——————–বান্ধবী রিয়ার সঙ্গে—————-
মধুমিতা শাস্ত্রী, ১৫ জুন,২০২০। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের। তাঁর মৃতদেহের গলায় দাগও পাওয়া গিয়েছে। মুম্বাই পুলিশ জানাচ্ছে, অকুস্থল অর্থাৎ সুশান্তের ঘর থেকে পাওয়া তথ্য প্রমাণ বলছে এটা আত্মহত্যারই ঘটনা। এমন কোনও সন্দেহজনক তথ্য তাঁর ঘর থেকে পাওয়া যায়নি যাতে এই মৃত্যুকে খুন বলে সন্দেহ করা যায়। তবু সুশান্তের ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ, সুশান্তের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, খুন। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র ও রহস্য রয়েছে।
মাঝে নীল শার্ট পরে সুশান্তের বাবা।
এদিন সুশান্তের এক মামা সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে বলেন, সুশান্ত কখনওই আত্মহত্যা করতে পারে না, তিনি সেরকম ছেলেই নন। এর পিছনে কোনও গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে হবে।
সুশান্তের ম্যানেজার দিশা।
প্রসঙ্গত তিনি এও বলেন যে, কিছুদিন আগেই সুশান্তের ম্যানেজার বহুতলের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। সেই ঘটনাও রহস্যে ভরা।
এদিন সকালেই সুশান্তের বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়রা মুম্বাইয়ের বিমানে চাপেন। মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে শ্মশানে এই তরুণ অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন বিহারের খ্যাতনামা বাহুবলি নেতা পাপ্পু যাদবও এএনআইকে একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, যে ছেলে ছোট থেকে এত লড়াই করে এই উচ্চতায় পৌঁছেছেন সেই ছেলে কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। এর পিছনে অন্য রহস্য আছে। তিনি সরাসরি সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন।
পাপ্পু যাদব।
সুশান্তের ঘর থেকে পাওয়া ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, ওষুধের স্ট্রিপ ইত্যাদি থেকে জানা যায় যে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সে খবর পরিবারের লোকেরাও জানতেন।
এদিকে পুলিশ সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে জানিয়েছে, তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি মোটেই খারাপ ছিল না। তাঁর ফোন কলস চেক করে পুলিশ জানায়, সেদিন রাত ১-৪৭ নাগাদ বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে ফোন করেন। তবে রিয়া ফোন ধরেননি। আগামী নভেম্বরে তাঁদের বিয়ের কথা থাকলেও সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। রিয়া কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুশান্তের সঙ্গে।
এরপর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মহেশকেও বার দুয়েক ফোন করেন। কিন্তু তিনিও ফোন ধরেননি। পরে দুপুর ১২টা নাগাদ মহেশ কল ব্যাক করেন। কিন্তু তখন সুশান্ত মৃত।
সুশান্তের মামা।
পুলিশ সুশান্তের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। ভিসেরার রিপোর্ট পেতে পেতে দিন দুয়েক। এই রিপোর্ট সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তখনই একমাত্র নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে যে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন কিনা।
এই বাড়িতেই থাকতেন অভিনেতা সুশান্ত।
আজ সুশান্তের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশের ফরেনসিক দল গিয়েছে তদন্তে। উল্লেখ্য, গত সোমবারই সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা মালাডের একটি বাড়ির ১৪ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ সে ক্ষেত্রেও জানিয়েছিল যে, দিশা অবসাদে ভুগছিলেন।
সুশান্তের ড্রইং রুম।
সুশান্তের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন সেরকম কয়েকজন বাঙালি অভিনেতার বক্তব্য, সুশান্তের চরিত্রের সঙ্গে এই আত্মহত্যা তাঁরা মেলাতে পারছেন না। একটি সর্বভারতীয় হিন্দি টিভি চ্যানেলে অভিনেতা রাজেশ শর্মা জানিয়েছেন, তিনি যে সুশান্তকে দেখেছিলেন সে আত্মহত্যা করার মতো ভঙ্গুর মানসিকতার ছেলে ছিল না।
অন্যদিকে কঙ্গনা রানাবত সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দিকে আলোকপাত করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বলিউডের কিছু বড় প্রযোজনা সংস্থা ও পরিচালকের স্বজনপোষণই সুশান্তকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। বলিউডের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি কয়েকটি বড় প্রযোজনা সংস্থা সুশান্তকে কাজ দিতে অস্বীকার করেছিল।
বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী।
তাঁর হাতে কাজ আসছিল না। সেই হতাশাই তাঁকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছিল।
তাহলে সত্যি কী? ভিসেরা রিপোর্ট ও ফরেনসিক দলের তদন্ত শেষেই তা জানা যাবে।
Be First to Comment