

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.